কুলবিন্দর আঘাত করলে শাস্তি, আর কঙ্গনার বিদ্বেষের বিচার করবে কে?

Kangana Ranaut Slapped: চড় মারার ঘটনা কি এই প্রথম? কঙ্গনা রানাউতের মন্তব্যের বিরুদ্ধে কি কোনও পদক্ষেপ করার প্রয়োজন ছিল না?

চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে কঙ্গনাকে চড় মেরে গ্রেফতার হন নিরাপত্তারক্ষী কুলবিন্দর কউর। এই ঘটনার পরে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি চলছিল নেটদুনিয়ায়। কারও বক্তব্য, একজন নিরপত্তারক্ষীর সর্বপ্রথম দায়িত্ব শৃঙ্খলা বজায় রাখা। অন্যদিকে, একাংশের মানুষ আবার নিরপত্তারক্ষীকেই বাহবা দিয়েছেন। কুলবিন্দর যুক্তি দিয়েছিলেন, কৃষক আন্দোলনে যোগদানকারী মহিলাদের উদ্দেশ্যে অভিনেত্রী বলেছিলেন '১০০ টাকার' বিনিময়ে বসে রয়েছেন মহিলারা। সেই আন্দোলনে তাঁর মা-ও শামিল ছিলেন। অভিনেত্রীকে দেখেই নিরাপত্তারক্ষীর মাথা গরম হয়ে যায় এবং চড় মারেন কুলবিন্দর। পূর্বেও একাধিকবার কঙ্গনা কৃষকদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছিলেন। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে একটি ভিডিও বার্তায় কঙ্গনা আবার পঞ্জাবের বাসিন্দাদের 'সন্ত্রাসবাদী' ও 'উগ্রবাদী' বলে ফেলেছিলেন। ঘটনাটি ঘটার কিছুক্ষণের মধ্যেই অভিযুক্ত কুলবিন্দরকে সাসপেন্ড করা হয়। প্রশ্ন উঠছে, চড় মারার ঘটনা কি এই প্রথম? কঙ্গনা রানাউতের মন্তব্যের বিরুদ্ধে কি কোনও পদক্ষেপ করার প্রয়োজন ছিল না?

ঘটনাটিতে জড়িত কুলবিন্দর একজন কৃষক পরিবারের সন্তান। কৃষক আন্দোলন সমর্থন করতে গিয়েই এই ঘটনা ঘটেছে। তারপর অভিনেত্রী কঙ্গনা যে মন্তব্য করেছেন পঞ্জাববাসীদের নিয়ে, তাতে কৃষকদেরই আবার 'সন্ত্রাসবাদী' ও 'উগ্রবাদী' বলে আখ্যা দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগেও কঙ্গনা একাধিকবার কৃষক আন্দোলনের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে আগেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি, এই ভিডিও বার্তার পরও হয়নি। প্রশ্ন উঠছে, কৃষকদের বিরুদ্ধে এমন মন্তব্যের পরও কি কিছুই করার ছিল না সরকারের? প্রশ্ন উঠছে, কৃষকদের অপমান করার পরও সরকারের যে ভূমিকা পালন করার কথা ছিল, তা করা হয়নি বলেই কি একজন নিরাপত্তারক্ষী শৃঙ্খলা ভেঙে এই ঘটনা ঘটালেন? তাহলে, সেই মতো দু'পক্ষই শাস্তিযোগ্য। অর্থাৎ, কুলবিন্দর কৌর শাস্তি পেলে, কঙ্গনা রানউতের করা মন্তব্যের জন্যও অভিনেত্রীর শাস্তি পাওয়া উচিত বলেই মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন- ভোটে জিতেও মিলল না ছাড়! মহিলা জওয়ানের হাতে সপাটে চড় খেলেন কঙ্গনা

অন্যদিকে, এর আগেও চড় খেয়েছেন রাজনীতিবিদরা কিন্তু তখন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই করেনি সরকার। তালিকায় রয়েছেন এবারের উত্তর-পূর্ব দিল্লির লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী কানহাইয়া কুমার। ভোটের প্রচার চলাকালীন এক ব্যক্তি মালা পরাতে গিয়ে চড় মেরেছিলেন কানহাইয়াকে। তাঁর দিকে কালিও ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই তালিকায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালেরও নাম রয়েছে। ২০১৯ সালে ভোটের প্রচারে বেরিয়ে চড় খেয়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। এই দু'জনকে চড় মারা অভিযুক্তদের নিয়ে কিন্তু কুলবিন্দরের মতো শাস্তির কথা ভাবাই হয়নি। ওয়াকিবহাল মহল প্রশ্ন তুলছে, কানহাইয়া, কেজরিওয়ালরা বিরোধী বলেই কি কোনও পদক্ষেপ করল না কেন্দ্র? তবে বর্ষীয়ান অভিনেত্রী শাবানা আজমি সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে কঙ্গনাকে চড় মারার ঘটনার নিন্দে করেছেন। মজার বিষয় হলো, একটি সংবাদপত্রের সাক্ষাৎকারে শাবানা আজমির স্বামী তথা বর্ষীয়ান সুরকার জাভেদ আখতারকে অভিনেত্রী কঙ্গনা 'আপত্তিকর' বলে চিহ্নিত করেছিলেন। তারপর কঙ্গনার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন জাভেদ আখতার। কঙ্গনাও পাল্টা মামলা করেন।মামলা এখনও কোর্টে ঝুলে রয়েছে। একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, শাবানা আজমির সঙ্গে কঙ্গনার মধুর সম্পর্ক নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিরোধীর প্রতি অন্যায় হলেও যে আওয়াজ তোলা যায় তাঁর উদাহরণ শাবানা আজমি।

আবার, ২০২২ সালে যখন অস্কারের মঞ্চে উইল স্মিথ সঞ্চালক ক্রিস রককে চড় কষিয়ে ছিলেন, সেই ঘটনাকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিলেন কঙ্গনা। সেই সময় ইনস্টাগ্রামে স্টোরিতে তিনি লিখেছিলেন, 'কেউ যদি আমার মা বা বোনেদের অসুস্থতা নিয়ে মজা করেন, তাহলে উইল স্মিথের মতো আমি চড় মারব।' একদা অভিনেত্রী নিজেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে চড়-কে সমর্থন জানিয়েছিলেন। নেটদুনিয়ায় চর্চা হচ্ছে, কঙ্গনার ওই স্টোরি কুলবিন্দর দেখেননি তো? তাঁদের দাবি, হতেই পারে ওই স্টোরি থেকেই কুলবিন্দর শিখেছেন মা বোনদের নিয়ে মজা করলে চড়ই মারতে হয়। অনেকে বলছেন, গুরুর শেখানো নীতিতেই, শিষ্য গুরুকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছে, এতে অন্যায় কি?

আরও পড়ুন- কঙ্গনাকে যোগ্য জবাব! যে যে প্রশ্ন তুলে দিল কুলবিন্দরের সপাট চড়

উল্লেখ্য, কঙ্গনার বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের তালিকা দীর্ঘ। জাতীয় নির্বাচন কমিশনারের প্রধান রেখা শর্মা এই নিয়ে কিছুই বলেননি। একদা কঙ্গনার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে তৎকালীন টুইটার প্রধান জ্যাক ডরিস কঙ্গনার টুইটার অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করতে বাধ্য হন। অভিযোগ ছিল, টুইটারে কঙ্গনা বারবার বিদ্বেষমূলক এবং উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন। একবার সোনাম কাপুরকে 'মাফিয়া বিম্বো'(বোধবুদ্ধি ও গুণাগুণবিহীন মাফিয়া) বলেছিলেন। ঊর্মিলা মাতণ্ডকরকে 'পর্ন তারকা ' হিসেবে অভিহিত করেন। দীপিকা পাডুকোন 'মানসিক বিষণ্ণতা'য় রয়েছেন বলেছিলেন, এরপর তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপাত্মক মন্তব্যও করেন। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি হেরে যাওয়ার পর অভিনেত্রী ট্যুইট করেন, ২০০০-এর গোড়ায় প্রধানমন্ত্রী যে কৌশলে বিরোধী প্রতিপক্ষকে 'শায়েস্তা' করেছিলেন, এবারেও তিনি যেন ঠিক সেই পন্থাই অবলম্বন করেন। কঙ্গনা বলিউড তারকা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল। সুশান্তের মৃত্যুর জন্য বলিউডের প্রভাশালী ব্যক্তিদের দায়ী করেন কঙ্গনা। পরে অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তীকে টার্গেট করেন। শেষের টুইটগুলিতে পুলিশ ও স্থানীয় কর্মকর্তাদেরও জড়িয়ে ফেলেন। পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে চলে গেলে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

প্রশ্ন হচ্ছে, কঙ্গনার বিচার হবে কোথায়? বিচার করবে কারা? না কি তিনি এই স্বেচ্ছাচার চালিয়েই যাবেন?

More Articles