আরবিআই গভর্নরকে 'সাপ' সম্বোধন! কেন এ কাজ করেছিলেন মোদী?

Modi to RBI Governor: আরবিআইয়ের মতো সংস্থার শীর্ষকর্তার বিরুদ্ধে দেশপ্রধানের এ ধরনের শব্দপ্রয়োগ কতটা সাংবিধানিক তা নিয়ে প্রশ্ন তো ওঠে বটেই।

জনসভা থেকে লোকসভা, কটূ, আপত্তিজনক ভাষা ব্যবহার এখন জলভাত। কিছুদিন আগেই লোকসভার ভিতরে এক মুসলিম বিধায়কের বিরুদ্ধে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে বসেন এক বিজেপি সাংসদ। সে নিয়ে তোলপাড় হয়ে গেল রাজনীতির ময়দান। তবে কথায় বলে, যেমন গুরু তেমনই তাঁর চ্যালা। সে কথা যে একবর্ণ মিথ্যা নয়, তা প্রমাণ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একবার নাকি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন গভর্নর উরজিৎ প্যাটেলের বিরুদ্ধে আপত্তিজনক মন্তব্য করে বসেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী।

এ কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষ চন্দ্র গর্গ। 'উই অলসো মেক পলিসি' নামে একটি বই লিখেছেন সুভাষ। সেই বইতেই এমন তথ্যের উল্লেখ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আরবিআইয়ের ২৪তম গভর্নর উরজিৎ প্যাটেলকে কী এমন বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সুভাষের বই অনুযায়ী, মোদি নাকি একবার উরজিৎ সম্মন্ধে বলেছিলেন, তিনি নাকি এমন একটি সাপ যে টাকার সিন্দুকের উপর বসে রয়েছে।

আরও পড়ুন: নোংরা ভাষাতেই ‘দক্ষ’! বারেবারে অশ্লীল আক্রমণ বিরোধীদের! কে এই রমেশ বিধুরি?

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (RBI)-এর ২৪তম গভর্নরের পদ থেকে ইস্তফা দেন উরজিৎ। ব্যক্তিগত কারণেই ইস্তফা বলে জানিয়েছিলেন তিনি। তবে শোনা যায়, সরকারের সঙ্গে নীতিগত বিবাদের কারণেই তাঁর এই ইস্তফা। কারণ তিন বছরের মেয়াদের মাঝখানে এই ভাবে গভর্নরের ইস্তফা খুবই বিরল ঘটনা।

Modi likened ex-RBI governor Urjit Patel to a snake, ex-bureaucrat claims

মোদি সরকারের সঙ্গে বারবার নানা বিষয়ে মতান্তর হয়েছে উরজিতের। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কগুলির ক্ষেত্রে রেগুলেটরি অথোরিটি অর্থাৎ নিয়ামক সংস্থা বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির মতো ততটা জোরদার নয় কেন, এই মর্মে প্রশ্ন তুলেছিলেন আরবিআইয়ের তৎকালীন গভর্নর। সেই নিয়ে মোদি সরকারের সঙ্গে সংঘাতের শুরু উরজিতের। দ্বিতীয় পর্যায়ের সংঘাত বাধে মোদি সরকারের নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পের বিরোধিতা করায়। এই নির্বাচনী বন্ড দেওয়ার ক্ষমতা আরবিআইয়ের হাতেই রাখার দাবি করেছিলেন উরজিৎ। স্বাভাবিক ভাবেই এই মতান্তরকে ভালো চোখে দেখেনি মোদি সরকার।

২০১৮ সালে ২৫ শতাংশ রেপো রেট বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেন তৎকালীন আরবিআই গভর্নর। যার ফলে রেপো রেট দাঁড়ায় ৬.২৫ শতাংশে। সেসময় হঠাৎ করেই ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় মোদি সরকার। মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা টের পেয়ে রেপো রেট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আরবিআই গভর্নর। যার জেরে চাপে পড়ে সরকার। প্রায় লক্ষ কোটি টাকার অতিরিক্ত ক্যাপিটল ব্যাঙ্কে জমা রাখতে বাধ্য হয়েছিল সরকার।

Modi likened ex-RBI governor Urjit Patel to a snake, ex-bureaucrat claims

সেসময় অর্থদফতরের দায়িত্ব ছিল অরুণ জেটলির কাঁধে। ক্রমশ উরজিতের সঙ্গে অর্থনীতি নিয়ে মতান্তর চড়া হচ্ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি সরকার সেসময় উরজিতের উপর দারুণ রেগে। সেসময় বলতে ২০১৮ সালের কথা। সে বছরের সেপ্টেম্বর মাসে একটি সভায় নরেন্দ্র মোদি নাকি উরজিৎকে সাপের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। সেই তথ্যেরই উল্লেখ রয়েছে সুভাষ গর্গের লেখা ওই বইতে।

জানা যায়, সে সময় অর্থনীতি নিয়ে বেশ কিছু সমাধানসূত্র তথা পরামর্শও নাকি বাতলেছিলেন তৎকালীন আরবিআই গভর্নর উরজিৎ। তবে সেসব পরামর্শ শোনা তো দূরের, তাতে কানও দেয়নি জেটলি সরকার। উল্টে সেই সব পরামর্শকে অবাস্তব বলে উড়িয়ে দেয় কেন্দ্র সরকার। ক্রমে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে আরবিআইয়ের। কথাবার্তা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় আরবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। তৎকালীন অতিরিক্ত প্রধান সচিব পি কে মিশ্রকেই সেই কাজটি করতে হত।

আরও পড়ুন:নিজের দলের সাংসদকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ, তবু কেন চুপ মায়াবতী?

শেষপর্যন্ত বিরক্ত হয়ে নাকি উরজিতের পরামর্শগুলি শোনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মোদি। আরবিআইয়ের তরফে দেখানো সেঅ প্রেজেন্টেশন মন দিয়ে দেখেছিলেন মোদি। তবে সেসব দেখে কার্যত রেগে যান তিনিও। তাঁর কাছেও একই রকম ভাবে অপ্রাসঙ্গিক ছিল উরজিতের সমস্ত পরামর্শ। লং টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স তুলে নেওয়া নিয়ে গভর্নরের ভূমিকার নিন্দাও করেছিলেন তিনি। সে সময়েই রাগের বশে একটি সভায় উরজিতের বিরুদ্ধে খারাপ কথা বলে বসেন মোদি। আরবিআইয়ের মতো সংস্থার শীর্ষকর্তার বিরুদ্ধে এ ধরনের শব্দপ্রয়োগ, তা-ও আবার দেশপ্রধানের- ব্যাপারটা কতটা সাংবিধানিক তা নিয়ে প্রশ্ন তো ওঠে বটেই। তবে রাজনীতির ক্ষেত্রে ক্ষমতাবানের, সংখ্যাগরিষ্ঠের এই কুকথা বলার ধারাবাহিকতা যে সেই থেকে চলেই আসছে, তা বোধহয় ফের প্রমাণ করে দিল ২০১৮ সালের এই ঘটনা। যার পুরোটাই ধরা রয়েছে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থসচিবের বইতে।

More Articles