ম্যানগ্রোভের জঙ্গল আর লাল কাঁকড়ার মিছিল, ব্রিটিশ সাহেবের এই দ্বীপ যেন আনন্দমেলা
উনিশ শতকে সুদূর ইউরোপ থেকে এক সাহেব এসে খুঁজে বের করেছিলেন এই রহস্যময় এই দ্বীপ। ভোরে সেখান থেকে সূর্যোদয় দেখার অভিজ্ঞতাও এক্কেবারে আলাদা। পায়ে পায়ে আপনার সঙ্গী হবে লাল কাঁকড়ার পাল, শামুক, ঝিনুক।
সমুদ্র তো অনেক ঘুরেছেন। কিন্তু ম্যানগ্রোভে ঘেরা এ সমুদ্র আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য ভুবনে। চান সেই অপরূপ রাজ্যের খোঁজ, তাহলে বেরিয়েই পড়ুন সপ্তাহের ছুটিকে বাক্স প্যাঁটকা গুছিয়ে। লাল-হলুদ-নীলচে নানা রঙের কাঁকড়ায় ভরে থাকবে পথ। তাদের সাক্ষী করেই ঝাউবনের উৎসব পেরিয়ে আপনি পৌঁছে যাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত সমুদ্রে। এ সমুদ্রে হাপুস হুপুস স্নান সারার আগে মাথা ঘুরিয়ে দেখে নিন চারদিকের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আর তার পর যদি ফিরতে না ইচ্ছে হয়, তাহলে দায়ী কিন্তু কর্তৃপক্ষ নন।
উনিশ শতকে সুদূর ইউরোপ থেকে এক সাহেব এসে খুঁজে বের করেন রহস্যময় এই দ্বীপ। সেখান থেকেই তার নাম হয় হেনরি আইল্যান্ড। বকখালির কাছের এই নির্জন সৈকতই হতে পারে আপনার দিন দুয়েকের ঠিকানা। দ্বীপের উপরেই গড়ে উঠেছে মৎস্য দফতরের হোটেল। হোটেলের ক্যাম্পাসের ভিতর দিয়েই হেঁটে পৌঁছে যাওয়া যাবে সমুদ্রে। মৎস্য প্রকল্পের কানঘেঁষা ম্যানগ্রোভ অরণ্যের অপার নীরবতাকে পার করলেই খোঁজ মিলবে সেই অতল সম্পদের।
আরও পড়ুন: সস্তায় বিশ্বদর্শন! এক যাত্রাতেই মিটবে পাহাড়-জঙ্গল-সমুদ্রের স্বাদ
সুন্দরবনের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত হেনরি আইল্যান্ড কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্যতম আকর্ষণ। জমজমাট বকখালি থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের উপকূল তাঁদের জন্য আদর্শ, যারা ভালোবাসের নির্জনতা। কলকাতা থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত হেনরি আইল্যান্ড। ধর্মতলা থেকে বাসে কিংবা প্রাইভেট গাড়িতে ডায়মন্ডহারবার রোড ধরে পৌঁছে যাওয়া যায় জেটিঘাট স্টপে সেখান থেকে ইঁটের রাস্তা আগে রাস্তার মধ্যে হাতানিয়া-দোহানিয়া নদী পেরোতে হত। তবে সেই ল্যাটা চুকেছে সেতুনির্মাণের পরে। ফলে এখন সড়কপথেই পৌঁছে যাওয়া যায় বকখালিতে।
জানা যায়, সেই ব্রিটিশ সাহেবই নাকি ম্যানগ্রোভের বনে তৈরি করেছিলেন সভ্যতা। তাঁরই নামে এই দ্বীপের নাম হয় হেনরি আইল্যান্ড। বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী সেই হেনরি আইল্যান্ডে নিরিবিলি, শান্ত এবং একাকী সমুদ্র সৈকতের আবেদনই আলাদা পর্যটকদের কাছে। ভোরে সেখান থেকে সূর্যোদয় দেখার অভিজ্ঞতাও এক্কেবারে আলাদা। পায়ে পায়ে আপনার সঙ্গী হবে লাল কাঁকড়ার পাল, শামুক, ঝিনুক। রিসর্ট থেকে ইঁটের রাস্তা কিছুটা এগিয়ে বাঁশের সেতুতে গিয়ে মেশে। ঠিক সেখান থেকেই শুরু হয় ম্যানগ্রোভের বন। কাদায় মাখামাখি শ্বাসমূল, সুন্দরী, গেঁও, গরানের গন্ধ ও শীতল হাওয়ায় আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য জগতে। ম্যানগ্রোভের বন ছাড়াও হেনরি আইল্যান্ড জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মাছ চাষের ভেড়ি দেখার অভিজ্ঞতাও মিলবে বিনামূল্যে। হেনরি আইল্যান্ডের ম্যানগ্রোভ বনে শীতকালে পরিযায়ী পাখিরা গিয়ে ভিড় করে। তাদের কলরবে মুখরিত হয় আশপাশ। ওয়াচ টাওয়ার থেকে নানা রঙের পাখি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখার মজাও একেবারে অন্যরকম।
আরও পড়ুন: নদী-জঙ্গল মাখা রোদের আদর! এই শরতে ডাকছে পাহাড়ি মায়া-গ্রাম
তার পাশাপাশি মৎস্য দফতরের এই রিসর্টে মিলবে নানাবিধ টাটকা মাছের পদ। যেমন সুন্দর রান্না, তেমনই পকেটবান্ধব। মাছ ছাড়াও মিলবে কাঁকড়ার পদও। রিসর্টের মধ্যেই রয়েছে সুন্দর করে সাজানো পার্ক ও বেশ কয়েকটি মাছের ভেড়ি। একদিন সময় করে ঘুরে আসুন মূল বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জ, কার্গিল বিচের মতো সৈকতগুলি থেকেও। রয়েছে স্থানীয় একটি চিড়িয়াখানাও। রয়েছে বেশ কিছু পুরনো মন্দিরও। সেগুলোও ঘুরে আসতে পারেন চাইলে। আর বকখালিতে গেলে সেখানকার টাটকা ডাবের জলে গলা ভিজোতে ভুলবেন না যেন। প্রকৃতির মধ্যে গ্রামীণ পরিবেশ আপনার বুকের হাঁপরে অক্সিজেন ভরাতে চাইলে সময় করে ঘুরে আসতেই পারেন ব্রিটিশ সাহেবের এই দ্বীপ থেকে।