ফের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারেই আস্থা! কেন মমতাকে সবচেয়ে বেশি ভোট দেন মহিলারা?

Laxmir Bhandar WB State Budget 2024 : অদ্ভুতভাবে দেখা গিয়েছে মমতাকে পছন্দ করেন আদিবাসী, উচ্চবর্ণ ও মুসলিম মহিলারা। অথচ তাঁদের স্বামীরাই হয়তো ভোট দিচ্ছেন বিজেপিকে।

বাংলার মানুষ বাংলায় নিজের মেয়েকেই চায়। এই ন্যারেটিভের প্রচার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করে দিয়েছেন অনেকদিন ধরেই। বাংলার এই মেয়ে বাংলার মহিলাদের ভোটও চান। মহিলাদের কল্যাণে তৈরি রাজ্যের একাধিক প্রকল্প তারই প্রমাণ। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, মাসে মাসে ৫০০ টাকা মমতার মহিলা ভোট টানার যে সফল অস্ত্র তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। রাজ্য বাজেটে, ভোটের বাজারে এবার সেই ৫০০ টাকাকে একধাপে বাড়িয়ে করা হলো ১০০০ টাকা। রাজ্যের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে ২ কোটি ১১ লক্ষ মহিলা আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছে তৃণমূল সরকার। মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বাজেট পেশ করে জানান, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে তপশিলি জাতি এবং জনজাতির শ্রেণির জন্য আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মাসিক টাকা এবার ১০০০, আর জনজাতির মহিলারা ১০০০ টাকার জায়গায় পাবেন ১২০০ টাকা।

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে এই ফেব্রুয়ারি মাসেই চালু হয় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প। এই প্রকল্পে রাজ্যের ২৫ থেকে ৬০ বছর বয়সি মহিলারা রাজ্য সরকারের কাছে থেকে আর্থিক সহায়তা পান। রাজ্যে বসবাসকারী যে কোনও পরিবারের মহিলা সদস্য এই সুবিধা পেতে পারেন। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে তাই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারখানিই এগিয়ে দিলেন মোক্ষম চাল হিসেবে। এই প্রকল্পে আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে রাজ্য সরকার। মে মাস থেকে থেকে এই ১০০০ টাকা করে পেতে শুরু করবেন মহিলারা। রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে অতিরিক্ত ১,২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে এই প্রকল্পের জন্য। এখানেই শেষ না ৬০ বছর বয়স হয়ে গেলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পেতেন যে মহিলারা তারা সরাসরিই বার্ধক্য ভাতার আওতায় চলে আসবেন।

আরও পড়ুন- এক মাসের ব্যবধানে দু’বার ডিএ! ভোট-বাজারে নিশানায় রাজ্য সরকারি কর্মীদের মন?

বরাবরই সব রাজ্যেই মহিলাদের মন পাওয়ার মরিয়া চেষ্টা করেন রাজনৈতিক নেতারা। তৃণমূলও করে এবং তা একেবারে নিজস্ব সংগঠনের মুখ হিসেবে মহিলাদের সামনে নিয়ে আসা থেকেই শুরু হয়। বিভিন্ন জেলায় জেলা সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্বে আনা হয়েছে মহিলাদের। আর মহিলাদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প তো রয়েইছে। মধ্য প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনেও তুরুপের তাস ছিল 'লাডলি বহেনা' প্রকল্প'। অন্তর্বর্তী বাজেটে নির্মলা সীতারমণও এবার লাখপতি দিদি প্রকল্পের কথা বারবার তুলে ধরেছেন। রাজ্যে মহিলাদের মন পেতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প তাই এবারের ভোটে ব্যবহার করতেই হতো মুখ্যমন্ত্রীকে। বাংলার ভোটারদের প্রায় অর্ধেকই মহিলা৷ পুরুষ ভোটার প্রায় ৩ কোটি ৭৩ লাখ, মহিলা ভোটার প্রায় ৩ কোটি ৫৯ লক্ষ৷ ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এই মহিলাদের ৮১.৭ শতাংশই ভোট দিয়েছেন৷ সুতরাং মাসে মাসে ৫০০ টাকা বাড়িয়ে এই ভোট নিজেদের দখলে রাখার চেষ্টা করতেই হতো তৃণমূলকে৷

অদ্ভুতভাবে দেখা গিয়েছে মমতাকে পছন্দ করেন আদিবাসী, উচ্চবর্ণ ও মুসলিম মহিলারা। অথচ তাঁদের স্বামীরাই হয়তো ভোট দিচ্ছেন বিজেপিকে। একটি সমীক্ষা বলছে, আদিবাসীদের মধ্যে, পুরুষ এবং মহিলাদের ভোটের পছন্দের ফারাক প্রবল। আদিবাসী পুরুষদের ১৮% বিজেপিকে পছন্দ করছে আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে বেছে নিচ্ছে আদিবাসী মহিলাদের ১১ শতাংশ। দলিতদের মধ্যে আবার পুরুষদের মধ্যে বিজেপি ২৪ শতাংশ এগিয়ে ছিল কিন্তু দলিত মহিলাদের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ।

আরও পড়ুন- ভোটের আগেই রাজ্যে রাজ্যে কল্পতরু মোদি! ‘বঞ্চনা’-র ভাগ্য বদলাবে বাংলার?

মুসলিম মহিলারাও মমতার ভোটার। মুসলিমরা লিঙ্গ নির্বিশেষেই তৃণমূলকে বেশি পছন্দ করে। তাই বিশেষ করে নিম্ন আয়ের গোষ্ঠীর মধ্যে আদিবাসী, উচ্চবর্ণ এবং কিছুটা দলিত শ্রেণির মধ্যে মহিলাদের ভোট বড় ফ্যাক্টর।

গত কয়েক বছর ধরে কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া ভারতের কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নেতৃত্বে কোনও মহিলা নেই। রাজনীতিতে সরাসরি নেতৃত্বে মহিলাদের অংশগ্রহণ এখনও কম। সম্ভবত মমতার বিপক্ষে লড়াকু নেত্রী হিসেবে তাই মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের নাম তুলে আনার চেষ্টা করছে বামেরাও। মোদি সরকার তিন তালাককে 'অপরাধ' করে দিয়ে মুসলিম মহিলাদের ভাগ্য ফেরানোর চেষ্টার দাবি করলেও বিজেপি এখনও মহিলাদের মধ্যে, বিশেষ করে বাংলার মহিলাদের মধ্যে একেবারেই জনপ্রিয় নয়।।

পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের জন্য স্থানীয় সংস্থায় ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করে মমতা কিন্তু মহিলাদরদি হিসেবে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ করেছেন। তৃণমূল থেকে ২০১৯ সালে লোকসভায় অনেক সংখ্যক মহিলা সাংসদ গিয়েছেন, প্রত্যেকে নিজের মতোই সোচ্চার। তৃণমূলের ভোটারদের প্রায় ৪৮.৫% মহিলা এবং এই মহিলাদের জন্য কন্যাশ্রী প্রকল্প, রূপশ্রী প্রকল্প, সবুজ সাথী প্রকল্প ঢেলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই এবারও লোকসভা নির্বাচনে মমতার ভাগ্য ফেরাতে পারেন মহিলারাই।

More Articles