মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তে কী মনে করে মানুষ! উত্তর গবেষণায়

মৃত্যুর মুখে দাঁড়ালে কী হয়?  জীবনের পুরোনো স্মৃতি আবার চোখের সামনে ভেসে উঠতে পারে? নতুন গবেষণা বলছে, তা সম্ভব। এ যাবৎ যারা মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছেন, তাদের মুখ থেকে শুনে জানা গেছিল, তাঁদের জীবনের একাধিক পুরোনো স্মৃতি নাকি তাদের প্রায়-মৃত মুহুর্তে ফিরে এসেছে। কিন্তু সেই সমস্ত ব্যক্তিরা মৃত্যুর খুব কাছাকাছি গেছিলেন, তাঁদের কারো মৃত্যু কিন্তু হয়নি।  এবার আরও একধাপ এগোল এই গবেষণা। দেখা গেল ঠিক মৃত্যুর সময়ে মস্তিষ্কে আনাগোনা শুরু করেছে পুরোনো স্মৃতি। কিন্তু যদি কেউ মারা যান, তিনি কী ভাবেই বা তাঁর মৃত্যুকালীন অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেবেন?

আসলে খুব অদ্ভুত ভাবে গবেষকদের নজরে আসে এই ঘটনা। মৃগী জাতীয় অসুখের শিকার এক রোগীর মস্তিষ্ক-জাত তরঙ্গ বা ব্রেনওয়েভ পরীক্ষা করছিলেন। ব্রেনওয়েভ রেকর্ড করার সময় হঠাতই ওই রুগীর হার্ট অ্যাটাক হয় এবং তিনি ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন। রেকর্ডিং কিন্তু তখনও চলছে, আর ঠিক সেই সময় কম্পিউটার স্ক্রিনে ভেসে ওঠে আশ্চর্যরকমের কিছু তরঙ্গ। মৃত্যুর ঠিক তিরিশ সেকেন্ড আগে এবং পরেও কম্পিউটার স্ক্রিনে ভাসতে থাকে এরকম তরঙ্গ। গবেষকরা জানান এই তরঙ্গগুলি তখনই দেখা যায় যখন আমরা স্মৃতি রোমন্থন করি বা ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখি।

শুধু তাই নয়, এই প্রথমবার মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া একটি মানব মস্তিষ্ক কী অনুভব করে, কী ঘটে সেই মস্তিষ্কে জীবনের একদম শেষ প্রান্তে এসে, তা রেকর্ড করা সম্ভব হয়েছে, তা-ও আকস্মিক ভাবেই। এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ফ্রন্টিয়ার্স ইন এজিং নিউরোসায়েন্স নামের বৈজ্ঞানিক জার্নালে।

এই অবিষ্কারের আগেও, আমেরিকার একদল গবেষক পরীক্ষা করে দেখেন, ল্যাবোরেটরিতে রাখা ইঁদুরের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে।  এই ইঁদুরগুলির মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে দেখা যায়, মৃত্যুর সময়ে তাদের হৃদপিন্ড থেমে যাওয়ার তিরিশ সেকেন্ড পরেও ঠিক একই ধরনের ব্রেনওয়েভ তৈরি হচ্ছে।

কিন্তু কী ধরনের স্মৃতি ভেসে আসে মৃত্যুর আগে আমাদের চোখের সামনে? গবেষকদের মধ্যে একজন জানাচ্ছেন, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এখনই সম্ভব না। কিন্তু তা সুখের স্মৃতি হবে নাকি দুঃখের, নাকি ভয়ের তা নির্ভর করবে ব্যক্তি নির্বিশেষে।

সাম্প্রতিক এই আবিষ্কার থেকে এই রকম প্রশ্নও উঠে আসছে যে জীবন আসলে ঠিক কখন শেষ হয় - যখন হৃদপিন্ড থেমে যায় নাকি মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়? গবেষকদের মতে কেবল একটি ঘটনাকে সামনে রেখে এই প্রশ্নগুলির যথাযথ উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। এর জন্যে দরকার দীর্ঘ এবং জটিল বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার। তবে এইটুকু বলাই যায়, এই গবেষণা ধীরে ধীরে অনেক প্রশ্নের উত্তর দেবে আমাদের। এই আবিষ্কারকে ভিত্তি করে আমরা ভবিষ্যতে জানতে পারবো ঠিক কোন মুহুর্তে আমাদের জীবন শেষ হয়।

More Articles