হাতে হাত রাখা থাক! তিলোত্তমার জন্য অভিনব মানববন্ধনের সাক্ষী এবার কলকাতা
RG Kar Protest: মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে গোটা ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাস জুড়ে মানববন্ধনের ডাক দিলেন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
আরজি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে পথে নেমেছে সমাজের নানা শ্রেণির মানুষ। তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও মৃত্যুর প্রতিবাদে প্রায় এক মাস ধরে লাগাতার বিক্ষোভ-প্রতিবাদের সাক্ষী শহর কলকাতা। এর আগে রাত দখল দেখেছে এ শহর। দেখেছে কীভাবে সুবিচার চেয়ে জায়গায় জায়গায় আট থেকে আশির মহিলারা জড়ো হতে পারেন। দেখেছে কীভাবে খেলার মাঠের বৈরিতা দূরে সরিয়ে আরজি করের নির্যাতিতার সুবিচারের আশায় এক হয়ে যেতে পারে তিন ফুটবল ক্লাব। তিলোত্তমার বিচার চাওয়ার এ আন্দোলন অনেক কিছুই নতুন করে শিখিয়ে দিয়ে গেল এ শহরকে। মঙ্গলবারের কলকাতা সাক্ষী রইল আরও এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের।
পাটুলি থেকে উল্টোডাঙা। প্রায় ১৭ কিলোমিটার রাস্তা। আরজি করের ঘটনার বিচার চেয়ে মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে কার্যত গোটা ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাস জুড়ে মানববন্ধনের ডাক দিলেন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার বিকেলে ফের একবার দখল হল শহর। বৃষ্টির চোখরাঙানি উপেক্ষা করে পথে নামলেন আমজনতাও। সাধারণ মানুষের যাতে কোনও রকম অসুবিধা না হয়, সেদিকে নজর রেখে রাস্তার একদিক ধরেই মানববন্ধন বানিয়ে তুলেছিলেন কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ যেন অভিনব প্রতিবাদ। পাটুলি থেকে উল্টোডাঙ্গা, সমগ্র ইএম বাইপাসের একদিকে দেখা গেল চিকিৎসক-স্বাস্থ্য়কর্মীদের গড়ে তোলা সেই মানবপ্রাচীর।
আরও পড়ুন: ডিয়ার পুরুষ, ‘লড়কিও কি না মে হাঁ নেহি হোতি হ্যায়’
প্রায় এক মাস হতে এল আরজি করের ঘটনার। গত ৯ অগস্ট আরজি কর কলেজের জরুরি বিভাগের চার তলার সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক তরুণী চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ। সেই ঘটনার জল গড়িয়েছে অনেক দূর। মামলার তদন্তভার গিয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আরজি কর চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল এক সিভিক ভলিন্টিয়ার। সোমবার দুর্নীতির তদন্তে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছে আরজি কর কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। চিকিৎসক ধর্ষণ-খুনের প্রতিবাদ অবশ্য থামেনি। সুবিচার চেয়ে রবিবার ধর্মতলায় রাত জাগা শুরু করে 'আমরা তিলোত্তমা' মঞ্চ। সোমবার বিকেল থেকেই লালবাজারের সামনে অবস্থানে বসেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। প্রায় ২৩ ঘণ্টা টানা বিক্ষোভের জেরে লালবাজারে সিপি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে বাধ্য হন।
এর মধ্যেই মঙ্গলবার বিকেলে শহরে মানববন্ধনের ডাক দেন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তবে মানুষের অসুবিধা করে নয়, কোনও ভাবে জনজীবনকে ব্য়হত না করেই প্রতিবাদ, আন্দোলন করা যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছে বেসরকারি চিকিৎসকদের এই অভূতপূর্ব মানববন্ধন। বিকেল পাঁচটায় মানবন্ধন শুরুর কিছু পরেই ঝমঝমিয়ে নামে বৃষ্টি।
তাতে অবশ্য ভিড় কমে যাওয়ার পরিবর্তে বেড়েইছে। বাইপাসের একদিকের রাস্তার পাশে হাতের ওপর হাত রেখে মানববন্ধন তৈরি করেছেন তাঁরা। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি বাইপাসের এই মিছিলে দেখা মিলল বিভিন্ন বয়সি নানা পেশার অসংখ্য মানুষকে। যাঁদের মুখে মুখে শোনা গিয়েছে সেই 'জাস্টিস ফর আরজি কর' স্লোগান।
আরও পড়ুন: ধর্ষণ রুখতে আরও কড়া বাংলা! ধর্ষকদের জন্য কোন কোন শাস্তির নিদান ‘অপরাজিতা বিলে’?
তবে মানববন্ধন আজ শুধু পাটুলি-ইএম বাইপাসেই হয়নি। হয়েছে চিকিৎসকদের লালবাজার অভিযানেও। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগ চান তাঁরা। সেই দাবিতে লালবাজারের উদ্দেশ্যে এগোনো শুরু করলে লকাতা পুলিশের সদর দফতরের আধ কিলোমিটার দূরে, ফিয়ার্স লেনে ব্যারিকেড করে আটকে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। তার পর ২২ ঘণ্টা সেই ব্যারিকেডের সামনেই ধর্নায় বসেন আন্দোলনকারীরা। অবশেষে, মঙ্গলবার দুপুরে সেই ব্যারিকেড সরিয়ে লালবাজারে ডেপুটেশন জমা দিতে যাওয়ার অনুমতি দেয় পুলিশ। চিকিৎসকদের এই প্রতিবাদে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এক শিরদাঁড়া। আক সেই প্রতিকী শিরদাঁড়াকে সঙ্গে নিয়েই মানববন্ধনে করে এদিন লালবাজারে যান চিকিৎসকেরা।
আদৌ কি সেখানে গিয়ে নিজের দাবি জানাতে পারবেন চিকিৎসকেরা। আদৌ তাঁদের দাবি পূরণ হবে? সেই সব প্রশ্নের মধ্যেই কলকাতা শহর জুড়ে আরজি কর কাণ্ডকে ঘিরে যে অভিনব প্রতিবাদ-আন্দোলন দেখা গেল, তা কার্যত নজিরবিহীন তা অস্বীকার করার উপায় নেই।