কেন এত গুরুত্বপূর্ণ কালীঘাটের কাকুর গলা? কী রহস্য লুকিয়ে কণ্ঠস্বরে?

Kalighater Kaku Voice Test : গত ৭ ডিসেম্বর রাতে হঠাত্‍ আইসিসিইউয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে, তাও আবার শিশুদের জন্য বরাদ্দ বেডে!

হাসপাতালেই রয়েছেন তিনি, প্রায় সাড়ে চার মাস ধরে। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে গোটা বাংলা এখন চেনে কালীঘাটের কাকু নামেই। সেই কাকুর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করার জন্য অবশেষে তাঁকে বের করে আনা হয়েছে হাসপাতাল থেকে। হঠাৎ তাঁর কণ্ঠস্বর এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল কেন? উত্তর খুঁজতে হলে একটু পিছিয়ে যেতে হবে। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বাড়িতে যেদিন ইডি প্রথম হানা দিয়েছিল, সেই দিন থেকেই তাঁর 'গলা' হয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ।

সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’ গত ২২ অগাস্ট এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি হন। কার্ডিওলজি ব্লকের তিন তলায় একটি এসি কেবিনে ভর্তি ছিলেন তিনি। তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ ও তা পরীক্ষা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে কথাবার্তা। এর আগেও একবার কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু এসএসকেএম হাসপাতালের এমএসভিপি বাধা দেয় ইডি-কে। এর পরেই সোজা আদালতের দ্বারস্থ হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। গত বছর ডিসেম্বরের শুরুতেই জোকা ইএসআই হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স নমুনা সংগ্রহের কাজে গিয়েও ফিরে আসতে বাধ্য হয়। অবশেষে নমুনা সংগ্রহের জন্য সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে বের করে আনা হয়েছে। কিন্তু এত জরুরি কেন কালীঘাটের কাকুর গলার স্বর?

সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বাড়িতে ইডি প্রথম যেদিন যায় সেদিনই ইডির আরেকটি দল যায় রাহুল বেরার বাড়িতে। রাহুল বেরা হচ্ছেন একজন সিভিক ভলান্টিয়ার, তিনি বিষ্ণুপুর থানায় কর্মরত। ইডি রাহুল বেরার ফোনটি বাজেয়াপ্ত করে। জানা যায় 'কাকু' সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ তিনি। ইডি জানাচ্ছে, সিভিক ভলান্টিয়ার রাহুল বেরার সঙ্গে একজনের মোবাইলে কথোপকথনের ফাইল ইডির হাতে আসে। ওই কথোপকথনের অন্য প্রান্তে থাকা ব্যক্তিটি হলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, দাবি ইডির। কী কথোপকথন ছিল যার জন্য এত উদ্বিগ্ন ইডি? ইডি জানাচ্ছে, ওই ফোনের অডিওতে শোনা গিয়েছে, রাহুল বেরাকে মোবাইলে থাকা শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত সব তথ্য মুছে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কে নির্দেশ দিয়েছেন? কালীঘাটের কাকু? ‘কাকু’-ই নেপথ্যে কিনা তা প্রমাণ করতেই কণ্ঠস্বরের নমুনা চাইছে ইডি। এই তথ্য প্রমাণিত হলে তৃণমূল সরকারের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অন্য এক রাস্তা খুলে যাবে।

গত ৭ ডিসেম্বর রাতে হঠাত্‍ আইসিসিইউয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে, তাও আবার শিশুদের জন্য বরাদ্দ বেডে! ১২ ডিসেম্বর রাতে এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিওলজি কেবিনে ফের পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। ২ জানুয়ারি কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে আদালত জোর দিলেই এসএসকেএম থেকে বের করে আনা হয় কালীঘাটের কাকুকে। কলকাতা হাইকোর্টে প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয়। বিচারপতি অমৃতা সিংহর রুদ্ধদ্বার শুনানিতেই ইডির যুগ্ম ডিরেক্টর এবং ইএসআইয়ের মেডিক্যাল দলের প্রধানকে তলব করা হয়েছিল। নিয়োগ মামলার যে রিপোর্ট ইডি আদালতকে দিয়েছে সেখানে ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’ এবং তার সিইও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তি সংক্রান্ত রিপোর্টও ছিল, এই সংস্থাতেই কাজ করতেন সুজয়কৃষ্ণ।

More Articles