তিনদিন ধরে ধ্বংসস্তূপে আটকে একরত্তি শিশু! তারপর? যে অলৌকিক কাণ্ড ঘটাল ভারতীয় কুকুর
Turkey Earthquake Dog Rescue : এই অদ্ভুত, অলৌকিক ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতীয় সেনা। জড়িয়ে আছে দু'টি কুকুর!
চারিদিকে ভেঙে পড়ে আছে বাড়িঘর। একেকটা ধ্বংসস্তূপ সরানো হচ্ছে, আর মৃতদেহের সংখ্যা বাড়ছে। ইতিমধ্যেই মৃতের সংখ্যা ২৪,০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। তুরস্ক, সিরিয়া জুড়ে এখন কেবল হাহাকারের ছবি। ভয়াবহ ভূমিকম্পের জেরে ভেঙেচুরে গিয়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি। সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে প্রিয়জনের দেহ খুঁজে চলেছেন অনেকে। তবে এমন ধ্বংসলীলার মধ্যেও অলৌকিক ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর সারির ভেতরেও বেঁচে ওঠে বেশকিছু প্রাণ। সেরকমই একটি ঘটনা ঘটল তুরস্কে। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে একরত্তি শিশুকে উদ্ধার করা হল। আরও আশ্চর্যজনক হল, এই অদ্ভুত, অলৌকিক ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতীয় সেনা। জড়িয়ে আছে দুটি কুকুর। তাদের জন্যই প্রাণে বেঁচেছে সেই বাচ্চাটি!
ঠিক কী হয়েছিল? ৬ ফেব্রুয়ারি, স্থানীয় সময় ভোর সোয়া চারটে নাগাদ কেঁপে ওঠে তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহর। তার আশেপাশের অঞ্চলগুলিও রীতিমতো কেঁপে ওঠে। সেই প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে সিরিয়া, সাইপ্রাস, গ্রিস, লেবাননে। ৭.৮ তীব্রতার সেই ভূমিকম্পের পর আরও তিনটি বড় ভূমিকম্প ধেয়ে আসে তুরস্কের দিকে। ১২ ঘণ্টার মধ্যে চারটি কম্পনের জেরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় তুরস্ক ও সিরিয়া। ভাঙা বাড়ি, ব্রিজ, গাড়ি, লোহা-লক্কর-সিমেন্টের নিচেই চাপা পড়ে যায় কয়েক হাজার মানুষ।
আরও পড়ুন : তুরস্কের মতোই ভয়ংকর ভূমিকম্পের সামনে ভারত? কোন সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছেন এই ‘ভবিষ্যদ্বক্তা’
এরপরই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় বিভিন্ন দেশ। ‘বন্ধু’ তুরস্ককে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে ভারতীয় সেনা। বিপর্যয় মোকাবিলা ফোর্স বা NDRF কর্মীদের বেশ কয়েকটি দলও পাঠিয়েছে ভারত। সেই সেনারা গিয়ে উদ্ধারকাজে হাত লাগাচ্ছেন। তাঁদেরই সঙ্গী ছ’টি কুকুর – র্যাম্বো, বব, হানি, জুলি, রোমিও ও রক্সি। তারাও সমানে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কাজ করে যাচ্ছে। গন্ধ শুঁকে খুঁজে নিচ্ছে, কেউ আটকে আছে কিনা।
১০ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার। প্রতিদিনের মতো উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে পুলিশ, সেনা। ভারতীয় NDRF কর্মীদের সঙ্গে কাজ করছে তাঁদের দুটি কুকুর – রোমিও ও জুলি। গাজিয়ানতেপ শহরের মধ্যেই চলছিল খোঁজাখুঁজি। হঠাৎই জুলির হাবভাব বদলে গেল। অস্থির হয়ে তার প্রশিক্ষকের কাছে বারবার জানান দিতে লাগল। ব্যাপারটা কী? জুলি বারবার ইঙ্গিত করছে ধ্বংসস্তূপের একটি বিশেষ জায়গার দিকে। সেই দিকেই বারবার চলে যাচ্ছে জুলি, আর ডেকে উঠছে। সন্দেহ হয় NDRF কর্মীদের।
তারপর আরেক সারমেয় রোমিওকে-ও সেখানে নিয়ে আসা হয়। ঠিক ওই ধ্বংসস্তূপের কাছে গিয়েই অস্থির হতে শুরু করল রোমিও। এবার সন্দেহ দৃঢ় হল সেনাদের। তাহলে ওই কংক্রিট, লোহার স্তূপের নীচেই কি এখনও বেঁচে রয়েছে কেউ? সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল উদ্ধারকাজ। প্রতিটা সেকেন্ড এখানে গুরুত্বপূর্ণ। যদি কেউ বেঁচে থাকে, তাহলে তাঁর প্রাণ রক্ষা করতে হবে।
আরও পড়ুন : নেপালের তাণ্ডবলীলা থেকে সুমাত্রার বিধ্বংসী সুনামি, যে ভয়াবহ ভূমিকম্পগুলি কাঁপিয়ে দিয়েছিল বিশ্বকে
খোঁড়াখুঁড়ির পরই দেখা গেল, ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে রয়েছে ছ’টি দেহ। তাঁরা মারা গিয়েছেন, সেটা দেখেই বোঝা যায়। সেইসঙ্গে আরও একটি শিশু রয়েছে ধ্বংসস্তূপে। কোলে তুলে নেওয়ার পরই অলৌকিক ঘটনা! চোখের পাতা একটু যেন নড়ে উঠল একরত্তি মেয়েটির! তার মানে সে এখনও বেঁচে রয়েছে! তিনদিন, প্রায় ৮০ ঘণ্টা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকেও শ্বাস চলেছে তার! সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পাঠানো হল ওই ছোট্ট মেয়েটিকে। চিকিৎসা চলার পর এখন সে ভালোই আছে। কিন্তু তার পরিবারের সব সদস্যই মারা গিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, ওই মেয়েটির নাম নাসরিন। মাত্র ছয় বছর বয়স তার। আর তাকে বাঁচিয়েই রীতিমতো নায়ক হয়ে গিয়েছে রোমিও ও জুলি। এই দুই সারমেয়ের জন্যই প্রাণে বাঁচল একরত্তি নাসরিন। তিনদিন ধরে, নাওয়া খাওয়া ছাড়া ধ্বংসস্তূপের ভেতর আটকে ছিল সে। একটু বেশি দেরি হলেই হয়তো ছবিটা বদলে যেত। ভারতীয় সেনারাও এখন নায়কের মর্যাদা পাচ্ছেন তুরস্কে। বিপদের দিনের বন্ধু বলে কথা!