বাজেদের পাসপোর্ট! বিমানে চড়েই আকাশপথে সৌদি রাজার পোষ্যের ঝাঁক

Saudi Prince's Falcons: ২০১৭ সাল নাগাদ সামনে এসেছিল এমনই একটি আশ্চর্য ঘটনা। ৮০টি বাজপাখিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সৌদির যুবরাজ বুক করে ফেলেছিলেন গোটা বিমান।

রাজাবাদশাদের কত শখই তো থাকে! তাঁদের হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া। পাইক-বরকন্দাজ, সৈন্য-সামন্ত। বেশ কয়েকজন রাজা বাদশার পোষা বাজ বা পোষা পায়রার কথাও শোনা যায়। সেই সব পোষ্যের জন্য সোনার শিকল বা সোনার বকলশ তৈরি করে দেওয়াও বিরল নয়। তবে পোষা বাজপাখিদের জন্য আস্ত একটি বিমানের ব্যবস্থা করা, এমন ঘটনা ইতিহাসে তেমন একটা ঘটেছে বলে মনে হয় না।

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, ২০১৭ সাল নাগাদ সামনে এসেছিল এমনই একটি আশ্চর্য ঘটনা। ৮০টি বাজপাখিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সৌদির যুবরাজ বুক করে ফেলেছিলেন গোটা বিমান। তাদের সঙ্গে আরও কয়েকজন রাজকর্মীও ছিলেন বটে। তবে মূলত বিমান জুড়ে ছিল বাজপাখিদেরই রমরমা। রাজার ঘরের বাজেদের যাতায়াতে যাতে কোনওরকম সমস্যা না হয়, আরামে তাঁরা সফর করতে পারে, তার জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থাই ছিল বিমানে। এমনকী আকাশে উড়ানরত অবস্থায় বিমানের ঝাঁকুনিতে তাদের যাতে কোনওরকম সমস্যা না হয়, সে জন্য বিশেষ সেফটি বেল্টের ব্যবস্থাও ছিল বিমানে।

আরও পড়ুন: খারিজ করেন বিমানকর্মী হওয়ার প্রস্তাব, যেভাবে প্রথম মহিলা বাণিজ্যিক পাইলট হলেন দুর্বা

সম্প্রতি বাজেদের সফরের সেই ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানে দেখা গিয়েছে বিমানের প্রতি সিট জুড়ে বসে রয়েছে এক একটি বিশাল আকারের বাজ। তাদের সঙ্গে অবশ্য বেশ কয়েক জন রাজকর্মচারীও রয়েছেন। তাঁরাও বসে রয়েছেন বিমানের আসনে বাজেদের পাশেই।

তবে মধ্যপ্রাচ্যে নাকি এমন বাজপাখি পোষা কোনও বিরল ব্যপার নয়। পোষা বাজেদের বিমানে করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও নাকি আখছার ঘটে। ফ্যালকনের মতো শিকারী পাখিদের সঙ্গে নাকি সৌদির ঐতিহ্য জড়িয়ে। আরব উপদ্বীপের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক মর্যাদা ধরা রয়েছে ওই বাজ পোষার মধ্যে। প্রায় হাজার হাজার বছর ধরে সৌদি রাজপরিবারে সেই ঐতিহ্যের ধারা এখনও জারি রয়েছে।

শিকারি পাখির সঙ্গে সৌদি রাজপরিবারে জড়িয়ে রয়েছে বিশেষ শিকার খেলার চোখ। তাদের কাছে এই খেলাটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এইসব বাজেদের নিজস্ব পাসপোর্ট থাকে বলেও জানা গিয়েছে। ফে মালিকের সঙ্গে রীতিমতো বিমানে চেপে ভিনদেশে পাড়ি দিতে অভ্যস্ত এইসব বাজেরা। মূলত এই ধরনের শিকার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেই যায় তারা ভিনদেশে।

সাধারণ লোকেও পোষ্য নিয়ে বিমানে করে যাতায়াত করে বটে। তবে সেসব ক্ষেত্রে পোষ্যদের জায়গা হয়ে বিমানের পেটে, মালপত্র যাওয়ার জায়গায়। তবে রাজপরিবারদের বাজেদের সঙ্গে এমনটা হয় না। জানা গিয়েছে, কাতার এয়ারওয়েজের বিমানে ভ্রমণকারী কোনও ব্যক্তি সর্বাধিক ৬টি বাজপাখি নিয়ে বিমানে উঠতে পারেন। চেক-ইন লাগেজ হিসাবে বাজপাখিদের জায়গা দেয় বহু বিমানসংস্থা। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর জাতীয় পাখি কিন্তু বাজ। বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় এয়ারলাইন্সে সে কারণেই বাজের চিহ্ন দেখা যায়।

আরও পড়ুন: মৃত ভাষায় কথা বলতে পারে তোতাপাখি! যে ঘটনা চমকে দিয়েছে বিশ্বকে…

পোষ্য কুকুর-বিড়ালদের প্রতি ভালোবাসা তো অনেকেরই থাকে। তবে পোষ্য বাজেদের ভালোবেসে তাদের জন্য বিমানের টিকিট বুক করার ঘটনা কিন্তু বেশ আশ্চর্যজনক। তবে সৌদি আরব যেভাবে বাজপাখি সংক্রান্ত তাঁদের প্রাচীন ঐতিহ্যটি এখনও বজায় রেখে চলেছেন, তা অবাক করার মতোই।

More Articles