'ভুল করে' ব্রাহ্মণ কিশোরকেই খুন! হাত কামড়াচ্ছে হরিয়ানার গোরক্ষক দল

cow vigilante: স্বঘোষিত গোরক্ষকদের শিকার এবার বছর উনিশের এক কিশোর। হরিয়ানার ফরিদাবাদে গত ২৩ অগস্ট ঘটেছে এই ঘটনা।

পুলিশ বলছে, ভুল বোঝাবুঝির কারণে গুলি। কিন্তু সেই ভুল বোঝাবুঝির গুলি ততক্ষণে কেড়ে নিয়েছে দ্বাদশ শ্রেণির এক পড়ুয়ার প্রাণ। স্বঘোষিত গোরক্ষকদের শিকার এবার বছর উনিশের এক কিশোর। হরিয়ানার ফরিদাবাদে গত ২৩ অগস্ট ঘটেছে এই ঘটনা। এসইউভি-তে করে গোরুপাচার করা হচ্ছে সন্দেহে পাঁচজনের ওই দলটিকে তাড়া করে গো-রক্ষকেরা। তাঁদের গুলিতে মৃত্যু হয় ওই কিশোরের।

ওই ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পরে পুলিশের দাবি, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই এই ঘটনা। নিহত কিশোরের নাম আরিয়ান মিশ্র। এখন ব্রাহ্মণ সন্তানকে অকারণে হত্যার বিবেকদংশনে ভুগছে সেই গোরক্ষকদের দল। ওই ঘটনায় ইতিমধ্যেই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার মধ্যে রয়েছে বজরং দলের সদস্য কৌশিক নামে এক ব্যক্তি। স্থানীয় ভাবে যে ফরিদাবাদের মনু মানেসর নামে পরিচিত।

তদন্তে কৌশিক ও তার দলবল জানায়, আরিয়ান ও তার বন্ধুরা গাড়িতে করে গোরুপাচার করছে। মূল সমস্যাটা বেঁধেছে আরিয়ানকে মুসলিম ভেবে নেওয়ায়। কিছুদিন আগেই চরকি দাদরিতে এক মুসলিম অভিবাসী শ্রমিককে গো-মাংস রাখার সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয়। তার তিন দিনের মাথাতেই এই ঘটনা।

আরও পড়ুন: গো-রক্ষকদের তাণ্ডব থেকে ফ্যাসিবাদের জয়গান, ভারত হওয়া সত্যিই সহজ নয়!

এত সব কাণ্ড ঘটানোর পরে আরিয়ানের বাবা সিয়ানন্দ মিশ্রের পা ধরে ক্ষমা চায় অভিযুক্ত কৌশিক। না, ছেলেকে খুনের জন্য নয়। বরং একজন ব্রাহ্মণ সন্তানকে গোপাচারকারী সন্দেহে হত্যার জন্যই তার যত অনুতাপ। সিয়ানন্দ পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, একজন মুসলিমকেই বা তুমি হত্যা করবে কেন? তা-ও একটা গরুর কারণে। সেরকম বুঝতে গাড়ির চাকায় গুলি করা যেত বা পুলিশে খবর দেওয়া যেত। কেন আইন নিজের হাতে তুলে নিল স্বঘোষিত এই গোরক্ষক বাহিনী? তার উত্তরে অবশ্য নীরব ছিল অভিযুক্ত কৌশিক।

Hariyana gau rakshak now ‘regrets’ killing a Brahmin. ‘Sad we killed our brother’

এদিকে এই ঘটনার পর মুখ পুড়েছে বজরং দলের। তারা আপাতত আপন প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। পালওয়াল এবং ফরিদাবাদে 'গরু সুরক্ষা' কার্যক্রমের এক তত্ত্বাবধানকারী বলছেন, সমস্ত গোরক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আইন হাতে তুলে না নিতে। এমনকী তেমন সন্দেহজনক কার্যকলাপ চোখে পড়লে পুলিশে খবর দেওয়ারও নির্দেশ রয়েছে। তবে সে নির্দেশ আর কে-ই বা মেনেছে কবে। বজরং দলের সদস্য শৈলেন্দ্র হিন্দু জানিয়েছেন, এই ঘটনাটি আমাদের কাছে একটি কলঙ্ক। এক দশকে প্রথম এমন ঘটনা ঘটল। সবচেয়ে দুঃখজনক হল, আমরা ভুল করে আমাদের ভাইকেই হত্যা করেছি।

সেদিন হরিয়ানার পালওয়াল জেলার এনএইচ-১৯-র গাদপুরি টোলপ্লাজার কাছে আরিয়ানের মাথায় ও ডান কাঁধে গুলি করা হয়। ততক্ষণে প্রায় ৫০ মিটার তাকে তাড়িয়ে এনেছে গোরক্ষকেরা। সম্ভবত গোল বেঁধেছিল তাঁর নামের কারণেই। আরিয়ান যে মিশ্র হতে পারেন, তা কি মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল স্বঘোষীত গো-রক্ষকদের! কিন্তু এমন ঘটনা কি সত্যিই খুব ব্যতিক্রম। এখনও ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে গোরক্ষার নামে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে অসংখ্য মুসলিমদের। যে সংবিধান দেশের প্রতিটি মানুষকে আপরুচি খানার স্বাধীনতা দেয়, সেই সংবিধানের দেশেই চলছে এই ভয়াবহ নিধন।

আরও পড়ুন: Cow politics: গরু নিয়ে রাজনীতি, হত্যার পরিকল্পনা বারবার, একদিনে হয়নি…

২০১৫ সালে উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে মহম্মদ আখলাখ নামে এক ব্যক্তিকে গো-মাংস রাখার 'অপরাধে' পিটিয়ে মারে তথাকথিক গো-রক্ষক বাহিনী। পরিস্থিতি হিংসার আকার নেয়। এমন ঘটনার কোনও শেষ নেই। সম্প্রতি হরিয়ানাতেই গো-মাংস রান্না করার অভিযোগে বাসন্তীর এক যুবককে পিটিয়ে মারে গোরক্ষকেরা। নিহত ওই যুবকের দেহ ফেরে বাসন্তীতে। গোরক্ষার নামে হিন্দুত্ববাদীদের এই দাপট এখনও চলছে দেশ জুড়ে। প্রশাসন ভুল বোঝাবুঝিতে গুলি বলে মাথা বাঁচাচ্ছে। অথচ মৃত্যুমিছিল অব্য়াহত থাকছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খবরেও আসছে না এই ধরনের ঘটনাগুলি। হরিয়ানায় ওই কিশোর খুনে পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে বেশ কিছু অবৈধ অস্ত্র। এমনকী যে গাড়িটি নিয়ে শিকার ধরতে গিয়েছিল স্বঘোষিত গো-রক্ষকেরা, সেই গাড়িটিরও বৈধ কাগজপত্র নেই। প্রশাসন-আইনের হাতের তলা দিয়ে দিব্যি তাণ্ডব দেখাচ্ছে এই স্বঘোষিত গোরক্ষক বাহিনী, হরিয়ানার এই কিশোরের মৃত্যু যেন সেই ভয়ঙ্কর ছবিটাই প্রকট করে তুলল আরও একবার।

More Articles