হোয়াটসঅ্যাপ হোক বা স্ন্যাপচ্যাট, ইউক্রেনের সঙ্গে জড়িয়ে বহু টেক জায়ান্টের জন্মরহস্য

পঞ্চম দিনে পড়ল রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ। ধীরে ধীরে ইউরোপ, এশিয়া , আমেরিকার বিভিন্ন  দেশগুলি ও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে শুরু করেছে। রাশিয়ার আক্রমণে বিপুল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউক্রেন। ক্ষেপণাস্ত্র হানা থেকে শুরু করে পারমানবিক আক্রমণ সব মিলিয়ে ইউক্রেনের আকাশে এখন কেবলই বারুদের গন্ধ। এর মধ্যেই ইউক্রেনকে যুদ্ধে বেকায়দায় ফেলতে ইউক্রেনের সরকারি ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে যাবতীয় সামাজিকমাধ্যমে শুরু হয়েছে সাইবার অ্যাটাক। অথচ এই ইউক্রেনের মাটি বহু টেক জায়ান্টদের শক্ত ঘাঁটি। বহু তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার গোড়াপত্তন ইউক্রেনেই। এমনকী এখনও বহু সংস্থারই শিকড় রয়েছে ইউক্রেনের মাটিতে।

সেই যুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই একাধিক সাইবার- অ্যাটাকের শিকার ইউক্রেন। কিন্তু কেন এই আক্রমণ? ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ইউক্রেনের প্রযুক্তিগত উন্নতি যেকোনো দেশের কাছেই তাক লাগিয়ে দেওয়ার মত।তাই ইউক্রেনের প্রযুক্তিকে থামিয়ে দিতে পারলে যুদ্ধের ময়দানে রাশিয়ার অবস্থান অনেক সুবিধেজনক হবে। এই আক্রমণ রুখতে ইতিমধ্যেই ফেসবুক, টুইটারের মত টেক জায়ান্টগুলি তাদের ইউক্রেনীয় ব্যবহারকারীদের জন্য স্পেশাল ফিচার এনেছে। হোয়াটসঅ্যাপ, পেপ্যাল, গ্রামারলির মত বহু সংস্থার জন্মই  ইউক্রেনের মাটিতে।  

ইউক্রেননিবাসী জ্যান কৌমের হাত ধরে ২০০৯ এ প্রতিষ্ঠিত হয় বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় চ্যাটিং অ্যাপ- হোয়াটসঅ্যাপ। প্রাথমিক ভাবে চ্যাটিং এবং স্ট্যাটাস দেওয়ার ফাংশান থাকলে ও ধীরে ধীরে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্যে নিয়ে এসেছে নিত্য নতুন ফিচার। হোয়াটসঅ্যাপের ভুবনজোড়া জনপ্রিয়তা দেখে ২০১৪ সালে মার্কিন টেক জায়ান্ট ফেসবুক প্রায় ১,৪৩,০০০ কোটি টাকায় হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নেয়। বর্তমানে সারা বিশ্বব্যাপী হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ বিলিয়ন।

হোয়াটসঅ্যাপের মতই জনপ্রিয় মানি ট্রান্সফার অ্যাপ পেপ্যালের শুরুয়াত ও এক ইউক্রেন নিবাসী ব্যবসায়ীর হাত ধরেই। প্রতিষ্ঠাতার নাম ম্যাক্স লেভচিন। ১৯৯৮ এ জন্ম পেপ্যালের। ২০০২ সালের ডিসেম্বর মাসে পে প্যাল থেকে বেরিয়ে আসেন লেভচিন। তার কিছু মাসের মধ্যেই ই কমার্স সংস্থা ‘ইবে’ ( eBay) কিনে নেয় পেপ্যাল-কে।

পরবর্তীকালে ২০১২ সালে লেভচিন আমেরিকায় তৈরি করেন অ্যাফার্ম নামক একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম। এছাড়া ও ৪৬ বছর বয়সী এই ব্যাবসায়িক উদ্যোক্তা থ্যাঙ্ক ইউ ফোর স্মোকিং এর মত জনপ্রিয় ছবির প্রযোজনা করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া ডেভেলপার স্লাইড.কমের ও জন্ম লেভচিনের হাত ধরেই।

আবার অন্য একটি ফটো শেয়ারিং অ্যাপ স্ন্যাপচ্যাটের মালিকানার হাতবদল হয় ২০১৫ সালে। স্ন্যাপচ্যাট কেনেন ইউক্রেনের বাসিন্দা ফোটোগ্রাফিক সংস্থা লুক্সেরির মালিক ইউরি মনাসথ্রাইসিন।  প্রায় ১,১৩০ কোটি টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয় স্ন্যাপচ্যাট যা ইউক্রেনের ব্যবসায়িক ইতিহাসের অন্যতম মাইলফলক।

বিদেশের নানা প্রান্তে অফিস থাকলে ও ইউক্রেনের রাজধানী কিভ এবং আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর ওদেসায় রয়েছে স্ন্যাপচ্যাটের প্রাসাদোপম কার্যালয়।

রাজধানী শহর কিভে রয়েছে আরও এক বিখ্যাত টেক জায়ান্টের সদর দফতর। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় অ্যাপ ডেভেলপার ‘ম্যাকপো’র জন্ম ও ইউক্রেনের মাটিতে। বর্তমানে গোটা বিশ্বজুড়ে যার ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৩০ মিলিয়ন। ইউক্রেনের সাইবার অ্যাটাকের মধ্যেও ম্যাকপো তার বিশ্বজোড়া ব্যবহারকারীদের সুরক্ষার আশ্বাস দিয়েছে। টুইটে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে ‘ আমরা একাধিক পরিকল্পনা করছি এবং এই পরিস্থিতিতে একাধিক আপৎকালীন ব্যবস্থা ও রয়েছে। আমরা সবদিক থেকেই আমাদের গ্রাহকদের সুরক্ষিত রাখতে বদ্ধপরিকর’।

আরেক বিখ্যাত টেক জায়ান্ট টাইপিং সংস্থা গ্রামারলির শিকড় ও ইউক্রেনেই। ২০০৯ সালে ম্যাক্স লিটভিন, অ্যালেক্স শেভচেঙ্কো এবং দিমিত্র লিডার যৌথভাবে গ্রামারলি তৈরি করেন। এঁদের তিনজনেরই জন্ম ইউক্রেনে। গ্রামারলির সদর দপ্তর সানফ্রানসিসকোয় হলেও কিভ শহরেই রয়েছে এর প্রাইমারি ডেভেলপার অফিস।

এ তো গেল ইউক্রেনে জন্ম নেওয়া মানুষদের হাত ধরে তৈরি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় কিছু টেক জায়ান্টের কথা। স্বয়ং ইউক্রেনে ও রয়েছে একাধিক জনপ্রিয় টেক কোম্পানি। এদের মধ্যে অন্যতম রেডেল বলে একটি সংস্থা যা স্পার্কমেইল বলে একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ভাবে কাজ করে।

এছাড়া বিশ্বের বৃহত্তম টেক জায়ান্ট ফেসবুক এবং টুইটার, গুগল, মাইক্রোসফটের ও অফিস রয়েছে ইউক্রেনে। এছাড়া ও ক্লাউড ফেয়ারের মত জনপ্রিয় কনটেন্ট ডেলিভারি সংস্থার ডেটা সেন্টারটি রয়েছে ইউক্রেনে।

পরিসংখ্যান বলছে বিশ্বের অধিকাংশ টেকনোলজিক্যাল কোম্পানি এবং আইটি হাব গুলির আঁতুড়ঘর ইউক্রেন। এই ‘যুদ্ধপরিস্থিতি’ তে ইউক্রেনের এই ব্যবসায়িক ভিত্তির ভবিতব্য কী সেটাই এখন দেখার।

More Articles