মাত্র ১০০ গ্রাম ওজন বেশি! এক রাতেই কীভাবে অলিম্পিক বক্সিংয়ে অযোগ্য হলেন ভিনেশ?

Vinesh Phogat disqualified: যেহেতু ভিনেশকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে তাই ৫০ কেজি বিভাগে একটি স্বর্ণপদক এবং দু'টি ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া হবে।

সারা দেশ তাকিয়েছিল তাঁর দিকে! অলিম্পিকের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও ভারতীয় মহিলা কুস্তিগীর ফাইনালে উঠেছিলেন। জিতলেই সোনা ছিল নিশ্চিত। হেরে গেলে অন্তত রুপো! সেই ভিনেশ ফোগাট প্রতিযোগিতা থেকেই ছিটকে গেলেন। মাত্র ১০০ গ্রামের জন্য! মাত্র ১০০ গ্রাম ওজন বেশি ছিল তাঁর। বুধবার সকালেই ৫০ কেজির ফাইনাল ইভেন্টে ওজনের মাপকাঠিতে অযোগ্য প্রমাণিত হওয়াতে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়লেন তিনি। বুধবার সন্ধ্যায় ফাইনালে ভিনেশের লড়াই ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সারাহ হিল্ডারব্র্যান্ডের সঙ্গে। কিন্তু তীরে এসে ডুবল তরী।

ওজন যদি বেশিই থাকে তাহলে আগের প্রতিযোগিতাগুলিতে কীভাবে খেললেন তিনি? নিয়ম অনুসারে, কুস্তিগীরদের দুইবার ওজন দেখাতে হয়। প্রাথমিক রাউন্ডের সকালে এবং ফাইনাল রাউন্ডের সকালে। মঙ্গলবার সকালেও ভিনেশের ওজন ৫০ কেজি ওজনের অনুমোদিত সীমার মধ্যেই ছিল। তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওজন বেড়ে গেল কীভাবে? ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলই। রাতারাতি প্রায় ২ কেজি কমাতে হয়েছিল তাঁকে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেমিফাইনালের পর দেখা যায় স্কিপিং করছেন তিনি। সারা রাত ধরেই ব্যায়াম করেছেন ভিনেশ কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। বুধবার সকালে দেখা যায় তাঁর ওজন ১০০ গ্রাম বেশি।

ভিনেশ ফোগাট কি আগে ৫০ কেজির মধ্যেই ছিলেন?

গত ৭ অগাস্ট, মঙ্গলবার তিনটি ম্যাচে জেতান ভিনেশ। ২৯ বছরের ভিনেশ ৫০ কেজির ওজন বিভাগের মধ্যেই ছিলেন। প্রথম রাউন্ডে টোকিও অলিম্পিকে স্বর্ণপদক বিজয়ী জাপানের ইউই সুসাকিকেও হারান তিনি। ভিনেশ কোয়ার্টার ফাইনালে ইউক্রেনের প্রাক্তন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ওকসানা লিভাচকে এবং সেমিফাইনালে কিউবার প্যান আমেরিকান গেমস চ্যাম্পিয়ন ইউসনেলিস গুজম্যানকে হারান।

আরও পড়ুন- একশো কোটির স্বপ্নভঙ্গ! ট্র্যাজেডির অন্য নাম বিনেশ ফোগট

গত বছর থেকেই ভিনেশ ফোগাট শুধু তাঁর কেরিয়ারের জন্য নয়, জীবনের জন্যও যুদ্ধ করেছেন। ভারতের রেসলিং ফেডারেশনের প্রাক্তন প্রধানের বিরুদ্ধে মহিলাদের যৌন হেনস্থার প্রতিবাদে যে ভারতীয় কুস্তিগীররা লড়ছিলেন, ভিনেশ ছিলেন তাঁদের সামনের সারির মুখ। হেনস্থাও করা হয় তাঁকে। হাঁটুর অস্ত্রোপচারের কারণে এশিয়া গেমসে খেলতে পারেননি তিনি। তারপর ছন্দে ফিরেই হয়ে ওঠেন ভারতের উজ্জ্বলতম মুখ।

অলিম্পিকে সুযোগ পেতে তাঁকে তাঁর ওজন কমিয়ে ৫০ কেজি করতে হয়েছিল। শেষ দু'টি অলিম্পিকে কিন্তু ৫৩ কেজির বিভাগেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ভিনেশ। যেহেতু অন্তিম পাঙ্গল এই বিভাগে যোগ্যতা অর্জন করেন, তাই ভিনেশকে তাঁর ওজন কমিয়ে ৫০ কেজি করতে হয়। একদিনে তিনটি ম্যাচ খেলেন ভিনেশ। শক্তি ফেরাতে তাঁকে অবশ্যই ইলেক্ট্রোলাইট এবং অন্যান্য পরিপূরক খেতে হয়েছে যার ফলে ওজন সামান্য বেড়ে যেতে পারে।

ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড রেসলিংয়ের নিয়মের বইয়ের ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনও ক্রীড়াবিদ যদি ওজন কমাতে না পারেন তাহলে তাঁকে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হবে। তিনি কোনও র‍্যাঙ্কও পাবেন না। অর্থাৎ জিতেও রুপো পাবেন না ভিনেশ! যেহেতু তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে তাই ৫০ কেজি বিভাগে একটি স্বর্ণপদক এবং দু'টি ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া হবে।

বক্সিংয়ে ওজন মাপার নিয়মগুলি কী কী?

ওজন মাপার সময়: কুস্তিগীরদের অবশ্যই তাদের প্রতিযোগিতার আগের দিনে ওজন করতে হবে, সাধারণত বিকেল বা সন্ধ্যাবেলা এই ওজন করা হয়। একাধিক দিন ধরে চলা ইভেন্টের ক্ষেত্রে কুস্তিগীরদের অবশ্যই প্রতিযোগিতার প্রতিটি দিন ওজন মাপতে হবে।

ওজন বিভাগ: কুস্তিগীরদের তাদের নির্দিষ্ট ওজন বিভাগের মধ্যেই ওজন রাখতে হবে। অর্থাৎ তারা যে বিভাগে প্রতিযোগিতায় নামতে চলেছেন, সেই বিভাগের জন্য নির্ধারিত ওজনের সঠিক সীমা পূরণ করতেই হবে।

আরও পড়ুন- নেই স্পেশাল চশমা, পকেটে হাত ভরেই যেভাবে অলিম্পিকে রুপো জিতলেন ৫১-র যুবক

পোশাক: কুস্তিগীরদের শুধুমাত্র তাদের প্রতিযোগিতার জন্য অনুমোদিত অন্তর্বাস (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটিই পোশাক) পরতে হবে। সঠিক ওজন রাখতে কোনও অতিরিক্ত পোশাক বা আনুষাঙ্গিক কিছুই পরার নিয়ম নেই।

শারীরিক পরীক্ষা: ওজন করার পর, কুস্তিগীররা প্রতিযোগিতার জন্য 'ফিট' কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য একটি মেডিকেল পরীক্ষা করা হবে। প্রতিযোগিতায় কুস্তিগীরদের কর্মক্ষমতা বা নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করতে পারে এমন কোনও সম্ভাব্য স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ঝুঁকি বা অবস্থার মূল্যায়ন হয় এই পরীক্ষায়।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম দিনে যদি একজন ক্রীড়াবিদ আহত হন, তবে তাঁর আর দ্বিতীয়বার ওজন হবে না। সেক্ষেত্রে তাঁর আগের ফলাফলই বজায় থাকবে। সেক্ষেত্রে ওজন বাড়তে পারে বুঝেও কেন ভিনেশকে আহত বা অন্য কিছু বলে প্রতিযোগিতা থেকে সরানো হলো না? তা অন্তত নিজের অর্জন করা রুপো তিনি জয় করতেন।

More Articles