অনুদান ফেরানো নিয়ে স্পষ্ট বার্তা! পুজোর হাওয়ায় মাতিয়ে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা মমতার?
Mamata Banerjee on Durga Puja Grant: যে সব পুজো কমিটি পুজোর জন্য সরকারি অনুদান নেবে না, তাদের বাদ দিয়ে নতুন পুজো কমিটিদের এবার অনুদান দেওয়া হবে।
প্রতিবাদ করছেন প্রায় সকলেই। কেউ ছবি-গানে, কেউ পুরস্কার ফিরিয়ে, কেউ অনুদান প্রত্যাখ্যান করে, কেউ আদালতে। আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে সারা বিশ্বের মানুষই পথে নেমেছেন। ধর্ষণের একমাস অতিক্রান্ত, শিয়রে দুর্গাপুজো। এমন অবস্থায় বহু পুজো কমিটিই বিচারের দাবিতে এবং এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তৃণমূল সরকারের অবস্থানের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারের পুজোর অনুদান প্রত্যাখ্যান করেছে। এবার এই অনুদান ফেরত দেওয়া নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের পক্ষে বেশ কঠিন দিন হতে পারত সুপ্রিম শুনানি ঘিরে। যদিও এদিন সুপ্রিম কোর্ট আগামী শুনানির দিন ধার্য ছাড়া বিশেষ কোনও মন্তব্য করেনি। এইদিনই নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকের মেজাজে স্পষ্ট করে দেন, বাংলার মানুষ উৎসবের আনন্দে ফিরে আসুক, এই অস্থির মুহূর্তে তিনি সেটাই চান।
মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, যে সব পুজো কমিটি পুজোর জন্য সরকারি অনুদান নেবে না, তাদের বাদ দিয়ে নতুন পুজো কমিটিদের এবার অনুদান দেওয়া হবে। আরজি করের মর্মান্তিক ঘটনার পরে একে একে বহু ক্লাবই পুজোর অনুদান না নেওয়ার কথা ঘোষণা করে। নেতাজিনগর বাস্তুহারা সমিতি, বেহালার সবেদা বাগান ক্লাব, মুদিয়ালি আমরা ক'জন পুজো কমিটির মতো বড় পুজোগুলি অনুদান প্রত্যাখ্যান করেছে এবার। শুধু কলকাতা শহরে না। হুগলি এবং পূর্ব বর্ধমান জেলার কয়েকটি পুজো কমিটিও এই অনুদান না নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নের ওই বৈঠকে সাফ জানিয়েছেন, ‘‘পুজোর টাকা নিয়ে এবার অতিরিক্ত কিছু আবেদন আমাদের কাছে এসেছে। সবাইকে হয়তো সাহায্য করতে পারব না। ৪৫০ কোটি খরচ হয় ক্লাবগুলিকে দেওয়ার জন্য। সেই টাকা মঙ্গলবার থেকে দেওয়া শুরু হবে।’’
আরও পড়ুন- নৈহাটিতে মিছিলে ঢুকে মেয়েদের পোশাক ছেঁড়া, স্লোগানে বাধা! নেপথ্যে তৃণমূল?
যারা অনুদান প্রত্যাখ্যান করেছেন তাঁদের প্রতিও অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘যদি কেউ না নিতে চান, ঠিক আছে। নতুন যে লিস্ট এসেছে, বা আবেদন করেছেন, তাদের দিয়ে দেবেন। নতুন অনেকের আবেদন আমাদের কাছে এসে পড়ে আছে। সবাইকে হয়তো পারব না একসঙ্গে দিতে। কারণ, টাকাটা বেড়ে অনেকখানি হয়ে গিয়েছে।’’ একদিকে যেমন অনেক পুজো কমিটি টাকা প্রত্যাখ্যান করছেন, অন্যদিকে আবার বাদল পল্লি মহিলা দুর্গোৎসব কমিটি, বাঁশদ্রোণী কালীতলা পার্ক নাগরিক সেবা সমিতি এবং নিবেদিতা পার্ক অ্যাসোসিয়েশনের মতো পুজোগুলি সরকারি অনুদান পেতে নতুন করে আবেদন করেছে।
নবান্নের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে মেজাজে বৈঠক করেছেন, তাতে এটুকু স্পষ্ট আরজি কর কাণ্ডের অস্বস্তি ও গণপ্রতিরোধকে ঠেকাতে এই মুহূর্তে পুজোই তৃণমূল সরকারের একমাত্র হাতিয়ার হতে চলেছে। পুজো বিষয়ক আলোচনা ও পুজো বিষয়ক চর্চা যত বেশি করে সরকারের তরফে প্রচার করা হবে, তাতে একটা বড় অংশের মানুষের মধ্যে তা আরজি কর কাণ্ডের প্রভাব ও বিক্ষোভ প্রশমিত করতে পারবে বলেই ভাবছে শাসকদল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নের বৈঠকে বলেছেন, ‘‘এই পুজোকে কেন্দ্র করে অনেকের রুজিরোজগার হয়। অনেক বিদেশি অতিথিরা আসেন। সারা দেশ থেকে মানুষ আসেন। তাঁদের যেন কোনও রকম অসুবিধা না হয়, সেটাও দেখতে হবে।’’ পুজো কমিটিগুলোর যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক ডিএম, এসপিকে এলাকা পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
অর্থাৎ পুজো-পর্যটনে মাত করে দেওয়ার প্রয়াস শুরু হয়ে গিয়েছে প্রশাসনিক স্তরে। এই প্রয়াস কি গণআন্দোলনের থেকেও জোরালো? আর ঠিক একমাস পরেই ষষ্ঠী। মানুষের পুজোর বাজার, পুজোর ঘোরা, রেস্তোরাঁয় খাওয়ার ভিড়ে কি তিলোত্তমার বিচার আবারও প্রহসনই হয়ে যাবে না?