লক্ষ্মীর ভাণ্ডার সত্যিই মহিলাদের 'ভিক্ষা'? কী বললেন মহম্মদ সেলিম?
Mohammed Selim CPIM: গত পাঁচ বছরে এই নিয়ে তিনটি ভোটে হারলেন সেলিম।
নির্বাচনী আবহে রাজ্য জুড়ে হাওয়া ছিল, বামেদের ফল আর যাই হোক না কেন, অন্তত মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রটি জিততে চলেছেন মহম্মদ সেলিম। মঙ্গলবার ভোটগণনা শুরু হতে তেমনটাই দেখাও যাচ্ছিল। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম সামান্য ভোটে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে এগিয়েছিলেন। কিন্তু বেলা বাড়লেই বদলাতে থাকে চিত্র। পিছিয়ে যান মহম্মদ সেলিম, ঝড়ের বেগে এগোতে থাকেন তৃণমূলের আবু তাহের খান। ফল ঘোষণা হতে দেখা যায় মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে আবু তাহের খান পেয়েছেন ৪৪.৩% ভোট আর সেলিম হয়েছেন দ্বিতীয়, পেয়েছেন ৩৮.৬% ভোট। রাজ্যে বামেরা এবারও সেই শূন্যই। তৃণমূল ২৯ টি আসন জিতেছে, বিজেপির আসন কমে ১২ আর কংগ্রেস পেয়েছে একটিই মাত্র আসন। ভোট বাক্সে প্রভাব না পড়ুক, ফেসবুকে সকলেই সিপিএম বলে যে চলতি লব্জ আছে, তা প্রমাণ হয়ে যায় গণনা শেষেই। তৃণমূলের দুর্নীতি সত্ত্বেও এই জয় কে 'ভাতা দিয়ে ভোট কেনা' বলে আক্রমণ করতে থাকেন ফেসবুক-সক্রিয় সিপিএমরা। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার যে আসলে ভিক্ষা, জোর গলায় বলতে থাকেন তারা।
শূন্য হওয়ার পরেও এই 'ঔদ্ধত্য' দেখে অনেকেই মনে করেছেন সংবেদনশীলতা হারিয়েছেন বামেরা। ১০০০ টাকা মহিলাদের দেওয়াকে ভিক্ষা নয় বরং প্রকৃত ক্ষমতায়ন বলে দেখতে অনুরোধ করেন কেউ কেউ। কেন বামেরা 'ক্ষমতায়নকে' 'ভিক্ষা' বলছেন? মহম্মদ সেলিম বলছেন, এই ফেসবুক বিপ্লবীরা বামপন্থী নন, তারা দলের সমর্থক মাত্র। সেলিম এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, "কেউ কেউ স্বঘোষিত বামপন্থী আছেন। স্বঘোষিত বিপ্লবী আছেন। আমরা তাঁদের বলি, ফেসবুকে বেশি বিপ্লবীয়ানা করবেন না। কেউ করে। এখানে সিপিআইএমের থেকে আশা করা যায় না যে, মহিলাদের সম্পর্কে বা এই ধরনের ভাতা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা নিন্দা করছে। কেন করবে? বামপন্থী আন্দোলন মানেই হচ্ছে গোটা বিশ্বে আমরা চাই যে, সরকার মানুষের অধিকার না দিতে পারার ক্ষতিপূরণ হিসাবে কিছুটা অন্তত ভর্তুকি দেবে।"
আরও পড়ুন- সিপিএমের ছায়াতেই বেড়েছে অর্জুনের শক্তি! কেন হারলেন ব্যারাকপুরের বাহুবলী?
তাহলে সিপিএম কি লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে ভিক্ষা মনে করছে না? সেলিমের বক্তব্য, "বাকি যারা এগুলি নিয়ে কটাক্ষ করছেন তাঁরা বামপন্থী নন, তাঁরা হতে পারেন সমর্থক। আমাদের দায় আমাদের কথা তাঁদের কাছে নিয়ে যাওয়া, আমাদের মাধ্যমগুলি দিয়ে বা সরাসরি তাঁদের কাছে গিয়ে। কেউ কেউ উগ্র সমর্থক আছেন। তাঁদের আমরা সমর্থক থাকতে বলব। উগ্রতা কমাতে বলব।’’
ফল প্রকাশের পর সেলিম বলেছিলেন, ‘‘অনেক বিজ্ঞান কাজ করেছে। সেগুলো বসে পর্যালোচনা করতে হবে। আমি মুর্শিদাবাদে নতুন। কিন্তু আমি আশা করেছিলাম অধীরবাবু জিতবেন। কিন্তু সেটা হল না।’’ বাংলায় সিপিএম নবীন-প্রবীণ দুই ধরনের প্রার্থীকেই রেখেছিল। কিন্তু সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, এম এম সাদিদের মতো প্রবীণ নেতাদের পাশাপাশি নবীন দীপ্সিতা ধর, সৃজন ভট্টাচার্য, সায়ন বন্দ্যোপাধ্যারাও হেরেই গেলেন। একমাত্র মহম্মদ সেলিম মুর্শিদাবাদে দ্বিতীয় স্থানে আছেন, বাকি সব জায়গাতেই প্রায় বামেরা তৃতীয়। গত পাঁচ বছরে এই নিয়ে তিনটি ভোটে হারলেন সেলিম। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জে হেরেছিলেন, ২০২১ সালে চণ্ডীতলা বিধানসভা কেন্দ্রে তৃতীয় হয়েছিলেন সেলিম। আর এবার মুর্শিদাবাদেও হেরে গেলেন সেলিম। কোনও আসনে বামেদের জামানয় বাজেয়াপ্ত হয়ে গেছে কিনা তা এখনও জানা যায়নি। তবে সেলিম এবং সুজন দু’জনেই তাঁদের আসনে জামানত রক্ষা করতে পেরেছেন।

Whatsapp
