আসলে অসংগঠিত শ্রমিকই! লবি, নিরাপত্তাহীনতার আড়ালে খাবি খান শিল্পীরা
Bengali Music Industry: চামড়া মোটা না হলে টাকার জন্য বাংলা গান করা যায় না — এ কথা একাধিক পেশাদারি শিল্পী বন্ধুকেই বলতে শুনেছি।
সম্প্রতি একজন খ্যাতনামা শিল্পীর আত্মহত্যার দুঃসংবাদ এসে পৌঁছেছে আমাদের অনেকের কাছে। তাঁর ভক্তরা, বন্ধুরা, এবং সহকর্মীরা স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত ভেঙে পড়েছেন। তবে এর পাশাপাশি যা চোখে পড়ার মতো, তা হচ্ছে এই আত্মহত্যার খবর নিয়ে মানুষের প্রতিক্রিয়া। কেউ তাঁর প্রাক্তন গানের দলকে দোষারোপ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন, যে দলের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ ঘটেছিল ২০১৮ সালেই। কেউ তুলছেন আমাদের শহরে (তথা দেশে) মানসিক স্বাস্থ্য এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মাদকের নেশা নিয়ে সচেতনতার অভাবের কথা। আবার সঙ্গীত জগতেরই কেউ কেউ প্রাণপণে এটিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছেন, এড়িয়ে গিয়েছেন বাংলা গানের বাজারের সাংগঠনিক সমস্যার কথা। এই গোটা বাকবিতণ্ডার ঝড়ে সেভাবে উঠে আসছে না একের পর এক শিল্পীর বা শিল্পকর্মীর আত্মহননের নেপথ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে আলোচনা, যে সমস্যার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের গানের দুনিয়া। অর্থনীতি এবং শিল্পীর শ্রেণি-পরিচিতি।
বাংলা গানের বাজার, অন্তত কলকাতায়, যে টাকাপয়সার অভাবে বেশ কিছুদিন হলো ধুঁকছে, তা সর্বজনবিদিত। বছর বারো আগেকার চিট ফান্ড কেলেংকারির ফলে এ তল্লাটে যে প্রবল ধাক্কাটি লেগেছিল, তার রেশ এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি সঙ্গীত জগতের অর্থনৈতিক ভারসাম্য। ফলে আধুনিক পুঁজিবাদের নিয়ম মেনেই এই সংকটের ভিতর থেকে এক অদ্ভুত বাইনারির সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে কিছু কর্পোরেট গোষ্ঠী পুঁজি এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার জোরে একরকমের মোনোপলি (monopoly) তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের ছত্রছায়ায় যাঁরা গান বাঁধেন, তাঁরা মূলত সিনেমার গানের হাত ধরে জীবিকানির্বাহ করতে পারছেন। সিনেমা, ওয়েবসিরিজ, সরকারি অনুষ্ঠান, অথবা পুরস্কার বিতরণী— সমস্ত ক্ষেত্রেই এই কর্পোরেট গোষ্ঠীর প্রায় একচেটিয়া শাসন চলে। ফলে একচেটিয়াভাবেই এ সব পরিসরে দেখা যায় কেবল ওই মুষ্টিমেয় কিছু শিল্পীদের, যাঁরা চুক্তির ভিত্তিতে একরকম লেঠেলের চাকরিই করেন এই মিডিয়া হাউজের জমিদারিতে।
আরও পড়ুন- সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইক-কমেন্ট না পেলেই বিষণ্ণ! চরম আসক্তির দায় আসলে কার?
অন্যদিকে, এই বাছাই করা শিল্পীদের ঝাঁ চকচকে দুনিয়াটির বাইরে, স্বতন্ত্র বাংলা গানের শিল্পীদের অর্থনৈতিক অবস্থা মোটেও ভালো নয়। তাঁদের সমস্যাটি শাঁখের করাতের মতো; যেতে কাটে, আসতেও কাটে। আজকের কলকাতায় একটি গানের অনুষ্ঠান করে একজন যন্ত্রশিল্পী বা ধ্বনি/আলো প্রক্ষেপকের কথা দূরে থাক, ব্যান্ড বা গানের দলের 'নায়ক' অর্থাৎ কণ্ঠশিল্পীরও গড়ে যে পারিশ্রমিক জোটে, তাতে সংসার চলে না। আবার সংসার চালানোর মতো যথেষ্ট রোজগার করতে হলে একজন শিল্পীকে প্রতি মাসে যতগুলো অনুষ্ঠান করতে হবে, ততটা পরিশ্রম নেবার ক্ষমতা মানুষের রক্তমাংসের শরীরে আছে বলে বিশ্বাস করা কঠিন। যদিও বা পেটের দায়ে সেই পরিশ্রম অনেকেই করেন, তাঁদেরও শান্তিতে কাজ করার সৌভাগ্য জোটে না। এবং ঠিক এখানেই আর পাঁচটি কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে বাংলা গানের বাজারের একটি বড় ফারাক রয়েছে, যেটিকে চিহ্নিত না করলে শিল্পীদের মানসিক অবসাদ, নেশা বা আত্মহত্যার খবর— কিছুরই হদিস পাওয়া যাবে না।
আধুনিক পৃথিবীতে যে কোনও কর্মক্ষেত্র, সে যতই ভয়ানক কর্পোরেট পুঁজিবাদী হোক না কেন, অন্তত দু'টি জিনিস তার কর্মীদের দিতে দায়বদ্ধ থাকে। প্রথমত, নিরাপত্তা। আজ যে চাকরি করতে যাচ্ছে, আগামিকাল সকালে উঠেই বিনা কারণে তার চাকরি চলে যাবে না, এইটুকু আশ্বাস কর্মক্ষেত্র তাঁকে দিতে দায়বদ্ধ। দ্বিতীয়ত, পেশাদারিত্ব। কর্মক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গে ন্যূনতম শিষ্টতা এবং সভ্যতার সঙ্গে ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি এবং তাঁর পেশাদারিত্বের বিনিময়ে তাঁর সঙ্গেও কর্মদাতার পেশাদারি সম্পর্কের প্রতিজ্ঞা। হ্যাঁ, বহু কর্মক্ষেত্রেই এই দু'টি নিয়ম মাঝেমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়। খাস কলকাতারই সাংবাদিকতা, কনসাল্টেন্সি বা বিজ্ঞাপনের জগতে আচমকাই বহু লোককে ছাঁটাই করে দেওয়া বা কর্মীদের সঙ্গে বসের কুৎসিত ব্যবহারের খবর কি আমরা পাই না? তবুও এগুলোকে আমরা সাময়িক বিচ্যুতি বলেই ধরে থাকি, মনে করে থাকি যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতাটাই স্বাভাবিক।
সঙ্গীত জগতের কর্মীরা এই বিলাসিতার সুযোগটুকু পান না। তাঁদের জগতে নিরাপত্তাহীনতাটাই দৈনন্দিন বিষয়। প্রতি মাসে জীবিকানির্বাহের জন্য যথেষ্ট অনুষ্ঠানের বুকিং পাওয়া যাবে কি না, সেই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা যথেষ্ট পারিশ্রমিক দেবেন কি না, প্রাপ্য টাকা কোথাও মার যাবে কি না— এই সমস্যাগুলো প্রতিনিয়ত মাথায় রেখেই তাঁদের কাজ করতে হয়। উপরন্তু, শিল্পীদের বহু ক্ষেত্রেই নিজেদের পকেট থেকে গাড়িভাড়া, 'রোডি'-র (যিনি শিল্পীকে যন্ত্রপাতি নিয়ে যেতে এবং স্টেজে সাজাতে সাহায্য করেন) হাতখরচ, রিহার্সালের ঘরভাড়া ইত্যাদি দিতে হয়ে থাকে। আর বাদ্যযন্ত্রের মূল্য তো আমাদের দেশে ক্রমবর্ধমান; প্রযুক্তিগত যে কোনও পণ্যের মতোই কিছুদিন অন্তর নতুন বাদ্যযন্ত্র, বা অন্তত তার অংশবিশেষ, না পাল্টালে টিকে থাকা যায় না। অধিকাংশ কর্মক্ষেত্র এক্ষেত্রে নিজেই তার কর্মীর খরচের ভার খানিকটা লাঘব করার চেষ্টা করে থাকে। হাজার হোক, কর্মী যেখানে একটি সংস্থার জন্যই কাজ করছেন, সেখানে তাঁর খরচাপাতির দায় খানিকটা নিজের কাঁধে নিলে সংস্থার লাভ বৈ ক্ষতি নেই। কিন্তু শিল্পীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনও উদ্যোক্তা বা ইভেন্ট ম্যানেজার বাদ্যযন্ত্র কিনে দিতে সাহায্য করছেন, এ দৃশ্য বিরল।
আরও পড়ুন- গুরু দত্ত থেকে চেস্টার বেনিংটন, চন্দ্রমৌলি! কেন বারবার জীবনের সুর হারাচ্ছেন শিল্পীরা?
আর পেশাদারিত্ব? শিল্পীদের সঙ্গে ব্যবহারে ও জিনিসটির কথা খুব বেশি মাথায় রাখা হয় না। শুধু দৈনন্দিন দুর্ব্যবহার, গালাগালি বা অপমানের কথা নয়— চামড়া মোটা না হলে টাকার জন্য বাংলা গান করা যায় না — এ কথা একাধিক পেশাদারি শিল্পী বন্ধুকেই বলতে শুনেছি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও, যেখানে স্বাস্থ্য বা জীবনের ঝুঁকি জড়িয়ে আছে, উদ্যোক্তাদের তরফ থেকে পেশাদারিত্বের আশ্চর্য অভাব বারবার চোখে পড়ে যায়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে জনপ্রিয় বাংলা ব্যান্ড ফসিলসের একটি অনুষ্ঠান নিয়ে সংবাদমাধ্যমে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়, কারণ ওই অনুষ্ঠানে যত মানুষের আসার কথা ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ব্যারিকেড ভেঙে ঢুকে পড়েন এবং ভিড়ের চাপে অনেকের প্রাণসংশয় হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ফলে ব্যান্ডকে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দিতে হয়। এই ঘটনার পরে সোশ্যাল মিডিয়া ভরে যায় ফসিলস ব্যান্ডের প্রতি বিরূপ মন্তব্য এবং অপমানে। অথচ এই গাফিলতির দায় ছিল আয়োজকদের; যে ব্যান্ড পেশাদারিভাবে এসে তাঁদের অনুষ্ঠানে গান গাইবেন, তাঁদের নিরাপত্তা দেবার মতো পেশাদারিত্ব আয়োজকদের ছিল না। তারা না সুরক্ষিত করতে পেরেছিলেন অনুষ্ঠান প্রাঙ্গনকে, না নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিলেন উন্মত্ত জনতাকে। বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যান্ডের সঙ্গেই যদি এই ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে যাঁরা নামী শিল্পী নন, তাঁরা কোন কোন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে পারেন, তা কল্পনা করা কঠিন নয়।
এবার প্রশ্ন উঠবে, কেন? অন্য যে কোনও কর্মক্ষেত্রে এমন ভয়ানক সমস্যা হলে কর্মী তো এইচআর বা মানব সম্পদ আপিসে নালিশ জানাতে পারেন বা আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা। অধিকাংশ শিল্পীর 'আপিস' নেই, নির্দিষ্ট কোনও সংস্থা নেই, তাই তাঁর সমস্যাগুলো আসলে অসংগঠিত শ্রমের সমস্যা। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে অসংগঠিত শ্রমিকদের নিরাপত্তা দেবার চ্যালেঞ্জ। আমাদের বোঝা প্রয়োজন, এককালের বামপন্থী রাজনীতিতে যে শ্রেণিকে সর্বহারা (proletariat) বলা হতো, আধুনিক নব্য-উদার পুঁজিবাদে তার জায়গা অনেকটাই নিয়ে নিয়েছে পরিযায়ী শ্রমিক সমাজ, যাকে অধ্যাপক দীপেশ চক্রবর্তী চিহ্নিত করছেন 'precariat' নামে।
আমাদের মূল সমস্যা এটাই যে, শিল্পীদের আমরা এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত বলে সচরাচর চিহ্নিত করি না কারণ 'বাংলা গানের শিল্পী' বলতে আমাদের মনে প্রায় রূপকথার গল্পের নায়কের মতোই ভাসা-ভাসা কিছু সেন্টিমেন্টের উদয় হয়। শিল্পী ভালো পোশাক পরেন, ভালো গাড়িতে চড়েন, পুরস্কার গ্রহণ করে ককটেল পার্টিতে যান, হাসিমুখে ফ্যানদের অটোগ্রাফ দেন— এই চিত্রকল্পগুলো আমাদের মজিয়ে রাখে। একজন ফুড ডেলিভারি শ্রমিক বা একজন পরিযায়ী রাজমিস্ত্রির সঙ্গে একজন স্বতন্ত্র বাংলা ব্যান্ডের শিল্পীর শ্রেণিগতভাবে আসলে যে কোনও তফাত নেই, তা আমরা মানি না কারণ, অন্তত কলকাতার গানের বাজারে শিল্পীদের আমরা 'ভদ্রলোক' বলে চিহ্নিত করি। তাঁদের অসংগঠিত শ্রমিক বলে ধরে নিতে আমাদের অস্বস্তি হয়।
আরও পড়ুন- বন্ধু-স্বজনের মনের খবর রাখে কে! ডিপ্রেশন নিয়ে বাস্তবে কতটা সচেতন আমরা?
এই অস্বস্তি না কাটালে এবং শ্রেণি-নির্ভর অর্থনৈতিক সমস্যার কথা সেই শ্রেণির পরিসরেই বুঝতে অপারগ হলে, মূল সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সত্যি বলতে, শহরের শিল্পীদের মধ্যে একটি অংশ নিজেরাই নিজেদের এই শ্রেণিচরিত্রের বিষয়ে যথেষ্ট অস্বচ্ছন্দ। তাঁরাও আসলে বিশ্বাস করতে চান তাঁরা 'জন-অসাধারণ'। এটা পুরোপুরি তাঁদের দোষ নয়; মানুষের বাস্তব জীবনে প্রায় কোনও নিরাপত্তা বা সাফল্য না থাকলে সে যে অলীক কল্পনাকে প্রাণপণে জড়িয়ে ধরবে, এ কথা রবীন্দ্রনাথ থেকে ফ্রয়েড— গুরুস্থানীয় অনেকেই লিখেছেন। অতএব আমাদের শিল্পীদের না জুটছে সংগঠিত কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা, না তাঁরা পারছেন বৃহত্তর অসংগঠিত শ্রমিকসমাজের সঙ্গে একজোটে লড়তে। এহেন ত্রিশঙ্কু হয়ে অনেকেই খুঁজে নিচ্ছেন একধরনের সামন্ততান্ত্রিক মধ্যপন্থা— বাংলা গানের বাজারের কুখ্যাত 'লবি' বা গোষ্ঠীর সদস্যপদ। গানের অনুষ্ঠান বা পুরস্কার বিতরণীর তালিকানির্মাণ থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদে কলকাতার রাস্তায় মিছিল— সবটুকুই তাঁরা করে থাকেন এই সর্বশক্তিমান 'লবি'-র অনুপ্রেরণায়। লবির ছায়ায় কোনও একজন অমুক-দা বা তমুক-দি গোত্রের শিল্পীর স্নেহধন্য হতে পারলে তাঁদের আংশিক নিরাপত্তাও মেলে এবং তাঁদের অনুষ্ঠানে বা মিছিলে যে শিল্পীরা পা মেলান না, অর্থাৎ তাঁদের ক্ষুদ্র লবির অংশ হতে অস্বীকার করেন, তাঁদের বিষয়ে মিলিতভাবে কুৎসা রটানো এবং ‘একঘরে’ করার প্রচেষ্টাই হয়ে ওঠে তাঁদের মূল পাথেয়। কাজেই ঐক্যবদ্ধভাবে শিল্পীসমাজের নিজের শ্রমের অধিকার বুঝে নেবার কোনও সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় এখানেই। এই তথাকথিত ‘লবিবাজি’ যে আখেরে এঁদেরই ক্ষতি করে এবং বৃহত্তর সমাজের চোখে এঁদের ন্যায্য কারণেই বিরক্তি এবং অশ্রদ্ধার পাত্র করে তোলে, সে কথা এ মুহূর্তে এঁদের বোঝানো কঠিন। কারণ, এঁরা নিজেদের অসংগঠিত শ্রমিক পরিচিতিকে মেনে নিতে নারাজ।
যে প্রয়াত শিল্পীর কথা বলে শুরু করেছিলাম, তাঁর কথা বলেই শেষ করি। তাঁর আত্মহত্যার খবর যখন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তখন দু'টি কথা ঘুরেফিরে বহু সংবাদপত্র এবং পোর্টালেই চোখে পড়ছিল। প্রথমত, এই শিল্পীর বিপুল সংখ্যক ভক্ত বা 'ফ্যান' ছিলেন, যাঁরা বহুদিন ধরেই তাঁর সঙ্গীত পাগলের মতো ভালোবাসেন। দ্বিতীয়ত, শিল্পী বহুদিন অর্থকষ্টে ভুগছিলেন, রোজগার নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল তাঁর। আপাতদৃষ্টিতে এই দু'টি খবরের সহাবস্থান অসম্ভব মনে হতে পারে। একজন শিল্পীর যদি অনেক ভক্ত, অনেক শ্রোতা থাকে, তবে রোজগারের সমস্যা তাঁর থাকবে কেন? অনেক ভক্ত=অনেক রোজগার সমীকরণটি যে বাস্তবে খাটে না, তার কারণ আমাদের অনুধাবনের শিকড়ে জড়িয়ে থাকা একধরনের দ্বিচারিতা। আমরা শিল্পীর ফ্যানের হিসেব করি তাঁকে 'এলিট' সমাজের একজন তারকা বা নায়কের ভূমিকায় কল্পনা করে কিন্তু এড়িয়ে যাই তাঁর বাস্তব অর্থনীতির অসংগঠনের বিষয়টি, যেটি তাঁকে সুস্থভাবে রোজগার করার পথে বাধা দিয়ে থাকে।
মানসিক অবসাদ হোক, বা মাদকদ্রব্যের সমস্যা, তার মূলে বাংলা গানের জগতে আসলে রয়েছে শিল্পীদের অসংগঠিত শ্রেণিচরিত্র এবং তাকে মেনে নিতে না পারার সমস্যা। এর সমাধান কোন পথে আসবে, কবে আসবে— তা বলা মুশকিল। তবে 'নায়ক/রকস্টার/তারকা' নামক রঙিন চশমাগুলি খুলে এর সমাধান যে শিল্পীদেরই খুঁজে নিতে হবে, সে বিষয়ে আর সন্দেহের অবকাশ নেই।
আশঙ্কা একটাই, বেশি দেরি না হয়ে যায়।