এবার লিভ-ইন রেজিস্ট্রি না করলেই শাস্তি! কী বলা আছে বিজেপি সরকারের প্রস্তাবিত আইনে?

Live In Relation Registry : লিভ-ইন সম্পর্ক শুধুমাত্র একজন পুরুষ এবং একজন মহিলার মধ্যেই স্বীকৃত। এই আইনে সমকামী দম্পতিদের জন্য কোনও ঠাঁই নেই।

বিয়ে নয়, স্বাধীন সম্পর্কে থাকতে ইচ্ছুক? আইনের ঘেরাটোপে নয়, দু'জন দু'জনের সম্মতিতে একসঙ্গে ভালোবেসে জীবন কাটানোই লক্ষ্য? সে গুড়ে বালি পড়তে চলেছে সম্ভবত। বিয়ে না করে থাকতেই পারেন। লিভ-ইন সম্পর্ককে রাষ্ট্র দুরছাই করছে এমনও না। কিন্তু যা করার, বিয়ে হোক, লিভ-ইন হোক করতে হবে সরকারের নিয়ম মেনেই। অন্তত উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা হলে সম্ভবত অচিরেই লিভ-ইন সম্পর্কও আসতে চলেছে আইনের অধীনে। ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে বেশ কিছুকাল ধরেই কথাবার্তা হয়েছে। সেই বিধির মধ্যেই রয়েছে লিভ-ইন সম্পর্কের নানা বিধি ও শাস্তির কথা।
ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন উত্তরাখণ্ড সরকার মঙ্গলবার বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার এবং লিভ-ইন সম্পর্কের বিষয়ে ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) আকারে একটি নতুন আইনের প্রস্তাব করেছে। এই বিল অনুসারে, উত্তরাখণ্ডে যারা এখন লিভ-ইন সম্পর্কে রয়েছেন তাঁদের জেলা আধিকারিকদের কাছে নিজেদের সম্পর্কের রেজিস্ট্রি করাতে হবে। না করালে রাজ্যের ইউনিফর্ম সিভিল কোড বিলটি আইন হয়ে গেলে কারাদণ্ড পেতে হবে তাঁদের।

উত্তরাখণ্ডের লিভ-ইন সম্পর্কে থাকা মানুষদের জন্য ঠিক কী কী উল্লেখ করা রয়েছে ওই বিলে?

আরও পড়ুন- লিভ-ইন করলেও রেজিস্ট্রি করতে হবে এবার? অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে যা করতে চাইছে বিজেপি

কারা লিভ-ইন রিলেশনশিপে থাকতে পারেন?

বিষমকামী বা হেটেরোসেক্সুয়াল সম্পর্ক হতে হবে: অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে নির্দিষ্ট করে বলা আছে যে লিভ-ইন সম্পর্ক শুধুমাত্র একজন পুরুষ এবং একজন মহিলার মধ্যেই স্বীকৃত। এই আইনে সমকামী দম্পতিদের জন্য কোনও ঠাঁই নেই।

নির্দিষ্ট বয়স: লিভ-ইন সম্পর্কের রেজিস্ট্রি করাতে হলে পুরুষ এবং মহিলা, দু'জনকেই কমপক্ষে ২১ বছর বয়সের হতে হবে। যদি কারও বয়স, বা দু'জনেরই বয়স ২১-এর নীচে হয়, তাহলে বাবা-মা বা অভিভাবকদের তাঁদের সন্তানের লিভ-ইন সম্পর্কের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করা হবে।

কীভাবে লিভ-ইন সম্পর্কের রেজিস্ট্রি করা হবে?

লিভ-ইন সম্পর্ক রেজিস্ট্রি করানোর বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে:

বিবৃতি জমা দিতে হবে: লিভ-ইন সম্পর্কে থাকা দুইজনকেই স্থানীয় রেজিস্ট্রারের কাছে তাদের লিভ-ইন সম্পর্ক ঘোষণা করে একটি বিবৃতি জমা দিতে হবে। এই বিবৃতিটিই তাদের একসঙ্গে থাকার একটি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি হিসাবে কাজ করবে।

রেজিস্ট্রারের তদন্ত: রেজিস্ট্রার তারপর এই দু'জনের লিভ-ইন সম্পর্কের বিষয়ে একটি তদন্ত পরিচালনা করবেন। এই তদন্তে দুইজনকেই তলব করা হবে এবং তাদের সম্পর্কের সত্যতা যাচাই করার জন্য অতিরিক্ত তথ্য চাওয়াও হতে পারে।

ফলাফল: তদন্তের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, নিবন্ধক ৩০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন অনুমোদন বা অস্বীকার করতে পারেন। অস্বীকার করা হলে, প্রত্যাখ্যানের কারণ লিখিতভাবে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন- মহিলাদের জন্য কতটা নিরাপদ সারভাইক্যাল ক্যান্সারের টিকা? আতঙ্ক বাড়াবে ভ্যাকসিনের এই রহস্য

রেজিস্ট্রি না হলে কী হবে?

নোটিশ জারি: কর্তৃপক্ষ লিভ-ইন সম্পর্ক রেজিস্ট্রি করেননি এমন প্রেমিক-প্রেমিকাকে একটি নোটিশ জারি করতে পারে। এটি একটি আনুষ্ঠানিক সতর্কতা। কর্তৃপক্ষ নিজে থেকেই বা কোনও অভিযোগ পেলে এই নোটিশ জারি করতে পারে।

শাস্তি: নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যেও যদি এই রেজিস্ট্রি না করেন তাদের জরিমানা বা কারাদণ্ড সহ জরিমানা হতে পারে। রেজিস্ট্রেশন দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখা বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার জন্য শাস্তির তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে। নিয়ম না মানলে জেলের মেয়াদ ৬ মাস পর্যন্ত বাড়তে পারে এবং ২৫,০০০ টাকা জরিমানা হতে পারে।

লিভ-ইন সম্পর্ক থেকে বেরোতে চাইলে

লিভ-ইন সম্পর্ক শেষ করার জন্য নিজের সঙ্গী এবং রেজিস্ট্রারকে নোটিশ দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে যে আনুষ্ঠানিকভাবে এবং কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি মেনেই সম্পর্ক শেষ হচ্ছে। দুই পক্ষই সম্পর্ক ছিন্ন করার নোটিশ দিতে পারে।

মহিলা ও শিশুদের অধিকার

মহিলাদের জন্য খোরপোষ: একজন মহিলাকে যদি প্রেমিক ছেড়ে চলে যান, লিভ-ইন সম্পর্ক ভেঙে তাহলে ওই মহিলা খোরপোষ পাওয়ার অধিকারী যাতে সম্পর্ক পরবর্তী জীবনে তিনি নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য আর্থিক সাহায্য পান।

শিশুদের বৈধতা: লিভ-ইন সম্পর্ক থেকে জন্ম নেওয়া শিশুরা বৈধ বলেই বিবেচিত হবে, তাদের আইনি স্বীকৃতি এবং অধিকার থাকবে।

More Articles