কাশ্মীর থেকে রাশিয়া অবধি সুড়ঙ্গ! যে সাতটি গুহার রহস্যভেদ হয়নি আজও...
Kashmir Kalaroos caves: গুহার ভেতরে ঘুরে এসে অনেকেই জানিয়েছেন গুহার গভীরে পুরনো বিবর্ণ বোর্ড আছে যাতে চাইনিজ ভাষায় কিছু লেখা আছে।
কাশ্মীর থেকে সোজা রাশিয়া! তাও গোপন সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে! ভারতবর্ষে প্রাচীনকালের এমন বহু সুড়ঙ্গই আছে যার রহস্য এই এতকাল পরেও কিনারা পায়নি। কোনও সুড়ঙ্গ দিয়ে পাচার হয়েছে গুপ্তধন, কোনও সুড়ঙ্গ দিয়ে আবার পালিয়েছেন নবাবরা। তবে ভারত থেকে সোজা রাশিয়া অবধি সুড়ঙ্গ খনন করা, সেই সুড়ঙ্গ ব্যবহার করা- আদৌ যুক্তির দিক থেকে কতখানি সম্ভব? কাশ্মীরে রয়েছে কালারুশ নামে এক গ্রাম, সেই গ্রামেই আছে কালারুশ গুহা। উপত্যকার সবচেয়ে রহস্যময় স্থানগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে এই গুহাগুলি। শ্রীনগর থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরে উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলায় অবস্থিত এই গুহাগুলি সম্পর্কে অনেকেরই বিশ্বাস যে, এই গুহাগুলিতে গোপন সুড়ঙ্গ রয়েছে যা রাশিয়ায় গিয়ে শেষ হয়।
কালারুশ গ্রামটির নাম এসেছে গুহা সম্পর্কিত কিছু প্রাচীন কাহিনি থেকে। আগে একে ডাকা হতো কিলা-ই-রুশ নামে, যার অর্থ রাশিয়ান দুর্গ। এই গুহাগুলি অবশ্য এখন জনপ্রিয় পিকনিক স্পট। কালারুশ গুহাগুলি লাশ্তায়াল এবং মাধমাদু গ্রামের মাঝখানে অবস্থিত। লাশ্তায়াল গ্রামের শেষ প্রান্তে একটি বিশাল খোদাই করা পাথর রয়েছে, যার নাম 'সাতবরণ'। পাথরটির সাতটি দরজা রয়েছে, যা স্থানীয় ভাষায় 'সাথবার' নামে পরিচিত। সাতবরণের উৎপত্তির কারণ আজও অজানা।
কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, এটি প্রাচীন যুগের একটি মন্দির যেখানে পাণ্ডবরা পুজো করতেন, সাতটি দরজায় সাতটি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। সেখান থেকে একটি সরু পথ গিয়েছে গুহায়। স্থানীয়রা বলেন, এই সাত দরজা আসলে রাশিয়া এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলিতে সাতটি পৃথক পথের প্রতীক।
আরও পড়ুন- সবুজ স্বচ্ছ জল, রোমাঞ্চকর গুহা! ভারতের সদ্য আবিষ্কৃত এই পর্যটনকেন্দ্রে যাবেন কীভাবে?
কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্বের সহকারি অধ্যাপক, ডঃ আজমল শাহের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, প্রায় প্রায় ২০০০ বছর আগে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল কাশ্মীরের। কাশ্মীর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে তামা, চুনাপাথর, দস্তা এবং বক্সাইটের মতো খনিজ রপ্তানি করত। কাশ্মীর এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত মিলও রয়েছে।
স্থানীয়দের অনেকেই বলেন, বড়দের কাছে তারা শুনেছেন, এই সাতটি সুড়ঙ্গ দিয়ে কাশ্মীরে আসত রাশিয়ানরা। এই বিশালাকার পাথর থেকে কয়েক মিটার দূরে আরও কিছু গুহা রয়েছে। স্থানীয়রা সাধারণত ট্রামখান (তামার খনি) গুহাতেই ঘুরতে যান, গুহাটি লাল রঙের। এই গুহাটিতে নিম্নমানের তামার আকরিক জমা রয়েছে।
গুহার ভেতরে গিয়ে স্থানীয়রা গুহার মধ্যে অদ্ভুত আলোর আভা দেখে অবাক হয়ে যান। গুহার ভেতরে ঘুরে এসে অনেকেই জানিয়েছেন গুহার গভীরে পুরনো বিবর্ণ বোর্ড আছে যাতে চাইনিজ ভাষায় কিছু লেখা আছে। কিছু গ্রামবাসী আবার বিশ্বাস করেন, এই গুহাগুলির ভিতরে বিশাল জলাশয় রয়েছে। জলের শব্দও নাকি শুনতে পেয়েছেন অনেকে।
গুহাগুলির মধ্যে একটিতে প্রবেশের জন্য সুস্পষ্ট খোলা প্রবেশদ্বার রয়েছে। তবে কিছুটা দূরত্ব গেলেই বেশ উঁচু নিচু ঢাল, হাঁটার জন্য বিশেষ কৌশল প্রয়োজন পড়ে। গুহায় ঢুকলেই বাতাস যেন আরও শীতল হয়ে ওঠে, অন্ধকার অনেকগুণ বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন- দেওয়ালে খোদাই রহস্যময় লিপি, আজও এই গুহার ভেতর লুকিয়ে গুপ্তধনের সংকেত
এই গুহাগুলি সম্পর্কে সবচেয়ে সাম্প্রতিক এবং একমাত্র নথিভুক্ত তথ্য জানিয়েছে গুহা বিশেষজ্ঞ অ্যাম্বার এবং এরিক ফিসের নেতৃত্বে আমেরিকার একটি দল। ২০১৮ সালে তিনটি গুহার অন্দরে তদন্ত চালায় এই দল। এর মধ্যে দু'টি গুহা অতীতে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন তারা। দু'টি গুহার মধ্যে একটি উপরের দিকে এবং অন্যটি নীচের দিকে হলেও দু'টিরই উচ্চতা সমান।
অনুসন্ধানকারীরা অবশ্য তৃতীয় গুহার উচ্চতা নির্ধারণ করতে পারেননি কারণ বেশ কয়েক বছর আগে ভারতীয় সেনাবাহিনী এই গুহার মুখটি বন্ধ করে দেয় যাতে জঙ্গিরা ভেতরে লুকিয়ে থাকতে না পারে। গুহা অনুসন্ধানকারীরা জানিয়েছেন, তৃতীয় গুহায় সাম্প্রতিক মানুষের যাতায়াতের কোনও চিহ্ন নেই। তবে গুহাটিতে বড় বড় শজারু রয়েছে।
তবে সাতবরণের নির্মাণের ইতিহাস বা এর সঠিক বয়স তারাও বলতে পারেননি। এই গুহাগুলির ঐতিহ্য, এই প্রাচীনত্ব বারবার টেনে এনেছে পর্যটকদের। গুহার গুরুত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী জায়গাটিকে ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণার দাবিও জানিয়েছেন।