অস্কারের মঞ্চে কলকাতার মেয়ে! 'এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স'-এর দৌলতে বিরল কৃতিত্ব বাঙালি কন্যার
The Elephant Whisperers Oscar Bong Connection : জুড়ে গিয়েছে অস্কারের মঞ্চ, এবং কলকাতাও! এবারের অস্কারের সঙ্গে প্রবলভাবে জড়িয়ে আছেন এক বঙ্গতনয়া।
নাম ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স’। এই মুহূর্তে কেবল ভারত নয়, গোটা বিশ্ব মেতে উঠেছে মাত্র ৪১ মিনিটের এই তথ্যচিত্রটি ঘিরে। ‘হুইস্পারার্স’ নয়, বরং বেশ জোর গলায় ঘোষণা করেছে ভারতের গৌরবগাথা। ৯৫ তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস বা অস্কারের মঞ্চে সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্রের পুরস্কার পেয়েছে এই ভারতীয় সিনেমাটি। মানুষ আর পশুর এই বন্ধনের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে বেভারলি হিলস, অস্কারের মঞ্চ, এবং কলকাতাও! হ্যাঁ, এবারের অস্কারের সঙ্গে প্রবলভাবে জড়িয়ে আছেন এক বঙ্গতনয়া। ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স’-এর হাত ধরেই তিনি অস্কারের মঞ্চে উঠলেন, সোনালি মূর্তিটাকে ধরে রাখলেন। তৈরি হল আবেগঘন এক মুহূর্ত।
সঞ্চারী দাস মল্লিক। কলকাতার মেয়ে, এখানেই বড় হওয়া, আদ্যোপান্ত বাঙালি। মা শুভা দাস মল্লিক সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের মাস কমিউনিকেশনের প্রধান ছিলেন। তিনি নিজেও একজন তথ্যচিত্র নির্মাতা। ছোট থেকে পড়াশোনা করার পর চলচ্চিত্রের লাইনেই চলে গিয়েছিলেন। তবে ক্যামেরার সামনে নয়, পেছনের কাজই তাঁর মূল আকর্ষণের জায়গা। সেই সূত্রেই যোগাযোগ হয় কার্তিকি গঞ্জালভেসের সঙ্গে। ততদিনে একটু একটু করে এই হাতির গল্পটিকে দাঁড় করাচ্ছিলেন কার্তিকি। সঙ্গে প্রযোজক হিসেবে ছিলেন গুণীত মোঙ্গা। তামিলনাড়ুর মুদুমালাই টাইগার রিজার্ভের থেপ্পাকাডু ক্যাম্প। সেখানেই রয়েছে অনাথ হস্তিশাবক রঘু। মা-বাবা নেই, পরিবার নেই, একেবারে নিঃসঙ্গ সে।
আরও পড়ুন : দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স : ভারতকে প্রথম অস্কার এনে দিল যে ৪১ মিনিটের কাহিনি!
আর তাকেই নিজের সন্তানের মতো আগলে রাখেন এক আদিবাসী দম্পতি। বোম্মান আর বেলি, এই দুই মানুষের সঙ্গে অনাথ হস্তিশাবক রঘুর সম্পর্ক, তার বেড়ে ওঠা, খুনসুটি সমস্তটাই ফুটে উঠেছে এই ছবিতে। ঠিক যেন গল্পের পাতা থেকে উঠে আসা এক অদ্ভুত সুন্দর কাহিনি। আজকে যখন একের পর এক বনজঙ্গল ধ্বংস করা হচ্ছে, চোরাশিকার বাড়ছে, নগরায়নের দোহাই দিয়ে শেষ করে ফেলা হচ্ছে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র – সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স’ এক ঝলক টাটকা হাওয়ার মতো। চোখে আঙুল দিয়ে শিখিয়ে দিয়ে যায়, অসহায় প্রাণীর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলে, আগলে রাখলে তারাও আমাদের জড়িয়ে রাখবে। এভাবেই তৈরি হবে স্বাভাবিক এক পৃথিবী।
গোটা শ্যুটিংটা ছিল মোট ৫০০ ঘণ্টার। সেখান থেকে সম্পাদনা করে ৪১ মিনিটের তথ্যচিত্রে নিয়ে আসেন ডগলাস ব্লাশ। তাঁরই সহকারী এডিটর হিসেবে এই ছবিতে কাজ করেছেন সঞ্চারী দাস মল্লিক। দুজনে মিলে করেছেন অসাধ্যসাধন। আর তারই ফল অস্কার জয়। ১৯৯২ সালে এরকমই একটি ঘটনা দেখেছিল বিশ্ব। যখন নিজের সার্বিক কাজের জন্য অস্কার পেয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। কিন্তু প্রবল অসুস্থ থাকায় তিনি আমেরিকায় আসতে পারেননি। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিজের বক্তব্য রেখেছিলেন।
এবার অবশ্য সেটা হল না। একেবারে অস্কারের মঞ্চে দাঁড়িয়ে পুরস্কার নিলেন সঞ্চারী। এখনও যেন স্বপ্নের জগতে রয়েছেন তিনি। বাঙালি হিসেবে এমন কৃতিত্ব, এ কি কম কথা নাকি! পুরস্কার নেওয়ার সময়ও যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না তাঁর। সত্যিই, ভারত তো বটেই, বাংলার জন্যও অত্যন্ত গর্বের মুহূর্ত এটি। সঞ্চারী দাস মল্লিক সেই বিরল কৃতিত্বেরই অধিকারী।