ভোটের আগেই রাজ্যে রাজ্যে কল্পতরু মোদি! 'বঞ্চনা'-র ভাগ্য বদলাবে বাংলার?

PM-JANMAN Scheme: দেশের প্রান্তিক এবং বিপন্ন জনজাতি (পার্টিকুলারলি ভারনারেবল ট্রাইবাল গ্রুপস)-র কাছে সমস্ত ধরনের সুবিধা পৌঁছে দিতে বিপুল বরাদ্দের একাধিক কর্মসূচী নিল কেন্দ্র। যার নাম দেওয়া হয়েছ 'প্রধানমন্ত্রী জনমন' প্রকল...

অযোধ্যায় রামমন্দির গড়া হচ্ছে। আসছে সপ্তাহেই তার উদ্বোধন। দেশ জুড়ে সাড়া পড়ে গিয়েছে। রামমন্দিরের উদ্বোধন বলে কথা। নেতামন্ত্রীদের চোখের ঘুম উড়েছে। উদ্বোধনে জমায়েত হতে পারে কয়েক লক্ষ লোকের। নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই পুলিশ-প্রশাসনের। এরই মাঝে নিন্দুকরা বলছেন, রামের গৃহ গড়ে দিতে দেশে এত সাজো সাজো রব। এদিকে গরিব প্রজার জন্য কোনও প্রকল্পের ঘোষণা নেই! তার মধ্যে এ বছরই আবার লোকসভা ভোট। তবে নিন্দুকদের সেই কথা হাটের মাঝে পড়ার আগেই তড়িঘড়ি সেই পথ বন্ধ করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশের প্রান্তিক এবং বিপন্ন জনজাতি (পার্টিকুলারলি ভারনারেবল ট্রাইবাল গ্রুপস)-র কাছে সমস্ত ধরনের সুবিধা পৌঁছে দিতে বিপুল বরাদ্দের একাধিক কর্মসূচী নিল কেন্দ্র। যার নাম দেওয়া হয়েছে 'প্রধানমন্ত্রী জনমন' প্রকল্প। ঘর গড়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় কেন্দ্র প্রথম ধাপে বরাদ্দ করেছে প্রায় ৫৪০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যেই এক লক্ষ সুবিধাভোগীর জন্য বরাদ্দের প্রথম কিস্তি দিয়েও দিয়েছে কেন্দ্রসরকার। তা দিয়ে গড়া হবে পাকা ঘর। 

চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই ওই কর্মসূচি পালিত হবে কেন্দ্রীয় ভাবে। তেমনটাই জানানো হয়ে কেন্দ্র সরাকের তরফে। সেই অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে পারেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। ইতিমধ্যেই দেশের ক্যাবিনেট সচিব ভার্চুয়াল বৈঠক করে কর্মসূচিটি বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। সে বৈঠকে ছিলেন নানা রাজ্যের শীর্ষ আমলারাও। জানা গিয়েছে, বিপুল টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে এই কর্মসূচীর পিছনে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ সমস্ত রাজ্যগুলিকেই যুক্ত করা হয়েছে এই কর্মসূচীর আওতায়। ভার্চুয়াল বৈঠকে হাজির ছিলেন এ রাজ্যের আমলারাও।

আরও পড়ুন: কোটি কোটি টাকা নয় ছয়! আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের নামে আসলে কী চলছে দেশে?

রামমন্দিরের উদ্বোধন হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত দিয়ে। রাষ্ট্রপতি দেশের শীর্ষতম পদ হলেও সে দায়িত্বটি সারবেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। এ ব্যাপারটি নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। কেউ কেউ বলছেন, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আদিবাসী সম্প্রদায়ের হওয়ার জন্যই কি এই বাধা। এই বিতর্কের মধ্যেই দেশের পিছিয়ে থাকা প্রান্তিক ও জনজাতির জন্য় নতুন কর্মসূচী গ্রহণ করে ফেলল কেন্দ্র। বুঝতে অসুবিধা হয় না, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই এই সিদ্ধান্ত। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, ভোটে জনজাতি গোষ্ঠীভুক্ত ভোটারদের মন পেতে আগে থেকেই কোমর বেঁধেছে বিজেপি সরকার। ইতিমধ্যেই তার একটি ধাপের কাজ সেরে ফেলেছে তারা। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে জনজাতিভুক্ত ও পিছিয়ে পড়া মানুষজনকে তুলে এনেছে তারা। এবার শুরু হতে চলেছে দ্বিতীয় ধাপের কাজ। আর সেটা হচ্ছে এই শ্রেণির মানুষের জন্য বিভিন্ন জনকল্যাণ প্রকল্পের সূচনা। যার শুরুটা হয়ে যেতে চলেছে এ মাস থেকেই। ফলে লোকসভা ভোটের আগে এই কর্মসূচি যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝাই যায়।

এ রাজ্যেও লোধা, টোটোর মতো প্রান্তিক জনজাতি গোষ্ঠী রয়েছে। সব ঠিক মতো চললে তাঁরাও এই সুবিধার মধ্যে আসার কথা। এদিকে, দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রীয় সরকারি বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত বাংলা। এ রাজ্যের সরকারের সঙ্গে বনিবনার অভাব নাকি অবিজেপি রাজ্য বলেই বঞ্চনা, এ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তবে সে যাই হোক না কেন, প্রধানমন্ত্রীর এই নয়া যোজনার আওতায় কি শেষপর্যন্ত খরা কাটতে চলেছে এ রাজ্যের কেন্দ্রীয় বরাদ্দের। তা নিয়ে অবশ্য আশাবাদী এ রাজ্যের প্রশাসনিক মহলের একাংশ। প্রধানমন্ত্রী আবাস ও সড়ক যোজনায় দীর্ঘদিন ধরেই বরাদ্দ মিলছে না পশ্চিমবঙ্গ। সূত্রের খবর, 'প্রধানমন্ত্রী জনমন' প্রকল্পের মধ্যে এই দু'টি অংশই থাকতে চলেছে।

PM Modi to release first instalment of PM-JANMAN scheme for pucca homes to one lakh beneficiaries will bengal get pending funds from Central Government

যতদূর জানা গিয়েছে, চলতি অর্থবর্শ থেকেই আগামী ৩ বছরের জন্য ২৪ হাজার ১০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে 'প্রধানমন্ত্রী জনমন' কর্মসূচির জন্য। যেখানে কেন্দ্র ১৫,৩৩৬ কোটি টাকা করে দিতে চলেছে। রাজ্যগুলির ভাগে থাকছে ৮৭৬৮ কোটি টাকা। প্রাথমিক ভাবে একশো জেলার প্রান্তিক জনজাতিগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা ওই প্রকল্পের সুবিধা পাবে। একাধিক কর্মসূচি রয়েছে ওই প্রকল্পে। প্রাথমিক বাবে আধার কার্ড, জনধন অ্যাকাউন্টের মতো কিছু পরিষেবা দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপে আয়ুষ্মান ভারত, প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মানবিধি, কিসান ঋণ কার্ডের আওতায় আনা হবে তাদের। এখানেই শেষ নয়। পরিকল্পনা দীর্ঘ। পরে ধাপে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় পাকা বাড়ি, সড়ক, পরিস্রুত পানীয় জল-বিদ্যুতের সংযোগ, শিক্ষা-স্বাস্থ্য পরিষেবা, সামাজিক সুরক্ষার বিভিন্ন প্রকল্প, কারিগরি শিক্ষা ইত্যাদি পরিষেবা পাবে তাঁরা। কেন্দ্রীয় একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১৮টি রাজ্যে ৭৫টি বিপন্ন প্রান্তিক জনজাতি গোষ্ঠী রয়েছে। তাতে আট লক্ষ পরিবারের ৩২ লক্ষ মানুষ ছড়িয়ে রয়েছেন ২০০টি জেলার ৮০০টি ব্লকে। তাদের এক এক করে এই সমস্ত সুবিধার আওতায় আনা হবে। যদিও এ রাজ্যে এখনও আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পটি গৃহীত হয়নি। ফলে এই প্রকল্পের আওতায় আসা এ রাজ্যের বিপন্ন জনজাতিরা আদৌ সেই পরিষেবা পাবেন কিনা তা বলা যাচ্ছে না এখনই।

ইতিমধ্যেই গুজরাত, রাজস্থান, তেলঙ্গনা, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের তথ্য সংগ্রহ-সহ যাবতীয় কাজ শেষ বলে জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ক্যাবিনেট বৈঠকে। শ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, কর্নাটক, কেরল, তামিলনাড়ু, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হয়েছে। তবে বিহার এবং মণিপুরে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হবে। প্রতিটি রাজ্যে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি করে কমিটি তৈরি হবে। যারা ওই প্রকল্পের বাস্তবায়নের ব্যাপারে কড়া নজর রাখবে। জেলাশাসকদেরও এই প্রকল্প রূপায়ণে বড় ভূমিকা নিতে হবে বলে জানানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।

PM Modi to release first instalment of PM-JANMAN scheme for pucca homes to one lakh beneficiaries, will Bengal get pending funds from Central Government

২০২৩-র শেষেই হয়ে গিয়েছে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তার মধ্যে তিন রাজ্যে জিতলেও ছত্তীসগঢ় ও তেলঙ্গানায় জিততে পারেনি বিজেপি। ২০১৮ সালেও ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে বিজেপির ফলাফল খারাপ হয়েছিল। আদিবাসী অধ্যুষিত রাজ্যগুলিতে বিজেপির ফলাফল ধারাবাহিক ভাবেই খারাপ। তবে কি আদিবাসী ভোট ঠিক করে টানতে পারছে না বিজেপি। এই সব ব্যাপারগুলো মাথায় রেখেই এবার গোড়া থেকেই তৎপরতা দেখাচ্ছে বিজেপি।

আরও পড়ুন: সরকারি প্রকল্পেই কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি অসমে! কেন প্রশ্নের মুখে পিএম কিসান?

বাংলায় তৃণমূল সরকারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই বনিবনা নেই বিজেপির। কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের জেরেই দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রীয় বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত পশ্চিমবঙ্গ। যদিও এ রাজ্যের সরকার ইতিমদ্যেই জনজাতিভুক্ত মানুষজনের জন্য বহু প্রকল্প, বহু পদক্ষেপ করেছে। তাদের জন্য নানা সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প, নানা ভাতা, বৃত্তি ও পেনশন পরিষেবার ব্যবস্থা রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে রাজ্যের তরফে। রয়েছে স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কৃষকবন্ধুর মতো সুবিধাও। তবে এবার কেন্দ্রীয় এই প্রকল্পের লাভ কি পাবেন এ রাজ্যের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ। কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের উর্ধ্বে উঠে কাটবে কি বাংলার বঞ্চনার ভাগ্য? ফের কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পাবেন এ রাজ্যের মানুষ? তার উত্তর পাওয়া যাবে জলদিই।

More Articles