'গো ব্যাক' স্লোগানের মুখে চাকরিপ্রার্থীদের সেই 'মসিহা'! কেন অভিজিতের এই পরিণতি?

Doctor's Protest on RG Kar: এরই মধ্যে চিকিৎসকদের মিছিলে পৌঁছেছিলেন বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়। তবে কার্যত মিছিলে গিয়ে গো-ব্যাক স্লোগান শুনেই ফিরতে হল অভিজিৎকে।

আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। রবিবার থেকে লালবাজারের সামনে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। অক্লান্ত, নির্ঘুম। সেই আন্দোলনে বিনোদন জগতের মানুষ বা সাধারণ মানুষদের পাশে পেয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তবে সেই আন্দোলেন কোনও রাজনৈতিক প্রতিনিধি বা রং চাননি তারা। এরই মধ্যে একদিন চিকিৎসকদের মিছিলে পৌঁছেছিলেন বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়। তবে কার্যত মিছিলে গিয়ে গো-ব্যাক স্লোগান শুনেই ফিরতে হল অভিজিৎকে। এককালে যে অভিজিৎ হয়ে উঠেছেন রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মুখ, চাকরিপ্রার্থীদের আশার আলো, সেই অভিজিৎকেই ফেরাল চিকিৎসকদের আন্দোলন।

অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি। তার হাত দিয়ে বেরিয়েছে একের পর এক যুগান্তকারী রায়। রাজ্যসরকার বনাম চাকরিপ্রার্থীদের লড়াইয়ে কার্যত তিনি হয়ে উঠেছিলেন আন্দোলনকারীদের 'মসিহা'। কিন্তু ২০২৪ লোকসভা ভোট আসতে না আসতেই ছবিটা অন্যরকম হয়ে উঠল। তড়িঘড়ি বিজেপিতে যোগ দিলেন অভিজিৎবাবু। চাকরিপ্রার্থীদের মসিহা থেকে রাতারাতি হয়ে উঠলেন তিনি তমলুকের বিজেপি প্রার্থী। যার সারথী হিসেবে দেখা গেল রাজ্য়ের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। ইতিমধ্যে নানাবিধ কথাবার্তা বলে একাধিক বিতর্কে জড়িয়েছেন অভিজিৎ। কখনও গান্ধি-গডসে মন্তব্য তো কখনও আবার বুলডোজার প্রসঙ্গ, ক্রমে যত তিনি বিজেপির একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে উঠতে লাগলেন, ততই সরে যেতে লাগলেন মানবিক মুখ থেকে। ভোট গিয়েছে, তমলুক থেকে জয় পেয়ে বিজেপির সাংসদ হয়ে লোকসভায় গিয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি। কিন্তু হৃত সম্মান ফেরানো কি মুখের কথা! তাই যে আন্দোলনকে সমর্থন করেই একদিন শিরোনামে এসেছিলেন অভিজিৎ, তেমনই এক আন্দোলন থেকে খালি হাতেই ফিরতে হল প্রাক্তন বিচারপতিকে।

আরও পড়ুন: হাতে হাত রাখা থাক! তিলোত্তমার জন্য অভিনব মানববন্ধনের সাক্ষী এবার কলকাতা

আরজি করের ঘটনা দেশব্যাপী যে ভয়ঙ্কর বিক্ষোভ, রাগের সঞ্চার করেছে, তার ফলাফল গত একমাস ধরেই দেখছে শহর কলকাতা। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন আরজি কর কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। তবে তাতেও সন্তুষ্ট নয় চিকিৎসক-পড়ুয়ারা। এবার কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগ চেয়ে রাস্তায় নেমেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সেই রবিবার থেকেই চলছে তাঁদের আন্দোলন। সোমবার বহু চেষ্টা করেও কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তরের সামনে যেতে পারেননি চিকিৎসকদের মিছিল। লালবাজারের অদূরে ফিয়ার্স লেনে মিছিল আটকে দেওয়া হয়। সেখানেই রাস্তায় বসে প্রতিবাদ শুরু করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল দেখা না করা পর্যন্ত তাঁরা ওভাবেই বসে থাকবেন বলে সাফ জানিয়ে দেন। মঙ্গলবারও চলেছে সেই ধর্না। অবশেষে মঙ্গলবার তাঁদের জেদের কাছে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয় প্রশাসন।

মঙ্গলবার মানববন্ধন করে লালবাজারের দিকে একশো মিটার পথ এগোন আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা। মিছিলের একেবারে সামনের সারিতে মানববন্ধন করে রেখেছিলেন চিকিৎসকদের প্রতিনিধিরা। কোনও লোহার ব্যারিকেড আর রাখা হয়নি পুলিশের তরফে। প্রতীকী মেরুদণ্ড নিয়ে লালবাজারে স্মারকলিপি জমা দিতে যান ২২ জন চিকিৎসকের প্রতিনিধি দল। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন তাঁরা।

“Abhijit go back” Doctors reject politician presence at Lalbazar area protest site

এরই মধ্যে একসময় প্রাক্তন প্রাক্তন বিচারপতি তথা বিজেপির সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই জুনিয়র ডাক্তাররা ঘোষণা করেন, 'এখানে একজন রাজনীতিবিদ এসেছেন। তাঁকে বলব চলে যেতে। দয়া করে আন্দোলনের সঙ্গে রাজনীতিকে জাড়াবেন না।' জুনিয়র ডাক্তারদের জমায়েত থেকে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে গো ব্যাক স্লোগানও দেওয়া হয় । তখন সাংসদ জানান, তিনি কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে নয়, একজন সহ-নাগরিক হিসেবে এই আন্দোলনে জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে থাকতে এসেছিলেন । 'কিন্তু ওঁরা আমাকে ভুল বুঝেছেন৷'

প্রথম থেকেই আরজি কর পড়ুয়া-চিকিৎসক আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা তাঁদের আন্দোলনে রাজনীতির রং চান না। সেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন শিল্পমহলের প্রতিনিধিরা, তারকা থেকে সাধারণ মানুষ। তবে রাজনৈতিক কোনও দলীয় মানুষের যোগদান সমর্থন পায়নি সেই আন্দোলনে। ফলে প্রাক্তন বিচারপতিকেও পত্রপাঠ এদিন ফিরিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। অভিজিৎ অবশ্য প্রতিবাদীদের বিপক্ষে কোনও কথা না বলে জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের প্রতি তিনি সহানুভূতিশীল ও সমব্যথী।

মঙ্গলবার লালবাজারে বৈঠকের পর চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে তাঁরা সন্তুষ্ট নন। লালবাজার থেকে বেরিয়ে প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা বলেন, “১৪ তারিখ ও ১২ তারিখের ঘটনা প্রসঙ্গে তাঁরা স্বীকার করেছেন, এটি পুলিশি ব্যর্থতা। কিন্তু আলোচনার কোনও সদুত্তর আমরা পুলিশ কমিশনারের থেকে পাইনি। আমরা আমাদের দাবিতে এখনও অনড়। নৈতিক দায় নিয়ে সিপির পদত্যাগ করা উচিত বলে আমরা মনে করি।” প্রতিনিধি দল জানিয়েছে, তাঁরা অবস্থান-বিক্ষোভ তুলে নিলেও বিচারের দাবিতে আন্দোলন একই ভাবে চলবে।

আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ড: অবশেষে গ্রেফতার! ১৬ দিন জেরার শেষে সিবিআই হেফাজতে সন্দীপ ঘোষ

সেই মতোই বুধবারও জারি রয়েছে তাঁদের আন্দোলন। ৯ ফুটেরও উঁচু ব্যারিকেডের এক পারে এখনও আন্দোলনে অনড় রয়েছেন চিকিৎসকরা। ব্যারিকেডের অন্য পারে মোতায়েন রয়েছেন পুলিশবাহিনী। এরই মধ্যে পুলিশকর্তারা বারবার দেখা করে গিয়েছেন প্রতিবাদী পড়ুয়া চিকিৎসকদের সঙ্গে। তবে সিপি-র পদত্যাগের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চলবে, সাফ জানিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

More Articles