ধর্ষণের ২৪ ঘণ্টা পরেই কেন 'ক্রাইম সিন' মেরামতির নির্দেশ দেন সন্দীপ ঘোষ?

RG Kar Sandip Ghosh: অনুমতিপত্রটি হাতে আসার পরে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, তড়িঘড়ি মেরামতির কাজ শুরু করাতে কতখানি মরিয়া ছিলেন সন্দীপ ঘোষ।

ধর্ষণের ঠিক একদিন পরে, অর্থাৎ আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টা কাটার পরেই প্রাক্তন অধ্যক্ষ এক অদ্ভুত নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন বা সিবিআই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার তদন্তে নেমে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি খুঁজে পেয়েছে যাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ রাজ্যের পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টকে (পিডব্লিউডি) হাসপাতালের সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কোন অংশের সংস্কার? ক্রাইমসিন, অর্থাৎ যেখানে অপরাধটি ঘটেছে, সেই ঘটনাস্থল সংলগ্ন এলাকার আশেপাশেই এই সংস্কারের কাজ করানোর নির্দেশ দেন তিনি। উল্লেখ্য, গত ৯ অগাস্ট সকালে হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে ধর্ষিতার লাশ উদ্ধার করা হয়।

সিবিআইয়ের এক সূত্র জানাচ্ছে, তদন্তকারী আধিকারিকরা একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি পেয়েছেন। ওই নথিতে দেখা যাচ্ছে, সন্দীপ ঘোষ সেমিনার হল সংলগ্ন একটি রুম এবং টয়লেট সংস্কারের কাজ পরিচালনা করার জন্য রাজ্যের পিডব্লিউডি-কে অনুমতিপত্র জারি করেছিলেন। অথচ ওই সেমিনার হলের চারপাশের পুরো জায়গাটিই ছিল ক্রাইমসিন! কীভাবে ধর্ষণ ঘটার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খোদ অধ্যক্ষ ক্রাইমসিনের চারপাশে মেরামতির কাজের বরাত দিতে পারেন? তথ্য প্রমাণ লোপাটই কি উদ্দেশ্য ছিল তবে?

আরও পড়ুন- আরজি কর: মাথায় পৌঁছচ্ছে না অক্সিজেন! কেমন আছেন চিকিৎসক দেবাশিস সোম?

তদন্তকারী আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, পিডব্লিউডিকে জারি করা ওই অনুমতিপত্রটিতে সন্দীপ ঘোষ ১০ অগাস্ট সই করেন। যখন ধীরে ধীরে এই ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা নিয়ে আঁচ বাড়ছে, বিষয়টি সহজে সমাধানের নয় তা যখন বোঝা যাচ্ছে, তখন প্রাক্তন অধ্যক্ষ ক্রাইমসিন মেরামতির নির্দেশ দিচ্ছেন। সিবিআইয়ের এক সূত্র জানাচ্ছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল যে, আরজি করের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সন্দীপ ঘোষের নির্দেশে সংস্কার কাজ শুরু করার জন্য পিডব্লিউডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে অনুমতিপত্রটি হাতে আসার পরে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, তড়িঘড়ি মেরামতির কাজ শুরু করাতে কতখানি মরিয়া ছিলেন সন্দীপ ঘোষ।

গত ১৩ অগাস্ট কলকাতা হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআইকে কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে ধর্ষণ ও হত্যার তদন্তভার গ্রহণের নির্দেশ দেয়। এই তদন্তভার দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই রাজ্য পিডব্লিউডি কর্মীরা সেমিনার হল সংলগ্ন একটি রুমে মেরামতির কাজ করার চেষ্টা করেন। ওই সেমিনার রুম থেকেই তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহ ৯ অগাস্ট সকালে উদ্ধার করা হয়। তবে মেরামতির কাজ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতাল চত্বরে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাপক বিক্ষোভের কারণে সেই সংস্কারের কাজ করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন- ১৩ ঘণ্টা ধরে ক্রাইম সিন খোলা! আরজি করে পুলিশের কর্তব্যে গাফিলতি, নাকি অভিসন্ধি?

সিবিআই কর্তাদের মতে, তাঁদের হাতে আসা নথিটি প্রমাণ করছে ওই অংশে মেরামতির কাজ করাতে সন্দীপ ঘোষ মরিয়া ছিলেন। তাই এই নথিটি দু'টি সমান্তরাল তদন্তের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে সহায়ক হতে পারে, প্রথমটি ধর্ষণ এবং হত্যা মামলা এবং দ্বিতীয়টি আরজি কর হাসপাতালের ব্যাপক আর্থিক দুর্নীতি।

সন্দীপ ঘোষকে হাসপাতালে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির মামলায় ইতিমধ্যেই সিবিআই গ্রেফতার করেছে। রাজ্যের জুনিয়র চিকিত্সকরা বিচার চেয়ে পথে নেমেছেন। তারা প্রথম দিন থেকেই স্পষয় বলে আসছেন, আরজি করের ঘটনাটি ধর্ষণ এবং হত্যার বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। তাঁদের দাবি, নির্যাতিতা চিকিৎসককে হত্যা করা হয়েছিল কারণ তিনি এই দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। তাই কি তড়িঘড়ি ক্রাইমসিন মেরামত করিয়ে তথ্য প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিলেন সন্দীপ ঘোষ?

More Articles