স্বাভাবিক পরিষেবা পেতে গেলে যে মূল্য দিতেই হবে

RG Kar Protest: তদন্ত নিয়েও অদ্ভুত এক গড়িমসি চলছে। সুপ্রিম কোর্ট তারিখ দিচ্ছে ১০-১৫ দিন বাদে। তা-ও বাতিল হয়ে যাচ্ছে।

আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার পর থেকেই বিঘ্নিত হয়েছে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা। হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে এক তরুণী চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধারের ঘটনার পর থেকেই লাগাতার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সেই আন্দোলন শুধু যে কলকাতা বা শহরাঞ্চলে আটকে রয়েছে, তা নয়। মফসসল, জেলাতেও ছড়িয়েছে তার প্রভাব। যার ফলে অনেকেরই ধারণা হয়েছে, রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। কিন্তু এ কথা কি আদৌ পুরোপুরি সত্য?

মনে রাখতে হবে, যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁরা প্রথম দিন থেকেই জানেন যে জুনিয়র ডাক্তারদের এই কর্মবিরতি সরকারের কাছে একটা বড়সড় অস্ত্র। প্রথম কথা, এরা তো শিক্ষানবিশ। ফলে স্বাস্থ্যকাঠামো তো পুরোপুরি এদের উপর নির্ভর করার কথাও নয়। প্রথম যুক্তিটাই তাই। শিক্ষানবিশদের উপরে তো কখনওই পরিষেবার বিষয়টা পুরোপুরি নির্ভর করতে পারে না। দ্বিতীয়ত, কাজ হচ্ছে না তা একেবারেই ভুল কথা। কাজ হচ্ছে। সিনিয়রদের উপর চাপ বেড়েছে। ইমার্জেন্সি থেকে ইন্ডোর, সবটাই সামলাতে হচ্ছে তাঁদের। সামর্থ মতো কাজ করছেন সকলে। তৃতীয়ত, জুনিয়র ডাক্তারেরা সমান্তরাল ভাবে বিনামূল্যের 'অভয়া ক্লিনিক' করেছেন বিভিন্ন জায়গায়। ফলে যাঁরা মনে করছেন তাঁদের পরিষেবা দরকার, তাঁরা এই ক্লিনিকে যেতে পারেন। আর আমরা সিনিয়র ডাক্তাররা যে সব বেসরকারি ক্ষেত্রে রয়েছে, তারা কাজ করেই যাচ্ছি।

আরও পড়ুন: ধর্ষণের ২৪ ঘণ্টা পরেই কেন ‘ক্রাইম সিন’ মেরামতির নির্দেশ দেন সন্দীপ ঘোষ?

গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা হল জুনিয়র ডাক্তাররা যদি মনে করেন, যাঁরা তথ্য-প্রমাণ লোপাট করেছে, যাঁরা প্রশ্রয় দিয়েছে এবং যাঁরা ওই তরুণী চিকিৎসক খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত, তাঁরা ওঁদের মধ্যেই বিচরণ করছে। যার ফলে জুনিয়র ডাক্তারেরা যদি নিজেদের অসুরক্ষিত মনে করেন তাহলে তারপরেও কীভাবে তাঁদের কাজে যোগ দিতে বলব? আমি অন্তত এই কথা বলতে পারব না। আমিও তো একজন বাবা। জুনিয়র ডাক্তার হিসেবেও পারব না এবং সিনিয়র ডাক্তার হিসেবেও পারব না।

তাঁদের দাবি তো খুব সামান্য। বিনীত গোয়েল এবং যাঁদের নাম সামনে এসেছে তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ চাই। এঁদের নিজেদেরই দায়িত্ব নিয়ে সরে যাওয়া উচিত ছিল। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে নিলেই কর্মবিরতি তুলে দেওয়া হবে। সরকার যদি মনে করেন জুনিয়র ডাক্তাররা যথার্থ, পরিষেবা দিতে ওঁদের প্রয়োজন, তাহলে ওঁদের দাবিগুলি মেনে নেওয়া হোক। ওঁরা পরের দিনই কাজে ফিরে যাবে।

Did the health system collapsed due to the RG Kar Case By Dr Arjun Dasgupta

এটা শুধু ডাক্তারদের বিষয় নয়, এটা একটা সামাজিক বিষয়। এর অনেকগুলো স্তর রয়েছে। একজন নারীর ভয়াবহ খুন এবং ধর্ষণ। এবং তা হয়েছে তাঁর কর্মক্ষেত্রে। যেটা কিনা শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় থেকে ঢিল ছোড়া দুরত্বে এক বিশাল নামকরা প্রতিষ্ঠান। যেখানে এত দিন ধরে দুর্নীতি, মাফিয়ারাজ চলেছে। এই ঘটনায় সবার আগে যে প্রশ্ন ওঠে, তা হল কেন তথ্য প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা হল? এর সাথে ছাত্র ব্যবস্থায় সিন্ডিকেট রাজ চলেছে। কার্যত স্বাস্থ্য-শিক্ষা পরিকাঠামো ভেঙে পড়ার মতো উপক্রম হয়েছে।

একজন বাবার মনে এই মুহূর্তে অনেক রকম ভাবনা আসে। আমার মেয়ে যদি বলে কলেজ লাইব্রেরিতে পড়বে, আমি মনে মনে ভাবব, আচ্ছা কলেজ লাইব্রেরিই তো। কিন্তু এখন তেমন নিশ্চিন্ত হওয়ার মতো জায়গাগুলি সম্পর্কে ধারণাই পাল্টে যেতে বসেছে। অনেক রকম প্রশ্ন, সংশয় মাথাচাড়া দেয়। এই জন্যই বিচার চাওয়াটা প্রয়োজন। এই বিচার যদি না পাওয়া যায়, তাহলে বোধহয় কোনও দিনই আর কোনও বিচার পাওয়া যাবে না।

আরও পড়ুন:আরও এক রাতদখল! তিলোত্তমার জন্য যে ভাবে জেগে থাকল, জাগিয়ে রাখল বাংলা

তদন্ত নিয়েও অদ্ভুত এক গড়িমসি চলছে। সুপ্রিম কোর্ট তারিখ দিচ্ছে ১০-১৫ দিন বাদে। তা-ও বাতিল হয়ে যাচ্ছে। তারা ঠিক বুঝতে পারছে না যে বাংলার মানুষ ঠিক কতটা দুশ্চিন্তায় রয়েছে। সিবিআই কী করছে আমার জানা নেই। সাধারণত আমরা দেখেছি তদন্তের ক্ষেত্রে প্রেস কনফারেন্স করে মানুষকে অগ্রগতির ব্যাপারে জানানো হয়। কিন্তু দেখছি, সে সব কিছুই হচ্ছে না। যদিও শুনেছি সিবিআই নাকি মহিলা চিকিৎসকের পরিবারের সাথে কথা বলেছে। তবুও একটা আশঙ্কা তো থেকেই যায়। ভারতের বিচার ব্যবস্থাও যে খুব একটা স্বর্ণোজ্জ্বল, তা তো বলা যায় না। তাই চাপ রাখতেই হবে। বিচার ব্যবস্থা এবং তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ এবং দুশ্চিন্তা. তা সমাধান তারাই করতে পারে। আর তা না করতে পারলে তার পরিণাম খুব একটা ভালো হবে বলে মনে হয় না।

(অনুলিখন: তনভিয়া বড়ুয়া)

More Articles