এনডিআরএফ আসতে ১ ঘণ্টারও বেশি দেরি! ইদ ফেলে উদ্ধারে ছুটে এসেছিলেন স্থানীয়রাই

Kanchenjunga Express Tragedy: ছ' বছরের শিশু স্নেহা মণ্ডলের প্রাণ গিয়েছে এই দুর্ঘটনায়। তাঁর মাও ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে।

সপ্তাহের শুরুতেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দেখল গোটা দেশ। সোমবার সকালে রওনা হওয়ার কিছু পরেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস এবং মালগাড়ির মধ্যেকার সংঘর্ষে এখনও অবধি প্রাণ গিয়েছে ৯ জনের। আহত প্রায় ৫০। ঘটনার পর একটা গোটা দিন কেটে গিয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই আপ লাইনে রেল চলাচল শুরু হয়েছে। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে দক্ষিণগামী ট্রেনগুলিও ছেড়েছে। যাত্রীদের মনে ভীতি কাটেনি স্বাভাবিকভাবেই। তবু, ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে রেল যাতায়াত। শুধু ছন্দ কেটে গিয়েছে নিহতদের পরিবারের। সোমবার ছিল বকরি ইদ। অগুনতি পরিবারে উৎসবের মেজাজ। সেই মেজাজ ছিন্ন করে ডুকরে উঠেছে স্বজনহারা কান্না।

ডাউন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের গুসকরার বিউটি বেগমের। বাড়িতে ইদের আনন্দের পরিবেশ নিমেষে নস্যাৎ করে দিয়েছে মৃত্যুর খবর। বাড়ি ফেরার কথা ছিল হলদিবাড়ি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে। সোমবার সেই ট্রেন বাতিল ছিল। বিউটির স্বামী বলেছিলেন মঙ্গলবার বাড়ি যাওয়ার কথা। কিন্তু উৎসবের দিনে নিজের পরিবারের সঙ্গেই থাকতে চেয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের জেনারেল কামরায় উঠেছিলেন বিউটি। স্বামীকে ফোন করে জানিয়েছিলেন ট্রেন ছেড়েছে, সিট পেয়েছেন। শুধু বাড়ি ফেরা আর হলো না। পারিবারিক ক্যালেন্ডারে দগদগে ঘা হয়ে রইল বকরি ইদ।

আরও পড়ুন- রিল তৈরিতেই ব্যস্ত! রেলের কবচের ব্যবস্থা কেন করতে পারলেন না রেলমন্ত্রী অশ্বিনী?

ছ' বছরের শিশু স্নেহা মণ্ডলের প্রাণ গিয়েছে এই দুর্ঘটনায়। তাঁর মা-ও ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। মেয়ের অস্ত্রোপচারও হয়। তবু শেষরক্ষা হয়নি। ছোট্ট দেহ দুর্ঘটনার ধাক্কা নিতে পারেনি। কেউ স্বজন হারিয়েছেন, কেউ কেউ আবার অচেনা অজানা নাগরিকদের বাঁচাতে ইদের আনন্দ ফেলে ছুটে এসেছিলেন দুর্ঘটনার স্থলে।

সোমবার ফাঁসিদেওয়ার রাঙাপানির কাছে জালাস গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোট নির্মল জোতের বাসিন্দাদের কানে এসেছিল বীভৎস আওয়াজ। তাঁরা দেখেন, মালগাড়ির ইঞ্জিনের উপরে উঠে গিয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের একটি কামরা! তীব্র ধাক্কায় আরেকটি কামরা প্রায় গুঁড়িয়েই গিয়েছে। দেখেই বোঝা যায়, চাপা পড়ে আছেন যাত্রীরা। ওই এলাকার স্থানীয়রাই উদ্ধারকাজ শুরু করেন প্রথম। প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় পরে আসেন এনডিআরএফ কর্মীরা। ট্রেন দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারাও চলে আসেন সাহায্য করতে। কোনও বাড়িতেই সেদিন রান্না হয়নি আর। কুরবানি ইদ থাকলেও কোনও বাড়িতেই কুরবানি হয়নি। যুবক, মহিলা সকলেই দুর্ঘটনাগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। কোনওমতে কোলে করেই জখমদের হাসপাতালে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেন গ্রামবাসীরা।

কোনও যাত্রীর মাথা থেঁতলে গেছে, কারও হাত, পা কাটা। রাস্তায় ছলকে পড়েছে রক্ত। বেলা বাড়তেই হাসপাতালে থিকথিক ভিড়। নিখোঁজ রেলযাত্রীদের খোঁজ করতে এসেছেন পরিচিতরা। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের গার্ড আশিস দের মৃত্যু ঘটেছে এই দুর্ঘটনায়। অদ্ভুতভাবেই তাঁর সেদিন ডিউটি ছিল শতাব্দী এক্সপ্রেসে। কোনও কারণে তিনি তা বদলে কাঞ্জনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে নিয়েছিলেন। পরিবার থাকে শিলিগুড়িতেই। ১৭ জুন দিনটি আজীবনের মতো অন্ধকার হয়েই থেকে গেল আপনহারা এই পরিবারগুলির।

More Articles