সমতলেই রয়েছে পাহাড়ি জঙ্গলের স্বাদ, কোথায় এই মিনি ডুয়ার্স?
Mini Dooars near Kolkata : ঝালুয়ারবেড় স্টেশনটি ঘিরেও রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। ১৮৯৭ সালে প্রথম তৈরি হয়েছিল স্টেশনটি
পাহাড় প্রেমে বাঙালির অন্যরকম উন্মাদনা। আর তার সঙ্গে যদি যোগ হয় জঙ্গলের রহস্য, তবে তো ষোলোকলা পূর্ণ। এটাই হয়েছে ডুয়ার্সের ক্ষেত্রেও। ছুটি পেলেই ডুয়ার্স ভ্রমণ তাই বাঙালির কাছে নতুন কিছু নয়। কিন্তু যান্ত্রিক সময়ে দাঁড়িয়ে ওই ছুটি শব্দটাই তো বিষম বস্তু,তার ওপরে যদি হয় লম্বা ছুটি, তবে তো হাপিত্যেশ করা ছাড়া উপায় নেই। মাঝখান থেকে মাটি হয়ে যায় ঘোরবার ইচ্ছেটাই। হাতে সময় নামমাত্র। তাই মন চাইলেও সপ্তাহান্তের ছুটিতে সমতলে বসে পাহাড় ভ্রমণের স্বাদ পূরণ অসম্ভব। কিন্তু তেমন স্বাদ যদি মেলে ঘরের কাছেই, তবে তো কথাই নেই। হ্যাঁ কলকাতার খুব কাছেই রয়েছে এমন জায়গার সন্ধান। লোকমুখে পরিচিত মিনি ডুয়ার্স নামে। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি, যে ঘরের কাছেই রয়েছে এহেন ডুয়ার্স, ঝালুয়ারবেড়।
অ্যাডভেঞ্চার, ট্রেকিং অথবা পরিবারের সঙ্গে লম্বা ভ্রমণ, বছর শেষে নিদেনপক্ষে একটা হলেই যথেষ্ট, হালফিলের ট্রেন্ড এখন ‘শর্ট ট্রিপ’। অবশ্য উপায়ও কিছু নেই, ইঁদুর দৌড়ে পাল্লা দিতে হবে তো! আবার হাঁপিয়ে উঠতে উঠতে দরকার খানিক মুক্ত বাতাসও। তাই বাঙালি এখন বাড়ির কাছেই খুঁজে বেড়াচ্ছে আরশিনগর। হাওড়া জেলার ঝালুয়ারবেড়, ঠিক তেমনটাই।
গন্তব্যস্থলের নামটা বেশ অচেনা হলেও জায়গাটা অনেক পুরনো। ঝালুয়ারবেড় স্টেশনটি ঘিরেও রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। ১৮৯৭ সালে প্রথম তৈরি হয়েছিল স্টেশনটি। অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলে। স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক ওঠাপড়ার সাক্ষী থেকেছে এই স্টেশন। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে এটি আবার বন্ধও হয়ে গিয়েছিল। সেই থেকে লম্বা একটা বিরতি কাটিয়ে আবার ২০০৪ সালে নতুন করে পথ চলা শুরু করে ঝালুয়ারবেড়। হাওড়া থেকে আমতা লোকালে চেপে অষ্টম স্টেশন ঝালুয়ারবেড়। মেরেকেটে মিনিট পঞ্চাশ লাগে পৌঁছতে। অর্থাৎ সকাল সকাল বেরিয়ে, সারাদিন ঘুরে আবারও দিব্যি ফিরে আসতে পারেন দক্ষিণবঙ্গের বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন - নামমাত্র খরচে ডুয়ার্স দর্শন! পুজোর মরশুমে ভিস্টাডোমে চিনুন অপরূপাকে…
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডুয়ার্স যেমন নিজেকে সাজিয়ে নেয় নয়া নয়া রূপে, ঠিক তেমনই হাওড়ার এই ছোট্ট শহরটি ঘিরেও রয়েছে অসাধারণ রূপ মাধুর্যের বর্ণনা। একটিই মাত্র স্টেশন, আর তার পাশেই হেঁটে চলা অপরূপ প্ল্যাটফর্ম। পা দিলেই মনে হবে উত্তুরে হাওয়া বইতে শুরু করেছে, দক্ষিণবঙ্গের এই শহরে। আরও খানিকটা হাঁটতে শুরু করলেই কানে এসে লগে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ, গায়ে কাঁটা দেয় যেন অজান্তেই। আশেপাশে নুইয়ে পড়েছে বুনো বটের ডাল। এ যেন বাস্তবিকই মিনি ডুয়ার্স, গরীবের ডুয়ার্স দর্শনের এমন বিকল্প আর সত্যিই নেই এই বঙ্গে।
কীভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে আমতাগামী লোকাল ট্রেনে চেপে ঘন্টাখানেকের পথ। স্টেশনে নেমেই মিলবে টোটো, রিক্সা। চালকের সঙ্গে সমঝোতা করে বেরিয়ে পড়তে পারেন প্রকৃতি দর্শনে। ট্রেনে টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা।
কী কী দেখবেন?
প্রকৃতি যেন ঢেলে সাজিয়েছে এই শহরটিকে। স্টেশনে পা দিলেই শুরু হবে টাইম ট্রাভেল। একটা অদ্ভুত নির্জনতা ঘেরা পরিবেশ আর উত্তরের ডুয়ার্সের মিনি সংস্করণ,পরতে পরতে জঙ্গলে ঘেরা রহস্য, এই সব দেখতে দেখতেই কখনই সময় গড়িয়ে বিকেল হয়ে যাবে, টেরই পাবেন না। স্টেশনের পাশেই রয়েছে একটি প্রাচীন শিব মন্দির। গ্রামের দিকে এগোতে শুরু করলে আরও বেশ কিছু মন্দির চোখে পড়বে। রয়েছে রামকৃষ্ণ বাটি এবং শিবকালী মন্দির। যার চূড়া হুবহু দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে। এই সব জায়গা ঘুরতে ঘুরতে বেলা পড়ে আসবে। আর এরই মাঝে শোনা যাবে ফিরতি ট্রেনের ভোঁ। ইচ্ছে না থাকলেও ফিরতে হবে গতানুগতিক জীবনে। কিন্তু ঝালুয়ারবেড় থেকে যাবে মণিকোঠায়।