লাইন না দিয়েই পেটপুজো সারতে হলে এই পুজোয় ঢুঁ মারুন এই রেস্তোরাঁগুলিতে

Durgapuja 2022: এই রেস্তোরাঁগুলি হোক আপনার ঠিকানা, লম্বা লাইনের ঝক্কি এড়াতে।

দুর্গাপুজো মানেই মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা দর্শন, অষ্টমীর অঞ্জলি, কাজের সূত্রে অন্যত্র চলে যাওয়া আত্মীয়, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়া এবং খাওয়াদাওয়া। দুর্গাপুজোর খাওয়াদাওয়াকে বাঙালি নিজের পছন্দের বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছে। কখনও পুজোর মণ্ডপ থেকে পাওয়া প্রসাদ এবং ভোগ, কখনও বাড়িতে রান্না করে সবাই মিলে একসঙ্গে খেতে বসা, কখনও মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়ানোর মাঝে টুকটাক খাওয়া আবার কখনও পরিবার অথবা বন্ধুদের সঙ্গে কোনও রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া। দুর্গাপুজোর কয়েকদিন রেস্টুরেন্টগুলিতে ভিড়ের মাত্রা স্বাভাবিক কারণেই অনেকটা বেশি হয়। তাই কিছুটা কম ভিড় ঠেলে এবং তুলনায় ছোট লাইনে দাঁড়িয়ে একটা টেবিল পাওয়ার সুযোগ খুব কম রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায়। কলকাতায় এবং তার আশপাশের কিছু স্বল্প পরিচিত হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যারা দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে অল্প অপেক্ষার পরেই বিভিন্ন রকমের খাবার পরিবেশন করে বাঙালির মন এবং স্বাদকোরককে তৃপ্ত করতে পারে।

মার্কো পোলো
কলকাতার দু'টি জায়গায় এই রেস্তোরাঁর শাখা রয়েছে। একটি সাদার্ন অ্যাভিনিউতে, অপরটি পার্ক স্ট্রিটে। পার্ক স্ট্রিটে এশিয়াটিক সোসাইটির বিপরীতের ফুটপাথ ধরে অ্যালেন পার্কের দিকে হাঁটলে পৌঁছে যাওয়া যাবে এই রেস্টুরেন্টে। দোতলা এই রেস্তোরাঁর পরিবেশ বহু মানুষের পছন্দ। শান্ত, নিরিবিলি, ছিমছাম। মুখ্য দরজা দিয়ে প্রবেশ করার পর সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামা এবং ওপরে উঠে বসা যায়। মৃদু সংগীতের ঝংকার রেস্টুরেন্টের পরিবেশ আরও মনোরম করে তোলে। এই রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন রকমের খাবার এবং পানীয় পাওয়া যায়। তার মধ্যে পিস পোলাও, ফ্রায়েড রাইস, চাউমিন, চিলি ফিশ, আলুর দম, বিভিন্ন ধরনের কাবাব, মটর পনিরের মতো পরিচিত পদ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বারবিকিউ স্মোকড চিকেন, চিকেন ইন ব্ল্যাক বিন সস, গ্রিলড ভেটকি, টুটি ফ্রুটি আইসক্রিমের মতো স্বল্প-পরিচিত অথচ সুস্বাদু খাবার। খাবারের পরিমাণ এবং গুণমান দুটোই যথেষ্ট ভালো। এক প্লেট খাবার একজনের জন্য যথেষ্ঠর থেকে বেশি। এই রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন রকমের পানীয় পাওয়া যায়। তার মধ্যে পিঙ্ক হেভেন অথবা মেডিটেরিয়ান বিউটির মতো মকটেলের স্বাদ বহুদিন জিভে লেগে থাকবে। পার্ক স্ট্রিটের রেস্টুরেন্টটি দুপুর বারোটা থেকে সাড়ে তিনটে এবং সন্ধে পৌনে সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত খোলা থাকে। যদিও পুজোর সময় এই রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে সামান্য লাইনে দাঁড়াতে হতে পারে, কিন্তু আশপাশে কোনও বড় দুর্গাপুজোর মণ্ডপ না থাকার কারণে এবং প্রায় ঢিল ছোড়া দুরত্বে আরও কিছু জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট থাকার দরুন এই রেস্টুরেন্টে একটু কম সময় অপেক্ষা করতে হয়।

Marco Polo

মার্কো পোলো

ব্লু পপি-থাকালি
ক্যামাক স্ট্রিট চত্বরে সিকিম হাউসের দোতলায় তিব্বতি এবং নেপালি খাবারের ঝুলি নিয়ে রয়েছে ব্লু পপি-থাকালি। তিব্বতি খাবার বললে আমরা সাধারণত মোমোর কথা বুঝি। যদিও এই রেস্টুরেন্ট সেই ধারণা বদলে দেয়। বিভিন্ন ধরনের থালি, নেপালি মতে তৈরি ঝাল আলু, ভুটিয়া মতে তৈরি মাশরুম, নুডলস স্যুপের মতো আরও অনেক সুস্বাদু খাবার এই রেস্তোরাঁ পরিবেশন করে। দুপুর বারোটা থেকে রাত দশটা অবধি এই রেস্টুরেন্ট খোলা থাকে। এই রেস্টুরেন্ট দুই ধরনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতার জনপ্রিয় পুজোমণ্ডপগুলি থেকে বেশ কিছুটা দূরে থাকার কারণে এবং কাছেই পার্ক স্ট্রিটের বিভিন্ন জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট থাকার কারণে এই রেস্টুরেন্টে পুজোর দিনগুলোতে ভিড় একটু কম হয়।

Blue Poppy Thakali

ব্লু পপি থাকালি

হাকা
বিভিন্ন রকমের চাইনিজ খাবার পরিবেশন করার ক্ষেত্রে এই স্বল্প পরিচিত প্রতিষ্ঠানটির যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় হাকার দু'টি শাখা রয়েছে। একটি মনি স্কোয়ার শপিং মলে এবং অপরটি সল্টলেকের সেক্টর ওয়ানে সিটি সেন্টার শপিং মলে। বুফে এবং মেনু থেকে নির্বাচন করে খাওয়ার সুবিধা দু'টি শাখাতেই রয়েছে। হাকার বিভিন্ন ধরনের স্যুপ, হাকা চিলি চিকেন, পেপার গার্লিক ফিশ, ফ্রায়েড রাইস বহু বছর ধরে মানুষের মন তৃপ্ত করে তাদের বারবার ফিরে আসতে বাধ্য করে। এখানে বিভিন্ন ধরনের পানীয় এবং আইসক্রিম পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে অরেঞ্জ অ্যান্ড প্যাশন ফ্রুট ফ্রেপ এবং ব্রাউনি উইথ আইসক্রিম বহু মানুষের খুবই পছন্দের। দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে এই দু'টি প্রতিষ্ঠান খাবার পরিবেশন করা শুরু করে। যদিও শপিং মলগুলিতে সারা বছর ভিড় লেগেই থাকে তবুও এই দু'টি শপিং মলের সামনেই খুব বড় এবং বিখ্যাত পুজোমণ্ডপ না থাকায় এবং শপিং মলে অন্য খাবারের দোকান থাকার দরুন অপেক্ষাটা তুলনায় একটু কম হতে পারে। সিটি সেন্টারে হাকা-সংলগ্ন হাকা-র নিজস্ব বার কিক্সে বন্ধুদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো যেতে পারে।

বল্লে বল্লে ধাবা
সল্টলেকের সেক্টর ওয়ানে সিটি সেন্টার শপিং মল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রয়েছে বল্লে বল্লে ধাবা। মাঝারি আকারের জায়গায় ধাবার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করার একটা চেষ্টা এই প্রতিষ্ঠানে দেখা যায়। নাম থেকেই বোঝা যায় যে, বিভিন্ন উত্তর ভারতীয় খাবার এই রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায়। দুপুর বারোটা থেকে রাত দুটো অবধি এই রেস্টুরেন্টে খাবার পরিবেশন করা হয়। তাই সন্ধে অথবা রাতের বেলা প্রতিমা দর্শনের ফাঁকে সুযোগ বুঝে এই রেস্টুরেন্টে পেটপুজো করাই যায়। বিভিন্ন উত্তর ভারতীয় খাবারের মধ্যে কিমা নান, রুমালি রুটি, চিকেন ভর্তার কথা বহু মানুষের মুখে লেগে থাকে। বল্লে বল্লে ধাবায় লস্যি, মশলা কোল্ড ড্রিংক-এর মতো সাধারণ মানুষের পরিচিত কিছু পানীয় পাওয়া যায় যা মানুষকে পুজোর সময়ের ভ্যাপসা গরম থেকে সাময়িক মুক্তি দিতে পারে। সিটি সেন্টারের একপাশে একটু নির্জন এলাকায় হওয়ার কারণে রেস্টুরেন্টে টেবিল পাওয়ার অপেক্ষার সময় তুলনামূলকভাবে কম হয়।

মাকাজো
মাকাজো-কে সঠিকভাবে ক্যাফে এবং রেস্টুরেন্টের মাঝামাঝি একটা খাবারের দোকান বলা যেতে পারে। লেক থেকে একটু এগিয়ে সাদার্ন অ্যাভিনিউতে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। যদিও নিজস্ব গাড়ি ছাড়া পৌঁছনোর জন্য একটু কষ্ট হতে পারে কিন্তু এই ক্যাফেতে ভিড়ের ঠেলা একটু কম সহ্য করতে হয়। দুটি তলার ওপরেরটিতে বসার জায়গা একটু কম হলেও নিচের তলায় সে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বিভিন্ন ধরনের পিৎজা, পাস্তা এবং শেক এখানে পাওয়া যায়। তার মধ্যে শিকাগো পিৎজা, পিনাকোলাডা, চিজি ফ্রাইজ টপড উইথ বারবিকিউ চিকেন, কোল্ড কফির মতো পদ মানুষের অপেক্ষার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারে। সাধারণত এই প্রতিষ্ঠান দুপুর বারোটা থেকে রাত দশটা অবধি খোলা থাকলেও অনেক সময় পুজোর দিনগুলিতে গভীর রাত পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এখানে খাবার পরিবেশন করা হয়। সেক্ষেত্রে অগ্রিম ফোন করে খোঁজ নিলে মণ্ডপে ঘোরার একফাঁকে পেটপুজো হতে পারে।

More Articles