শিশুদের পাতে ডিম দিয়ে ছবি তুলে ডিম উঠিয়ে নিচ্ছেন কর্মী! শোরগোল ফেলেছে যে ভিডিও

Mid day Meal Viral Video: স্কুলের দু'জন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কারণ বাচ্চাদের পাতে ডিম দিয়েও তারা তা তুলে নিতেন।

ছবি সত্য বলে না সবসময়। ছবি বা ভিডিও খণ্ডসত্য বলে। যে খণ্ডসত্য সত্যের চেয়েও ভয়াবহ। সারা দেশেই মিড ডে মিল নিয়ে নানা অব্যবস্থার নানা খবর মেলে। খবর মেলে মিড ডে মিল নিয়ে দুর্নীতিরও। নিয়ম অনুযায়ী, প্রাথমিকে মিড ডে মিলের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ ৫.৪৫ টাকা। উচ্চ প্রাথমিকে মাথাপিছু বরাদ্দ ৮.১৭ টাকা। এই বরাদ্দ টাকায় মিড ডে মিল চালানো কার্যত অসম্ভব, পুষ্টিকর খাবার দেওয়াও অবাস্তব ঘটনা। তবু, মিড ডে মিলে সয়াবিন, ডিম জাতীয় প্রোটিন খাওয়ানোর দাবি করেন অনেকে। ছবিসহ তার প্রমাণ রাখেন। কর্ণাটকের কোপ্পাল জেলায় একটি স্কুল নিয়েও এমনই ভুল ছবিই উঠে আসছিল। ডিম খাওয়ানো হতো নাকি বাচ্চাদের। ওই স্কুলের দু'জন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কারণ বাচ্চাদের পাতে ডিম দিয়েও তারা তা তুলে নিতেন। অথচ ছবিতে দেখা যেত ডিম দেওয়া হয়েছে বাচ্চাদের।

অভিযোগ, বাচ্চাদের পাতে ডিম পরিবেশন করেও তা বাচ্চাদের খেতে না দিয়েই তুলে নিতেন ওই কর্মীরা।এই ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর ঘটনাটি প্রথম প্রকাশ্যে আসে। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অঙ্গনওয়াড়ির দুই কর্মীই ভিডিও রেকর্ড করতেন যে স্কুলের বাচ্চাদের ডিম পরিবেশন করা হচ্ছে। ডিম দেওয়ার ভিডিও রেকর্ড করা হয়ে গেলে তারা পাত থেকে ডিমগুলি সরিয়ে নিতেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, কোপ্পাল জেলার কারাতাগি তালুকের গুন্দুর অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী লক্ষ্মী এবং তাঁর সহকারী শাহনাজ বেগম বাচ্চাদের পাতে সেদ্ধ ডিম পরিবেশন করছেন। বাচ্চারা, 'অসতো মা সদ গময়ঃ' পাঠ করছে। পাঠ শেষ হয়ে গেলেই দেখা যায় শাহনাজ তাদের পাত থেকে ডিম তুলে নিচ্ছেন।

আরও পড়ুন- আরজি কর বিচার: কেন ৪ তারিখ সারা রাজ্যের মানুষের পথে থাকা দরকার?

 
 
 
 
 
View this post on Instagram
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

A post shared by India Today (@indiatoday)

সরকারি স্কুল এবং অঙ্গনওয়াড়িগুলিতে পরিবেশিত মিড ডে মিলে ডিম থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ ডিম পরিবেশন করেও বাচ্চাদের পেট অবধি তা পৌঁছনোও হতো না। গত ৯ অগাস্ট নারী ও শিশু কল্যাণ বিভাগ দায়িত্বে অবহেলার জন্য ওই দুই কর্মীকে বরখাস্ত করেছে। কর্ণাটকের মহিলা ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী লক্ষ্মী হেব্বালকর জানিয়েছেন, বিষয়টি তাঁকে জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রীর কথায়, "পুষ্টিকর খাবার পরিবেশন করা এবং সমতার শিক্ষা প্রদান করাই অঙ্গনওয়াড়ির উদ্দেশ্য। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রতি কোনও অবিচারই এখানে করা হবে না। যদি কেউ এই ধরনের অসদাচরণের জন্য দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে কাজ থেকে অব্যহতি দেওয়া হবে।" সেই অনুযায়ী দুই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, লক্ষ্মী এবং শাহনাজ বেগমকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

বিজেপি এই বিষয়টি নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে। বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র প্রভারি সোশ্যাল মিডিয়াতে লিখেছেন, “কর্ণাটকে নতুন কেলেঙ্কারির সতর্কতা! এখন কংগ্রেস দরিদ্র শিশুদের থালা থেকে খাবারও চুরি করছে- আন্ডা ঘোটালা। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা বাচ্চাদের ডিম পরিবেশন করে, ফটো তোলার পরে ডিম তুলে নিচ্ছেন পাত থেকে।" কিন্তু বাচ্চাদের পাত থেকে ডিম তুলে নেওয়ার উদ্দেশ্য কী? বিজেপি বলছে, এই কর্মীরা ওই ডিম আবার বাজারে ডিম বিক্রি করে দিতে পারে। কেন্দ্রের শাসকের অভিযোগ, কংগ্রেসের কাছে কোনও টাকা নেই তাই শেষে ডিম চুরি করে সেই ডিম বেচার টাকা হাইকমান্ডকে দিচ্ছে। এই রাজ্যে মিড ডে মিলের চাল চুরি যায়, কোথাও ডিম দিয়েও তুলে নেওয়া হয়। যে শিশুদের পর্যাপ্ত পুষ্টি পাওয়ার কথা ছিল আখেরে ভুক্তভোগী হয় তারাই। মজ্জাগত দুর্নীতিতে সেই শিশুরা ভুগছে যাদের এমনকী সরকার নির্বাচনেও কোনও ভূমিকা নেই। ভিডিও ভাইরাল না হলে এই অঙ্গনওয়াড়ির ক্ষেত্রেও দুর্নীতি প্রকাশ হতো না। সমস্ত দুর্নীতিই প্রশাসনের নজর এড়িয়ে যাবে যদি না 'ভাইরাল' হয়? 

More Articles