আরজি করে দুষ্কৃতী তাণ্ডব, কতটা ক্ষতি, টার্গেট কী ছিল?
R G Kar Hospital Incident: সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ যেখানে সংগ্রহ করা হয়, সেই ঘরেও ভাঙচুর চালানো হয়। পরিকল্পিতভাবে ভাঙা হয় সিসিটিভির হার্ডডিক্স যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য পুলিশের ঘরে থাকা প্রত্যেকটি মোবাইল ফোনও।
বুধবার, ১৪ অগস্ট যখন আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে রাত দখলে নেমেছে গোটা শহর, সেই আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে গিয়েছে মফসসল থেকে শুরু করে জেলায় জেলায়, সে সময় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ভিতরে চলল দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব।
বুধবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ আরজি কর কলেজ চত্বরে মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচী চলছিল, সেই সময় হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে পড়ে এক দল গুন্ডা। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে চালানো হয় তাণ্ডব। তাঁদের কয়েক জনের হাতে রড এবং লাঠি ছিল বলে অভিযোগ। জরুরি বিভাগের বাইরের কোলাপসিবল গেট ভেঙে উপড়ে ফেলা হয়।
জরুরি বিভাগের গেট ভেঙে ঢুকে গোটা জায়গাটাকেই ভেঙে তছনছ করে তারা। হামলাকারীদের প্রথম নিশানাই ছিল জরুরি বিভাগ। হাতের সামনে যা পেয়েছেন, তা-ই ভেঙেছেন হামলাকারীরা। জরুরি বিভাগের এইচসিসিইউ (হাইব্রিড ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট), সিসিইউ (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট)-তেও ভাঙচুর চালানো হয়। এমনকি, তছনছ করে দেওয়া হয় ওষুধের স্টোররুমও। ওষুধ, ইঞ্জেকশন-সহ বাকি সামগ্রী মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। ভাঙা হয় ওষুধ রাখার ফ্রিজও।
আরও পড়ুন: আধঘণ্টা আরজি করে অবাধ তাণ্ডব, ভাঙচুর! কোথায় ছিল কলকাতা পুলিশ?
ভেঙে ফেলা হয় জরুরি বিভাগের একাধিক বোর্ড এবং অ্যাডমিশন কাউন্টারের কাচ। সমস্ত জরুরি ফাইলও মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। ভিতরের পাশাপাশি হামলা চালানো হয় হাসপাতালের বাইরেও। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের একাধিক গাড়ি। সেই ঘটনায় আহত হন বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী। এর পরে দুষ্কৃতীদল এগোয় আরজি কর পুলিশ ফাঁড়িতে। সেখানেও রাখা সব জিনিসপত্র তছনছ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, পুলিশের কিয়স্কেও ভাঙচুর চালানো হয়।
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ যেখানে সংগ্রহ করা হয়, সেই ঘরেও ভাঙচুর চালানো হয়। পরিকল্পিতভাবে সিসিটিভির হার্ডডিক্স যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য পুলিশের ঘরে থাকা প্রত্যেকটি মোবাইল ফোনও ভাঙচুর করা হয়। আর জি কর হাসপাতালের এমার্জেন্সির ঠিক বাইরে মোতায়েন পুলিশ এবং সিভিক ভলেন্টিয়ারদের ইউনিফর্ম, জীবন দায়ী ওষুধ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশবাহিনী। নামানো হয় র্যাফ। তারা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। গোটা সময় জুড়ে চলে ইটবৃষ্টি। হামলাকারীদের একাংশকে তাড়া করে এলাকাছাড়া করে পুলিশ। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। পুলিশের তাড়া খেয়ে একদল লোককে হাসপাতালের পাশের খালপাড় ধরে গলিপথে দৌড়তে দেখা যায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই ঘটনার খবর সামনে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, বক্ষ বিভাগের চার তলার যে সেমিনার রুম থেকে তরুণী চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহটি উদ্ধার হয়েছিল, সেই ঘরেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এই সংক্রান্ত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হল, ওই সেমিনার রুম ‘অক্ষত’ রয়েছে। তার পরেই গুজব এবং মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর জন্য আইনি পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে লালবাজার।
বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতা পুলিশের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করা হয়। সেখানে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ‘ভাঙচুরের’ দাবি এবং ভিডিয়ো সম্বলিত একটি পোস্ট শেয়ার করে লেখা হয়, “অপরাধ সেমিনার রুমে হয়েছিল। আর সেই সেমিনার রুমকে ছোঁয়া পর্যন্ত হয়নি। যাচাই না করা খবর ছড়াবেন না। আমরা গুজব ছড়ানোর জন্য আইনি পদক্ষেপ করছি।” ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে ওই অশান্তির ঘটনার ৫০টিরও বেশি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বেশ কয়েক জন পুরুষ ও মহিলাকে লাল গোল দাগে চিহ্নিত করে তাঁদের সন্ধান চেয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: পরিকল্পনা করেই রাত দখলের মধ্যে আরজি করে ব্যাপক ভাঙচুর? নেপথ্যে কারা?
আরজি করে হামলার ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। এলাকা ঘুরে ‘ক্রুদ্ধ’ বিনীত বলেন, ‘‘ডিসি নর্থ প্রতিবাদকারীদের রক্ষা করতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। এখানে যা হয়েছে তা ভুল প্রচারের জন্য। কলকাতা পুলিশ এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।’’ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে বুধবার মধ্যরাতে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করলেন তৃণমূল সাংসদ তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ‘অপরাধী’দের খুঁজে বার করতে হবে পুলিশকে। ঘটনার তীব্র নিন্দা করে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে অভিষেক লিখেছেন, ‘‘আরজি করে যে গুন্ডামি হল, তা সব মাত্রা ছাড়িয়েছে। জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমি কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেন তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়, সেই আর্জি জানিয়েছি। তাদের রাজনৈতিক যোগ যা-ই হোক না কেন। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের দাবি ন্যায্য। সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাওয়া তাঁদের ন্যূনতম দাবি। এটাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’’ এদিকে, আরজি করে হামলার ঘটনায় পাল্টা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নিশানা করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে দমাতে মুখ্যমন্ত্রীই গুন্ডা পাঠিয়েছেন।