নদী পাড়ের রোমাঞ্চ আর তাঁবুতে রাত্রিযাপন, এবার শীতে গন্তব্য হোক কলিম্পংয়ের ত্রিবেণী

Triveni: ঘিঞ্জি দার্জিলিং অথবা গ্যাংটক নয়, শীতের দেশে তাঁবুতে রাত্রিযাপন করতে চলুন কলিম্পংয়ের ত্রিবেণী

“মেঘ পিওনের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা, মন খারাপ হলে কুয়াশা হয়, ব্যাকুল হলে তিস্তা”......না তিস্তা এখানে একা নয়, তার হাত ধরেছে রঙ্গিত নদীটি। তিস্তার কুয়াশা মাখা পাহাড়ের কোল ঘেঁষে একই ছন্দে বয়ে চলেছে দুই সহচরী। চারদিক ঘন সবুজ। অপরূপ সৌন্দর্য্যে ছেয়ে আছে চারিদিক। এখানে কোনো মনখারাপ নেই, ব্যাকুলতা শুধুই প্রকৃতির রসাস্বাদনের। কালিম্পং শহরের কোলে তৈরি হয়েছে হারিয়ে যাওয়ার নতুন ঠিকানা। গ্রামের নাম ত্রিবেণী।

বাঙালির তো পায়ের তলায় সর্ষে। একঘেঁয়ে জীবনে ছুটির ফুরসৎ মিললেই দে ছুট... তার ওপর সামনেই পুজো। তাই শীতের ছুটিতে পাহাড়ের কোলে খরস্রোতা তিস্তা নদীর পাড়ে রাত কাটাতে চাইলে আপনার গন্তব্য হতে পারে কালিম্পঙের ত্রিবেণী গ্রাম। হ্যারিকেনের আলোয় রাত্রের নিস্তব্ধতা আর নদীর জলের বয়ে চলার শব্দ, এক মায়াময় অনুভূতি দেবে নিশ্চিৎ।

নদীর পাড়ে ছোটো ছোটো তাঁবু। সেখানেই রাত্রিযাপন। সঙ্গে স্বচ্ছ তিস্তা নদীর মদিরাময় নেশাতুর আমেজ। এছাড়াও সন্ধে নামলে ক্যাম্প ফায়ারের উষ্ণতা। রাতে তাঁবুতে থেকেই বারবিকিউ। আরও আছে বাড়তি পাওনা। তিস্তা আর রঙ্গিতের সঙ্গমে মিলবে রাফটিংয়ের রোমাঞ্চ। যাকে বলে, অ্যাডভেঞ্চারের ষোলোকলা পূর্ণ!

কীভাবে যাবেন ?

কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গগামী যে কোনও ট্রেন ধরে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নামতে হবে। এরপর সেখান থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে সরাসরি পৌঁছে যাওয়া যায় পাহাড়ঘেরা এই ছোট্ট জনপদে। এছাড়াও উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের কালিম্পংগামী যেকোনো বাসেও যাওয়া যেতে পারে ত্রিবেণী। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ত্রিবেণীর দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। গাড়িতে সময় লাগবে মেরেকেটে দু’ঘণ্টা।

আরও পড়ুন - দিঘা-পুরী-দার্জিলিং আর নয়, চেনা ছকের বাইরে সফর সারুন পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা শিমোগায়

কোথায় থাকবেন ?

ত্রিবেণীতে থাকার জায়গা বলতে তিস্তা ও রঙ্গীত নদীর পাড়ে অসাধারণ কিছু তাঁবু। শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, কার্শিয়াং, এই তিনদিক থেকেই যাওয়া যায় ত্রিবেণী। নামতে হবে তিস্তা বাজারে। এখানে সব মিলিয়ে তিস্তার বুকে প্রায় দুশোটি তাঁবু রয়েছে। তবে পর্যটনের ভরা মরশুমে আগে থেকে বুক করে যেতে হবে, না হলে জায়গা মেলা মুশকিল!

কী খাবেন ?

এখানে আলাদা করে কোনও হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁ নেই। যে তাঁবুতে থাকবেন সেখানেই মিলবে খাবারের ব্যবস্থা। সাধারণত থাকা এবং খাওয়া মিলে এক সঙ্গেই প্যাকেজ নির্ধারিত করা হয় এখানে। জলখাবার, দুপুরের খাবার, সন্ধ্যার চা-টিফিন এবং রাতের খাবার ছাড়াও রয়েছে নদীর পাড়ে বসে পোড়া মাংস খাওয়ার সুযোগ। তাঁবুর দায়িত্বে থাকা কর্মীদের বললেই তাঁরা সমস্ত ব্যবস্থা করে দেবে।

খরচ কেমন?

ত্রিবেণীতে তাঁবুতে থাকা এবং খাওয়ার জন্য মাথাপিছু প্রতিদিন দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা নেওয়া হয়। এছাড়াও ট্রেনে যাতায়াতের টিকিট এবং নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি রিজার্ভ করলে সব মিলিয়ে খরচ পড়তে পারে হাজার পাঁচেকের কাছাকাছি। যদিও সংখ্যায় বেশিজন গেলে, খরচ খানিক কম পড়বে।

তাই শীতের ছুটিতে শহুরে কোলাহল ছাড়িয়ে বেরিয়ে পড়ুন প্রকৃতির টানে। দেরি না করে ট্রেনের টিকিট কেটে ফেলুন শীঘ্রই। বন্ধু অথবা পরিবার নিয়ে দল বেঁধে তিস্তার তীরে খোঁজ করে নিন নতুনত্বের। ক্যাম্পে রাত্রিযাপন আর রহস্যের স্বাদ নিয়ে ফেরার পথে চাইলে ব্রিটিশ আমলে তৈরি করোনেশন সেতু ও সেবক থেকেও একবার ঢুঁ মেরে আসতে পারেন।

More Articles