নামমাত্র খরচে পাহাড় ভ্রমণ, দুদিনের ছুটিতে ঘুরে আসুন এই অফবিট জায়গা থেকে
Offbeat Tour : কম খরচেও এবার পাহাড় ভ্রমণ সম্ভব, দার্জিলিংয়ের ঘিঞ্জি এলাকার বদলে ঘুরে আসতে পারেন কালিম্পং-এর এই জায়গা থেকে
একটা সময় ছিল পাহাড়ে ভ্রমণ বলতে বাঙালি কেবল বুঝত দার্জিলিং। উত্তরবঙ্গের সবটুকু আকর্ষণ জুড়ে যেন ওই একটা শহর! কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে অবশ্য আর এমন অপবাদ দেওয়া চলে না। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষ এখন অফবিট ভ্রমণে বেশি ঝুঁকছে। চেনা ঘিঞ্জি জায়গার বদলে অচেনা নিরিবিলি পরিবেশকে বেছে নিচ্ছে ছুটি কাটানোর উপযুক্ত ডেস্টিনেশন হিসেবে। লম্বা ছুটির অবকাশ যেহেতু নেই তাই সপ্তাহান্তের দুদিন ছুটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জায়গা খুঁজে নিচ্ছে ভ্রমণপ্রেমী বাঙালি। তাছাড়া পকেটের কথাও তো ভাবতে হবে। তাই মোটামুটি একটা সমঝোতা করে চলাই শ্রেয়। এরকমই একটি জায়গার হদিশ রয়েছে পরিচিত উত্তরবঙ্গেই। নামমাত্র খরচে পাহাড় ভ্রমণ, তার সঙ্গে উপরি পাওনা সবুজে ঘেরা ওক, পাইন, বার্চ -এর জঙ্গল আর ঝর্ণার শব্দ, সব মিলিয়ে দুদিনের ছুটি জমে যাবেই।
কালিম্পং শহরে ছায়ামাখা এই পাহাড়ি গ্রামটির নাম পেডং। শান্ত নিরিবিলি এই গ্রামটি এখনও তেমন পরিচিত হয়ে ওঠেনি, আর সেটাই এর অভিনবত্ব।এখানে একবার এলেই মনে হবে এই ছোট্ট জনপদকে প্রকৃতি যেন ঢেলে সাজিয়েছে তার অপরূপ শোভা দিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের মাথার কাছে চার হাজার আশি ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই ছোট্ট জনপদ পেডং। কালিম্পং থেকে দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। কালিম্পং থেকে আলাগাড়া হয়ে যে রাস্তাটা সোজা বেঁকে গিয়েছে সিকিমের দিকে, সেই পথেই নিঃশব্দে ঘুমিয়ে থাকে পেডং। দেখে যেন মনে হয় বহুদিনের কোনও এক শব্দহীনতা নিমেষেই গ্রাস করেছে এই শহরটিকে।
আরও পড়ুন - লাগবে না পাসপোর্ট-ভিসা, কলকাতার খুব কাছেই রয়েছে মিনি সুইজারল্যান্ড, জানেন কোথায়?
বর্তমানে ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে সিল্করুটের জনপ্রিয়তা ক্রমশই বাড়ছে, আর এই পেডং গ্রামটিও পড়ে এই পথেই। তাই এই রুটে বেড়াতে গেলে দু’দিন অনায়াসে কাটিয়ে যেতে পারেন পেডংয়ে। শান্ত পরিবেশে কিছুটা সময় একান্তে কাটানোর জন্য আদর্শ এই জায়গাটি। একদিকে সবুজে ঘেরা নৈসর্গিক পরিবেশ, আর অন্যদিকে হিমালয়ান পাখিদের অনর্গল কলতান, তার ওপর তিস্তা নদীর ছন্দ, সব মিলিয়ে মন ছুঁয়ে যায় নিমেষেই। এরই মাঝে পাহাড়ের ধার ঘেঁষে মাঝে মাঝে উঁকি দেয় সাদা মেঘের ভেলা, ঢেউ খেলানো চা-বাগানের অপরূপ শোভা, এ সবই যেন পেডং–এর সম্পদ। আকাশ পরিষ্কার থাকলে দেখা মিলিয়ে পারে বহু প্রতীক্ষিত কাঞ্চনজঙ্ঘারও। এছাড়াও পেডংয়ে বসেই দেখা যায় দার্জিলিং, সিকিম, ভূটান এবং তিব্বতের কিছু অংশ। এই দৃশ্য আরও মায়াময়ী হয়ে ওঠে রাতের অন্ধকারে। কলকাতায় হ্যালোজেন বাতির নিচে দাঁড়িয়ে পূর্ণিমার চাঁদ দেখার সঙ্গে পাহাড়ের বুকের জ্যোৎস্নার ঝিকিমিকি মোটেই মেলে না। এ দৃশ্য সত্যিকারের স্বর্গীয়।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কিছু ঘোরার জায়গা :
রামি ভিউ পয়েন্ট, সাইলেন্ট ভ্যালি, ভুটানিদের হাতে গড়া সাংচেন দোরাজি গুমফা, ফরাসিদের তৈরী সেক্রেড হার্ট গির্জা এবং দামসাং ফোর্ট ইত্যাদি। তবে, পেডংয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল ১৮৩৭ সালের তৈরি মনেস্ট্রি। খ্রিস্টান ও বৌদ্ধধর্মের প্রচার ও প্রসারকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল এই মনেস্ট্রি। এছাড়াও শোনা যায়, একসময় এই পথেই ক্রিষ্টান ধর্মযাজকরা তিব্বতে ধর্মপ্রচার করতে গেছিলেন। এদের মধ্যে অনেকেই আর ফিরে আসেননি। নিরুদ্দেশ সেই সব ধর্মযাজকদের স্মৃতিতেই ফাদার অগাস্টিন ডেসগোডিন্স ১৮৮২ সালে এখানে বিখ্যাত একটি ক্রস স্থাপন করেন।
কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন?
হাওড়া অথবা শিয়ালদহ থেকে রেল পথে আসতে হবে এন জে পি। এই এন জে পি থেকে পেডং এর দূরত্ব ১০০ কিমি। স্টেশনে নেমে শেয়ার জিপ, বাস বা গাড়ি করে চলে আসুন কালিম্পং। কালিম্পং থেকেও আবার ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামটি। কালিম্পং থেকে মিলবে আবারও শেয়ার গাড়ি। চালককে বললেই পৌঁছে দেবে গন্তব্য পেডং-এ। অবশ্য। এন জে পি থেকেও সরাসরি ভাড়া গাড়িতে চলে আসতে পারেন পেডং। পেডংয়ে থাকার জন্য বেশ কিছু হোমস্টে, গেস্ট হাউস এবং রিসর্ট রয়েছে। এখানে থাকা-খাওয়া নিয়ে খরচ পড়বে মাথাপিছু মোটামুটি ১,২০০ টাকা থেকে ১,৫০০ টাকা মতো। তাই শীতের ছুটিতে চাইলেই স্বল্প খরচে ঘুরে আসতে পারেন এই অসাধারণ পাহাড়ি গ্রাম থেকে। নিরাশ যে মোটেই হবেন না এ কথা হলপ করে বলা যায়।