শিক্ষকদের প্রতিবাদে বাধা দেওয়া হয়েছিল? যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু

Bratya Basu: এদিন শিক্ষামন্ত্রী জানান, রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্ট অর্থাৎ শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, স্কুলের পঠনপাঠনের সময় আন্দোলন করা যাবে না।

রাজ্য জুড়ে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে সরব গোটা রাজ্য। শিক্ষক থেকে পড়ুয়া, আন্দোলনে সামিল সমস্ত স্তরের মানুষ। তারই মধ্যে আরও একটা শিক্ষক দিবস। সেই শিক্ষক দিবস উপলক্ষে বিকাশ ভবনে এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। প্রতিবছর আড়ম্বরের সঙ্গে এই দিনটি পালন করে থাকে রাজ্য সরকার। তবে এবার আরজি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে সেই আড়ম্বর উধাও। বরং ছোট করে বিকাশ ভবনেই পালিত হচ্ছে এই দিন। এদিন সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে এসে আরজি করের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী।

আরজি কর-কাণ্ডের জেরে গত একমাস ধরে রাজ্য জুড়ে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের ছবি দেখা গিয়েছে। গত ১৪ অগস্টের পর ৪ সেপ্টেম্বর, ফের রাতভর আন্দোলনে সামিল হয়েছেন সমাজের প্রায় সব স্তরের মানুষ। এছাড়াও কোথাও শিল্পী, কোথাও চিকিৎসক, কোথাও রাজনৈতিক দলের কর্মীরা নিজেদের মতো করে আন্দোলনে নামছেন, বিচার চেয়ে পথ হাঁটছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বললেন, যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁরা দায়িত্ববান। সেই প্রতিটি প্রতিবাদের সঙ্গেই তাঁর স্বর মিশে আছে বলে দাবি করলেন শিক্ষামন্ত্রী।

আরজি কর ঘটনার নিন্দা করে এদিন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যেভাবে আমাদের বাড়ির মেয়েকে হারিয়েছি, তাতে আড়ম্বর মানায় না।’ আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে এই প্রতিবাদ সম্পর্কে প্রশ্ন করতেই নিজের রাজনৈতিক পরিচয়ের কথা উল্লেখ করেন ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, “এই ঘটনা নিন্দনীয়। এর প্রতিবাদ আমিও করেছি। অনেকেই করেছেন। তবে নন্দীগ্রাম বা সিঙ্গুরের সময় আমার কোনও রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। ২০১১ থেকে একটা রাজনৈতিক পরিচয় আছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিবাদ করতে হচ্ছে।” একই সঙ্গে তিনি জানান, “আন্দোলনে অনেকেরই আঙুল প্রশাসনের দিকে উঠছে। আমি তো প্রশাসনের অংশ। আমি কী করে নিজেই নিজের দিকে আঙুল তুলব! সেটা তো দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় হবে।”

আরও পড়ুন: হাতে হাত রাখা থাক! তিলোত্তমার জন্য অভিনব মানববন্ধনের সাক্ষী এবার কলকাতা

একই সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দেন আরজি করের ঘটনায় রাজ্য সরকারের তরফে কোনও রকম বাধা দেওয়া হয়নি। এমনকী শিক্ষকদেরও নয়। বরং আন্দোলনের পাশে থাকার বার্তা নিয়ে এদিন শিক্ষামন্ত্রী জানান, রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্ট অর্থাৎ শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, স্কুলের পঠনপাঠনের সময় আন্দোলন করা যাবে না। তাঁর কথায়, “স্কুলের তরফ থেকে আন্দোলন করতেই পারেন, কোনও অসুবিধে নেই। কিন্তু স্কুল চলাকালীন না করলেই হল।”

প্রতিবছর এই শিক্ষক দিবসে কৃতি পড়ুয়াদের পুরস্কার বিতরণ করা হয়। তবে আরজি করের পরিস্থিতিতে সেই অনুষ্ঠান এদিন না করে কিছু দিন পরে করার ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে একগুচ্ছ ঘোষণা করেন তিনি রাজ্য সরকারের তরফে। বিদ্যালয়,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা ও শিক্ষা কর্মীদের অভিযোগ শোনাার জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালু করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। এই বিষয়টি দেখার জন্য একটি বিশেষ দলও তৈরি করা হয়েছে। ৯০৮৮৮৮৫৫৪৪ -এই নম্বরের মাধ্যমে শিক্ষক, অধ্যাপক ও শিক্ষাকর্মীরা তাঁদের অভিযোগ সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

একই সঙ্গে শিক্ষকদের পেনশনের বিষয়ে একটি নয়া ঘোষণা করেছে শিক্ষাদফতর। এতদিন পর্যন্ত টানা দশ বছর কাজ করলে তবেই পেনশনের জন্য ধার্য হতেন কোনও শিক্ষক। তাঁদের জন্য নিয়মে সামান্য রদবদল হয়েছে। নবছর ছ'মাসের বেশি সময় ধরে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করলেই তাঁরা পেনশন পাবেন। এবং তার জন্য ন্যায়ালয় বা অন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। দফতরের তরফেই যোগ্য ব্যক্তিকে নির্ধারণ করে অবসর ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

একই সঙ্গে উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে ব্রাত্য বসুর জবাব, “আমাদের দিক থেকে যা করার আমরা সব কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছি। এবার পুরোটাই নির্ভর করছে বিচারকের ওপর। রাজ্যপাল প্রেরিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যারা বসে আছেন কেয়ারটেকার, আমি তাদেরকে বলব আপনারা ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে CCTV লাগানোর জন্য উদ্যোগ নিন। র‌্যাগিং থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”


আর জি করের ঘটনায় নাট্যকার এবং শিল্পীদের পুরস্কার প্রত্য়াখ্যানের ঘটনা নিয়েও এদিন মুখ খোলেন শিক্ষামন্ত্রী। পুরস্কার ফেরানো অভিনেতাদের কটাক্ষ করে তাঁর প্রশ্ন, জাতীয় স্তরে এমন কোনও ঘটনা ঘটলে, তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পাওয়া পুরস্কারও কি ফিরিয়ে দেবেন তাঁরা? আরজি কর কাণ্ডে চিকিৎসকদের আন্দোলন নিয়ে তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের অবমাননাকর মন্তব্যের পরই পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। এরপর একে একে পুরস্কার ফিরিয়েছেন শিল্প সংস্কৃতি সাহিত্য জগতের একাধিক শিল্পী। পুরস্কার ফিরিয়েছেন নাট্যকার চন্দন সেন, নাট্যব্যক্তিত্ব বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার শিল্পী সনাতন দিন্দা ছেড়েছেন রাজ্য চারুকলা পর্ষদের সদস্যপদ।

বৃহস্পতিবার ব্রাত্যবাবু জানান, “প্রত্যাখ্যান করা ব্যক্তিগত বিষয়। থিয়েটারের যিনি করেছেন, স্বাগত জানাই তাঁর সিদ্ধান্তকে। আমাদের নাট্য অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে এটুকু বলতে পারি যে, উনি বামফ্রন্টের হওয়া সত্ত্বেও তৃণমূল সরকার তাঁর ক্ষেত্রে কোনও বাছবিচার করেনি পুরস্কার দেওয়ার সময়ে। রাজনৈতিক পরিচয়ের নিরিখে তাঁর শৈল্পিক কৃতিত্ব বিচার করেনি। গণতান্ত্রিক অধিকার আছে তাঁর। তিনি নিশ্চয়ই ফেরাতে পারেন। আমরা বলতে পারি যে, আমরা তাঁর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিচার করিনি।”

আরও পড়ুন:আরও এক রাতদখল! তিলোত্তমার জন্য যে ভাবে জেগে থাকল, জাগিয়ে রাখল বাংলা

জাতীয় পুরস্কারের প্রসঙ্গ টেনে ব্রাত্য বসু বলেন, “সকলের অধিকার আছে। তাঁদের উদ্দেশে কোনও তির্যক, নিন্দাসূচক মন্তব্য করতে চাই না। শুধু বলব, তাঁরা তাঁদের কাজ করেছেন। আশা রাখি, কেন্দ্রীয় স্তরে যদি এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে এবং তাঁদের কাছে যদি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পাওয়া পুরস্কার থেকে থাকে, সেগুলিও ফেরত দেবেন তাঁরা।”গতকালের রাতদখলে যে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, সেই প্রসঙ্গে নাট্যকার বলেন, 'এই পেশার সাথে যুক্ত আমিও৷ সিনিয়র অভিনেত্রী, জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত অভিনেত্রীর সাথে এই আচরণ করা যায় না। এটাকে সমর্থন করছি না'।

এদিন আন্দোলন প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী তথা নাট্যকার-অভিনেতার সাফ বক্তব্য,সকলে আন্দোলন করলেই হয় না। প্রতিবাদের ভাষা শোনারও লোক লাগে। মন্ত্রী বলেন, “আমরা শুনছি। কিছু লোককে তো শুনতে হবে, বুঝতে হবে। আইন তৈরি করতে হবে। যারা আন্দোলন করছে, তারা দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয় দিচ্ছে। আমরা শোনার মাধ্যমে দায়িত্বপালন করছি।”

More Articles