নির্ঘুম, অক্লান্ত! পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ কেন চাইছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা?
RG Kar Doctor Protest: হয় দেখা করতে হবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বা তিনি তা না চাইলে পদত্যাগ করতে হবে বিনীত গোয়েলকে।
সারা রাত ঠায় বসে আছেন চিকিৎসকরা। তাঁদেরই এক সহকর্মীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমেছেন সারা রাজ্যের বড় অংশের মানুষ! চিকিৎসকরা প্রথম দিন থেকেই আরজি করে ধর্না মঞ্চে অবস্থা বিক্ষোভ করেছেন। এবার তাঁদের অবস্থান লালবাজারের সামনে, বিচারের দাবিতে। গান, স্লোগান চলছে পুরোদমে। আর চলছে পুলিশের প্রহরা। বিশাল বিশাল ব্যারিকেড দিয়ে আটকানো হয়েছে চিকিৎসকদের। সারা রাত জেগে আছেন চিকিৎসকরা, বিশ্রাম নেই, ঘুম নেই। কেবল বিচার চাইছেন, চাইছেন প্রশাসন দোষীদের আড়াল না করে নির্যাতিতার বিচারের বন্দোবস্ত করুক। রাত পেরিয়ে সকালেও ফিয়ার্স লেনে অবস্থানে অনড় জুনিয়র ডাক্তাররা।
সোমবার দুপুর থেকে পুলিশ কমিশনার পদত্যাগের দাবি তুলেছেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা। হয় দেখা করতে হবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বা তিনি তা না চাইলে পদত্যাগ করতে হবে তাঁকে। সেটাও না হলে ব্যারিকেড সরিয়ে চিকিৎসকদের লালবাজারের দিকে যেতে দেওয়ার দাবি তুলেছেন বিক্ষোভকারী চিকিৎসকরা। কেন লালবাজার অবধি যেতেই দেওয়া হচ্ছে না ডাক্তারদের? কীসের ভয় পাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন, প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন- ক্ষমা প্রার্থনা! কেন আরজি করের চিকিৎসকদের কটাক্ষ করেছিলেন? কী সাফাই কাঞ্চন মল্লিকের?
তবে যতই আটকানো হোক, নিজেদের দাবি থেকে একচুলও নড়ছেন না তারা। কোনও বিশ্রাম ছাড়াই রাত জাগছেন তারা। ক্লান্তিকে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন অবলীলায়। এই অভ্যাস অবশ্য তাঁদের নতুন নয়। ধর্ষিতা চিকিৎসকও টানা ৩৬ ঘণ্টা কাজ করেই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সেই ছিল শেষ ঘুম তাঁর। তাই টানা রাত জাগার অভ্যাস নিয়ে ভাবছেনই না চিকিৎসকরা। প্রবল রোদ মাথায় নিয়েও অক্লান্ত লড়ে চলেছেন তারা। হাতে ফুল নিয়ে এসেছেন ও একটি প্রতীকী মেরুদণ্ড নিয়ে এসেছিলেন এই ডাক্তাররা। অবস্থানের স্থানে রাখা হয়েছে সেই মেরুদণ্ড।
আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের তরফে জানানো হয়েছে, সোমবার শেষ রাতের দিকে পুলিশের একজন প্রতিনিধি তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। পুলিশ জানায়, ২০ জনের প্রতিনিধি দল লালবাজারে দেখা করতে যেতে পারেন কিন্তু পুলিশ কমিশনার আন্দোলনকারীদের কাছে আসবেন না। চিকিৎসকরা দাবি তুলেছিলেন, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট ও ফিয়র্স লেনের সংযোগস্থল দিয়ে যেতে দেওয়া হোক তাঁদের। অথচ পুলিশ সেই দাবিটুকুও মানতে চায়নি। কেন এত ভয় নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের প্রশ্ন তুলছেন তারা। ওই রাস্তা দিয়ে যেতে দিলে স্মারকলিপি দিয়ে আসার কথাও বলেছিলেন আন্দোলনকারীরা। তবে কোনও দাবিতেই সাড়া না দেওয়াতে, পুলিশ কমিশনার পদত্যাগ করতে বলার কথাই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন- “আপনার মেয়েকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে এসেছি”, ধর্ষিতার বাবা-মাকে ৩ বার ফোনে কী কী বলা হয়?
আন্দোলনকারীদের নেতৃত্ব দেওয়া চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দ বলেছেন, “ডাক্তার সমাজকে প্রশাসনের এত ভয় কেন? ৯ অগস্ট যখন এই বর্বরোচিত ঘটনা ঘটে গেল, যখন ১৪ তারিখের ঘটনা ঘটল, তখন প্রশাসন কোথায় ছিল? তখন কোথায় ছিল এত ব্যারিকেড? আজ ডাক্তারদের আটকানোর জন্য এত ব্যারিকেড। পুলিশ আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে। কিন্তু তারা জানে না, আমাদের ৯৬ ঘণ্টা ডিউটি করার অভিজ্ঞতা আছে।” সূত্রের খবর, সোমবার রাতে কমিশনার বিনীত গোয়েল লালবাজারে ছিলেন না। তিনি লালবাজারে যান অবশ্যই কিন্তু আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা না করেই চলে যান।
মঙ্গলবার দুপুরে অবস্থানরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন অ্যাডিশনাল পুলিশ কমিশনার সন্তোষ পাণ্ডে। রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু চিকিৎসকরা নিজেদের দাবিতে অনড়। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল নিজে এসে অবস্থানরত চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করবেন এই দাবিই তুলেছেন তারা আবারও। নাহলে চিকিৎসকদের মিছিলকে লালবাজারের দিকে আরও এগোতে দিতে হবে। সেটাও না হলে পদত্যাগ করতে হবে পুলিশ কমিশনারকে।