ফসল ফলিয়েও অপুষ্টিতে ভুগছে কৃষকদের সন্তানরাই! যেভাবে লড়ছে অসমের জনজাতিরা

Dhemaji Assam: মরশুমি ফল জলপাই, আম, কুল, কামরাঙার আচার বানিয়ে রাখা থাকে। বন্যার দিনে সে সব দিয়ে ভাত খাওয়া হয়।

আজারবারি গ্রামের জুনালি হাজং জানেন যে তাঁর মেয়ে জীবনের প্রথম দুই বছরে পুষ্টিকর খাবার পায়নি; “সবাই আমাদের বলেছিল মেয়েকে স্বাস্থ্যকর খাবার দিতে”। আজ অসমের ধেমাজি জেলার ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরবর্তী গ্রামের যে কোনও শিশুর মায়ের এই একই অনুভূতি। “আমাদের কিছু করার ছিল না, সুষম পুষ্টিকর খাবার কিনে খাওয়ানো আমাদের সাধ্যের বাইরে ছিল। আগে শিশুরা অপুষ্টির শিকার হতো না। আমাদের চাষজমিতে কাজ থাকলে এত অভাব হয় না।” গুয়াহাটি থেকে ৪৩০ কিলোমিটার দূরে, অসমের পূর্ব প্রান্তে ধেমাজি জেলা ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরের বন্যাকবলিত গ্রামে জুনালির বসবাস। এর উত্তরে ও পূর্ব সীমান্তে অরুণাচল প্রদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে অসমের বন্যার গতিপ্রকৃতি; বন্যার মাত্রা অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। বন্যার প্রকোপ, বর্ষাকালে খরা, বর্ষা পেরিয়ে অতিরিক্ত বৃষ্টি এখন সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীর নাব্যতা কমেছে, নদীর ভাঙন বেড়েছে। নদীর অনুর্বর চাপড় তৈরির প্রবণতা আরও বেড়েছে। অসমের ধেমাজি, মাজুলি, লখিমপুর জেলা সবচেয়ে খারাপভাবে হড়পা বান আর দীর্ঘ বন্যা কবলিত। অসম রাজ্যের হাজার হাজার হেক্টর কৃষিজমি প্রতি বছর বন্যার কবলে পড়ে, যার ফলে কৃষিজীবী গোষ্ঠী চরম অর্থ সংকটে পড়ে। বন্যা, ক্ষয়প্রবণতা ও খরার প্রকোপে এই অঞ্চলের ৮০% মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করেন।

ধেমাজি জেলাকে বলা হতো ‘রাইস বাউল’ অর্থাৎ ধানের গোলা। সর্বাধিক ধান উৎপাদনকারী অঞ্চল ছিল। মিসিং, হাজং, সেনোয়াল, বোরো, নেপালি জনজাতির কৃষিজীবী মানুষের বসবাস। বিগত দশক ধরে বছরে তিনবার করে বন্যায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ও কৃষিজমি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। গবাদি পশু আর ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র ভেসে গেছে। বন্যা আর বালি জমা হওয়ার মতো যুগ্ম সমস্যা চাষাবাদকে অত্যন্ত কঠিন করে তুলেছে এবং বছর বছর ধান চাষের এলাকা কমে আসছে। এই কৃষক পরিবারগুলি আর আগের মতো কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং শাকসবজির সুষম খাবারের পদ প্রতিদিন খেতে পারে না। “আমরা কেবল সবজি বা ফলমূল এবং দুধ কিনতাম, কারণ আমাদের কাছে শস্য ছিল” জুনালি বলেন।

“আমাদের খাদ্যাভ্যাস বদলে গেছে। রিলিফ ক্যাম্পে সুজি, ছাতু আমাদের খাদ্যাভাসে যুক্ত হয়েছে। কমিউনিটি হলে আমার ঘর শিফটিং করে রাখা আছে। বন্যা আসার আগে ঘর ভেঙেছি আর শেষ তিন বছরে পাঁচবার ঘর বানিয়েছি”, বলছেন শিলাপাথর থেকে প্রায় চল্লিশ কিমি দূরে মিসিং জনগোষ্ঠীর বসতি মেদিপামুয়া গ্রামের কৃষক বিজয় পাইট। বন্যার জল নেমে গেলেও চাষাবাদের কাজে তারা ফিরতে পারছেন না। তিনি জানান, “প্রথম প্রথম বন্যার জল নেমে যাওয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম যে ফসলের জমি থেকে জল নেমে গেলে বন্যাবাহিত পলি পড়ে জমি খুব উর্বর হবে। কিন্তু যে পরিমাণে বালি জমা করে গেল নদী তা চাষজমির জন্য সর্বনাশী। আমাদের জীবিকাটাও কেড়ে নিল।” পালটে যাওয়া বন্যার গতিপ্রকৃতি বন্যার কোনও গুণাগুণ নিয়ে আর আসে না। সবটাই সর্বাত্মক ভয়ঙ্কর।

আরও পড়ুন- ধ্বংস হয়েছে ১০০ কোটি টাকারও বেশি সম্পত্তি, পথে বসেছে মানুষ, যে হাড়হিম ছবি দেখাল ২০২২

১৫-২০ বছর আগেও কৃষিকাজ এতটা চাপের ছিল না, মনে করেন মেদিপামুয়া গ্রামের কৃষক লক্ষীনাথ। তিনি বলছেন, “আমাদের সমস্যা ছিল। তবে অতিবৃষ্টি এখানকার সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল না; আগের মতো হালকা বৃষ্টি এখন আর নেই। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে সঠিক ফসল পেতে পারেন?” আগে এক এক মরসুমে এক এক ধান উৎপাদন করা হতো। শীত, শরৎ, বর্ষায় ভিন্ন ভিন্ন ফসল চাষ করা হত কিন্তু এখন সঠিক সময়ে বৃষ্টির জল কমে যাওয়ায় বেশির ভাগ এলাকায় আর তা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি জানান, “আমাদের চাষজমি থাকা সত্ত্বেও আমাদের পরিবারের ছেলেরা অভিবাসী শ্রমিকে পরিণত হচ্ছে। অন্যত্র অন্যের জমিতে মজুর কিংবা শহরে নির্মাণ কাজের শ্রমিক হতে বাধ্য হচ্ছে।”

বালি জমা হওয়ার ফলে এই অঞ্চলে ধান চাষের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। নদী উপকূলবর্তী গ্রামগুলিতে বন্যার জলে বয়ে আনা বালি সঞ্চয় এক দীর্ঘমেয়াদি কুপ্রভাব। বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীগুলি বালি মিশ্রিত কম উর্বর পলি বয়ে আনে, জমির ক্ষয় হয়। বন্যার পরে সমস্ত এলাকা শুকনো মরুভূমিতে পরিণত হয় যেন। স্থানীয় সম্প্রদায়ের উপরে বন্যার প্রভাব নিয়ে গবেষণারত এক বেসরকারি সংস্থা ‘রুরাল ভলেন্টিয়ার সেন্টার’-এর গবেষক রবীন্দ্রনাথ বলেন, “অরুণাচল প্রদেশের পাহাড়ে ও নদী পথ ধরে সাম্প্রতিক বছরে উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপক নির্মাণ, এছাড়াও অপরিকল্পিত নির্মাণ, রাস্তা, বাঁধ, সেতু ইত্যাদির ফলে স্বাভাবিকভাবেই নদীগুলির বালি বয়ে আনার প্রবণতা আরও বাড়ছে। আগামীতে এই অঞ্চলে বন্যা আরও বাড়বে।” ব্রহ্মপুত্র নদী তিব্বতে ৩০০০ মিটার উচ্চতা থেকে পাসিঘাটে ১৫০ মিটারেরও কম উচ্চতায় নিমজ্জিত হয়। নদী ঢালের আকস্মিক পতন ঘটে। তারপর অসমে প্রবেশ করে যার ফলে উপনদীগুলি সমতলের নদীকুলবর্তী অঞ্চলে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে।

আশ্চর্যের বিষয়, ভাতবর্ষের সীমিত কিছু অঞ্চলে গভীর জলের চাল (Deep Water Rice) জন্মায়, তার মধ্যে অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার ধেমাজি জেলা অন্যতম। অথচ এখানকার স্থানীয় কৃষক পরিবারের মা, মেয়ে, শিশুদের পুষ্টিই আজ সংকটে। Deep Water Rice বা গভীর জলের চাল স্থানীয়ভাবে বাও ধান নামে পরিচিত। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা এলাকায় বন্যার জমা জলে প্রাকৃতিকভাবে এই ধান জন্মায় যা বন্যাপ্রবণ দরিদ্র কৃষকদের কিছুটা অর্থনৈতিক স্বস্তি দেয়। ধেমাজিতে এখনও বহু প্রজাতির ধান উৎপন্ন হয়। ধেমাজি স্টেশনেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টলে সুগন্ধি জোহা চাল, বোরা চাল, শালি চাল, আহু চাল, কালো চাল, লাল চাল, ভজা চাল যা গরম জলে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে খেতে হয়, এই সব প্রজাতির চাল উপলব্ধ। এটি সত্যই আশা ব্যঞ্জক। এই ধরনের চালের গুণমান এতই বেশি যে এক অন্নই বিচিত্র ব্যাঞ্জনের অভাব মেটায়। বাও ধান জৈব প্রকৃতির হওয়ায় অন্যান্য উন্নত ধানের জাতগুলোর তুলনায় এর পুষ্টিগুণ বেশি। বাও ধানের উপরে এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, অসমে আনুমানিক ১০০,০০০ হেক্টর বাও ধানের জমি আছে। অথচ “আজ পর্যন্ত গভীর জলের চালের (DWR) উৎপাদন উন্নত করার জন্য কোনও পদ্ধতিগত প্রচেষ্টা করা হয়নি।” একদিকে সমৃদ্ধ ধানের ভাণ্ডার আর অপরদিকে চরম দারিদ্রের বাস্তবতার কারণ বুঝতে অসুবিধা হয় না।

ইউনিসেফ এই অঞ্চলের সরকারের পঞ্চায়েত ব্যাবস্থা, স্থানীয় বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বন্যা মোকাবিলা, বন্যা প্রস্তুতিতে সাহায্য করে, রিলিফ ক্যাম্প পরিচালনায় সহায়তা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, বিকল্প জীবিকা প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করে। ইউনিসেফের সহযোগী স্থানীয় সংস্থার পরিচালক ও বন্যার প্রভাব নিয়ে অধ্যয়নরত লুইত গোস্বামী বলছেন, “বিভিন্ন সংস্থা উর্বর মাটি ফিরিয়ে আনা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে কিন্তু এটি একটি দীর্ঘ টানা প্রক্রিয়া। ধেমাজি জেলার বন্যা-আক্রান্ত সম্প্রদায়গুলি প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জুড়ে থাকা কঠোর পরিশ্রমী মানুষ। যদি তাদের একটি দরজা বন্ধ হয়ে যায়, তারা বেঁচে থাকার অন্যান্য উপায় তৈরি করে। তারা এখন রবি ও অর্থকরী ফসল উৎপাদন করছেন।” সরষে, আলু, সবুজ মটর, রসুন এবং মটরশুটির মতো কিছু অর্থকরী ফসল বন্যা কবলিত গ্রামগুলিতে চাষ করা হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে লুইত গোস্বামী বলছেন, “এগুলি কম সময়সাপেক্ষ এবং তারা দ্রুত লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন।” তিনি আরও জানান, ২০১৮ সাল থেকে বোগিবিল সেতু, ধেমাজি এবং ডিব্রুগড়কে সংযুক্ত করেছে। তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড়, জোড়হাট এবং নাগাল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা সরাসরি ধেমাজির স্থানীয় গ্রামীণ কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কিনে নিচ্ছেন। প্রান্তিক কৃষকরা হাতে টাকা পাচ্ছেন।

আজারবাড়ির অঙ্গনয়াড়ি কর্মী ও ক্ষুদ্র কৃষক প্রভাবতী হাজং জানিয়েছেন, “এখন বন্যার জল নাই। এ বছর রাজমা, মটর, শশা, আলু, বরবটি এগুলি লাগানো হয়েছে। এখন বৃষ্টি দরকার, বৃষ্টি হচ্ছে না, ফসল মরে যাচ্ছে। বৃষ্টির বিষয়টাও পুরো গণ্ডগোল হয়ে গেছে। আগে এখানে সুন্দর ফসল হতো এখন আর হচ্ছে না। আমরা সার ব্যাবহার করি না, বিনা সারে সব চাষ হয়। এখন আমাদের মধ্যে কেউ কেউ সার ব্যবহার করা শুরু করছে।” বৃষ্টিপাত অনিয়মিত হওয়ায় এই ফসলের চাষেও সমস্যা রয়েছে। কৃষকরা যথাযথ সেচ সুবিধা প্রদানের জন্য জেলা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করেছেন। এই এলাকায় সেচের উল্লেখযোগ্যভাবে অভাব রয়েছে। এরই মধ্যে বন্যা মোকাবিলার সমবেত প্রয়াস। রিলিফ ক্যাম্পের সীমানা জুড়ে তিন-চার ফুট জায়গায় শাক সবজির গাছ লাগানো হয়েছে, লাউ, শিম, শশা আর বেশ কিছু শাক হয়েছে। প্রভাবতী বললেন, এই গাছগুলি সবাই লাগায়, বন্যার সময় গ্রামবাসী যার যার দরকার তারা এখান থেকে সবজি নিয়ে যেতে পারেন। কমিটি আছে, কমিটির তরফ থেকে সব ফসল বিতরণ করে দেওয়া হয়। মাছ ধরা হলে ভাগ করে দেওয়া হয়, “ধরুন যার রান্নার জন্য মাছ নাই, তাকে আমি মাছ দেব, আমার যেদিন থাকবে না আমাকে অন্যরা দেবে। বেশি মাছ ধরা পড়লে ভাগাভাগি করে দেয় কমিটি।”

আরও পড়ুন- ইউনিসেফের বিস্ফোরক রিপোর্ট! কয়েক বছরেই তাপপ্রবাহের বলি হবে শিশুরা

এছাড়াও সারা বছর চলে ফল সবজি মজুত রাখার আয়োজন। মরশুমি ফল জলপাই, আম, কুল, কামরাঙার আচার বানিয়ে রাখা থাকে। বন্যার দিনে সে সব দিয়ে ভাত খাওয়া হয়। মূলো, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, চাল কুমড়ো ইত্যাদি সবজি শুকিয়ে রাখেন বন্যার দিনগুলোয়; এগুলিই সম্বল। গরম জলে ভিজিয়ে রেখে তারপরে এই শুকনো সবজিগুলি রান্না করা হয়। প্রভাবতী জানান, “সোয়াবিন যেমন করে ভিজিয়ে নিতে হয় তেমনভাবে শুকনো সবজি ভিজিয়ে রাখতে হয়। কিছুক্ষণ পরে তাজা সবজির মতোই প্রায় হয়ে যায়। তারপরে পেঁয়াজ রসুন দিয়ে রান্না করি। কখনও মাছ দিয়ে এই সবজি রান্না করা হয়। বন্যার সময় তো সবজি কিনে খাওয়ায়র পয়সা থাকে যায় না আর ত্রাণে সবজি দেওয়াও হয় না। এগুলি আমরা ঘরের বাচ্চাদের খাওয়াই।” আলু, পেঁয়াজ, রসুন সবাই কম বেশি চাষ করে তাই ওগুলো মজুত করে রাখা থাকে। ফার্মেন্টেড খাবার বা জারিয়ে খাবার খাওয়ার পদ্ধতি জনজাতির মধ্যে বহুদিনের চল। এই পদ্ধতিতে যথেষ্ট পরিমাণে প্রো-বায়োটিক পেয়ে যায় শরীর। সংকটকালে বেঁচে থাকার কৌশল বদলে বদলে অভিযোজিত হতে হতেই টিকে থাকার লড়াই চলে।

বন্যা চরিত্র বদলে বার বার আসবেই। ধীরে ধীরে পুষ্টি, খাদ্যের গুণমান কমে যাচ্ছে। মিসিং, হাজং জনজাতির মানুষরা যে উপায়ে বন্যার সময়ে অভাবের মধ্যেও পুষ্টি ও খাদ্যের সরবরাহ বজায় রাখতে পারতেন সেই উপায় টিকিয়ে রাখা ক্রমশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ বলছেন, "আমরা বলতে পারি না যে এখানে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এ বিষয়ে কোনও বড় গবেষণা লব্ধ তথ্য নেই। তবে মানুষ ধীরে ধীরে অপুষ্টি জনিত ব্যাধি আর মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে কারণ মানুষ ভালো খাবার খেতে পারছে না। পুষ্টি আর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে দ্রুত।”

প্রকৃতির কোলে স্বল্প প্রয়োজন নিয়ে যে জনপদ অতি পরিশ্রম করে প্রকৃতির খামখেয়ালি মেজাজ বুঝেই এতদিন টিকে ছিল, এখন তাদেরই বেলা শেষে নিজগৃহে শাক মাত্র পাক যেন বাহুল্য। প্রকৃতির উপর অপরিণামদর্শী পীড়ন আজ পালটা জবাব দিচ্ছে। তার প্রথম বলি হচ্ছেন প্রকৃতির বুকে থাকা জনজাতিই। অদূর ভবিষ্যতে এই প্রকোপ সর্বব্যাপী আর আগ্রাসী হতে চলেছে। জলবায়ু সচেতন কর্মীদের বিক্ষোভ ও সতর্কবার্তার দিকে নজর রাখলেই এ নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকে না। শুধু নাগরিক উন্নয়নের চাহিদা, অজ্ঞানতা ও লোভ প্রকৃতি-মানুষের শান্তিপূর্ণ সহস্থানকে অমান্য করছে। অগ্রাহ্য করছে সম্পদ, মানুষের দক্ষতা, জ্ঞান ঐতিহ্যকে। অসমের এই অঞ্চলের শিশুর পুষ্টির ঘাটতি, শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা, প্রথাগত বৃত্তির অনিশ্চয়তা নিয়ে ধানের উপর ঢেউ খেলে যাওয়া বাতাস আর বয়ে যায় না। বয়ে যায় প্রজন্মের দীর্ঘ নিঃশ্বাস।

 

More Articles