২৬ হাজার চাকরি বাতিলই! বিধানসভা নির্বাচনে অশনি সংকেত হবে শিক্ষকদের কান্না?

SSC Recruitment scam Verdict: সুপ্রিম কোর্ট রায়ে জানিয়েছে, যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করা সম্ভবই হয়নি। ফলে আবারও পরীক্ষা দিতে হবে। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলেই তাঁদের আবেদন করতে হবে।

আবারও চরম অনিশ্চিত জীবনের মুখে হাজার হাজার তরুণ তরুণী! আবারও বাংলায় যুবসমাজের সমবেত কান্নার রোল! হাইকোর্টের রায়কে মান্যতা দিয়েই ২০১৬ সালের এসএসসিতে নিয়োগের আস্ত প্যানেল বাতিল করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, সমগ্র নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই ঢালাও অনিয়ম হয়েছে। তাই সমস্ত নিয়োগ বাতিল ছাড়া উপায় নেই। বৃহস্পতিবার, রাজ্যের ২৬ হাজার চাকরি বাতিল করে দিল প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ। আর যদি সত্যিই এই ২৬ হাজার মানুষের মধ্যে নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়ে থাকেন অনেকে? জল আর দুধ আলাদা করার উপায় নেই, তা স্পষ্ট করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। নিয়োগের দুর্নীতির ফল তাঁদেরও ভোগ করতে হবে যারা হয়তো যোগ্য ছিলেন সত্যিই।

২০১৬ সালের রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এসএসসি-র শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। মামলা হাইকোর্টে যায়। তখনও কলকাতা হাইকোর্ট ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল করে দেয়। তখনও ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি যায়। তারপর, মুখরক্ষা করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি এসএসসি সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয়। তারপর, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট কার্যত হাইকোর্টের রায়েই সিলমোহর দেয়। রায় দেয়, প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের। দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। আর যাঁরা অন্য সরকারি চাকরি ছেড়ে ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগে স্কুলের চাকরিতে ঢুকেছিলেন, তাঁরা চাইলে আগের কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারবেন।

সুপ্রিম কোর্ট রায়ে জানিয়েছে, যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করা সম্ভবই হয়নি। ফলে আবারও পরীক্ষা দিতে হবে। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলেই তাঁদের আবেদন করতে হবে। হাইকোর্ট যখন প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল করে দিয়েছিল, তখনও প্রশ্ন উঠেছিল যোগ্য মানুষদের কেন সরকারের দুর্নীতির খেসারত দিতে হবে? অথচ কোনওভাবেই যোগ্য-অযোগ্য বাছাইয়ের পথ খুঁজে পায়নি আদালত। শীর্ষ আদালতে মামলা যাওয়ার পর, সেখানেও হাত তুলে নেন আইন বিশেষজ্ঞরা! বলা হয়, পরীক্ষার আসল ওএমআর শিট উদ্ধারই করা যায়নি। কোন ওএমআর শিট আসল, কোনটা নকল বছার উপায় নেই। তাই ঢালাও চাকরি বাতিল হলো ২০২৬-এর আগে। উল্লেখ্য, বিধানসভা নির্বাচনের আগে নিঃসন্দেহে এই চাকরি বাতিলের ঘটনা তৃণমূল সরকারের কাছে বড় ধাক্কা।

সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার তদন্ত করছিল সিবিআই। সিবিআই জানিয়েছিল, এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। সাদা খাতা জমা দিয়েই অনেকে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। তাই ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের যে রায় হাইকোর্ট দিয়েছিল, তাই বহাল থাকা উচিত। রাজ্য সরকারের দাবি ছিল, এত শিক্ষকের চাকরি বাতিল হলে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থাই ভেঙে যাবে। তবে রাজ্য সরকারের কান্নায় ভেজেনি কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিলের রায়ে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দেয়। চাকরি হারানো শিক্ষকদের এতদিনের সম্পূর্ণ বেতন ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়, ১২ শতাংশ হারে সুদ-সহ।

রাজ্যের শিক্ষা দফতর, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করলে, ২০২৪ সালের ৭ মে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ চাকরি বাতিলের নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে। তবে শেষরক্ষা হলো না। প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের জীবন এখন প্রশ্নের মুখে। শিক্ষকের কান্না দেখে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এই রাজ্যে চাকরির নিশ্চয়তা আর কোনও দিনই কি পাবেন সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ? যারা চাকরির ভরসায় নতুন জীবন শুরু করেছিলেন, সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, চিকিৎসা করাচ্ছিলেন, তাঁদের এই অনিশ্চিত জীবনই কি প্রাপ্য ছিল? বিধানসভা ভোটের আগে আদৌ শিক্ষকের কান্না কোনও ছাপ ফেলবে বাংলার রাজনীতিতে?

More Articles