কানে থাকুক ক্রিসমাস ক্যারলের সুর, বড়দিনের ছুটিতে ঘুরে দেখুন গির্জার কলকাতা
Christmas 2023: বড়দিন মানেই কি শুধু চিড়িয়াখানা বা ময়দানে রোদমাখা সকাল। নাকি বাসের মাথায় খুন্তি-কড়াই চাপিয়ে সক্কলে মিলে পিকনিক! কিন্তু এর বাইরেও কলকাতার ভিতরেই রয়েছে আরেকটা কলকাতা।
কুয়াশা কাটিয়ে শীতের রোদ মেখে বেরিয়ে পড়তে কার না ভালো লাগে! আর তা যদি ক্রিসমাসের সকাল হয়, তাহলে তো কথাই নেই। বড়দিন মানেই কি শুধু চিড়িয়াখানা বা ময়দানে রোদমাখা সকাল। নাকি বাসের মাথায় খুন্তি-কড়াই চাপিয়ে সক্কলে মিলে পিকনিক! কিন্তু এর বাইরেও কলকাতার ভিতরেই রয়েছে আরেকটা কলকাতা। সেই কলকাতাও কিন্তু হেঁটে দেখতেই পারেন এই বড়দিনে।
ক্রিসমাস মানেই যীশুদিন। ক্রিসমাস বা বড়দিনের ধারণা কিন্তু আদতে এসেছে পাশ্চাত্য় থেকেই। শুধু ইংরেজ নয়। বহু ঔপনিবেশিক শক্তিই ভারতে এসেছে বহু যুগ ধরে। কেউ এসেছে থাকতে, কেউ এসেছে শোষণ করতে। এ দেশে খ্রিষ্টধর্ম যে ইংরেজদের হাত ধরেই এসেছে, এমন ধারনা কিন্তু এক্কেবারে ভুল। নানা দেশের নানা ভাবনার মানুষ এ দেশে এসেছে। তাঁদের নিজস্ব সংস্কৃতির নজির স্থাপন করেছে এই বাংলার বুকে। কলকাতার আনাচে-কানাচে থাকা গির্জাগুলি কিন্তু সেই সাংস্কৃতিক নজিরই বহন করে চলেছে কয়েকশো বছর ধরে। এই বড়দিনে হোক না সেই শিকড়ের খোঁজ, কোথায় যাবেন, আসুন দেখে নেওয়া যাক।
আরও পড়ুন:নদীর মাঝে আজও জেগে ২১২ বছরে গির্জা! পর্যটকদের কেন টানে ভারতের এই বিস্ময়?
সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল
কলকাতার জনপ্রিয়তম গির্জাগুলির মধ্যে একটি সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল চার্চ। এটি বৃহত্তমও বটে। ময়দান চত্বরের এই গির্জার মূল আকর্ষণ এর স্থাপত্য। বিরাট বাগান ঘেরা এই গির্জাটি প্রতিবছর বড়দিন উপলক্ষে দুর্দান্ত ভাবে সেজে ওঠে। দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকেরা আসেন গির্জাটি দেখতে।
সেন্ট জনস চার্চ
বিবাদিবাগের কাছে সেন্ট জনস গির্জাটি কিন্তু কলকাতার তৃতীয় প্রাচীনতম গির্জা। এই গির্জার আনাচে কানাচে আজও ছড়িয়ে রয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চিহ্নরা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নির্মিত কলকাতা শহরের প্রথম ভবনগুলির মধ্যে সেন্ট জনস চার্চ অন্যতম। গির্জার মেঝে গাঢ় নীল-কালো পাথর দ্বারা নির্মিত। সকাল আটটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে প্রাচীন এই গির্জার দ্বার।
আর্মেনিয়ান চার্চ
কলকাতা প্রাচীনতম চার্চগুলির মধ্যে অন্যতম এই আর্মানি গির্জা। রবিঠাকুরের সহজ পাঠে উল্লেখ রয়েছে এই আর্মানি গির্জার। ১৬৮৮ সালে প্রথম বার তৈরি হয় এই চার্চ। আর্মেনীয় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে ১৭২৪ সালে এই গীর্জার পুনর্নির্মাণ হয়। চার্চের ভিতরে রয়েছে একটি ছবির সংগ্রহশালা। এই চার্চের ভিতরের মার্বেলের স্থাপত্য কীর্তি কিন্তু মুগ্ধ করার মতোই। বড়দিনে কিন্তু ঢুঁ মারতে পারেন সেখান থেকেও। তবে ২৫ ডিসেম্বর কিন্তু এই গির্জায় যীশুদিবস পালন করা হয় না। ৬ জানুয়ারির দিনটাকেই ক্রিসমাস হিসেবে পালন করা হয় আর্মানি গির্জাতে।
সেন্ট অ্যান্ড্রুজ চার্চ
ডালহৌসি অঞ্চলের এই প্রাচীন গির্জার খবর অনেকেই রাখেন না। স্কটিশ গির্জাগুলির অন্যতম এই সেন্ট অ্যান্ড্রুজ চার্চ। ১৮১৮ সালে উদ্বোধন বয় এই গির্জার। ১৮৩৫ সালে গির্জার চূড়ায় একটি মূল্যবান ঘড়ি বসানো হয়। গির্জার ভিতরে রয়েছে দুর্লভ সব তৈলচিত্র। তবে যখনতখন গেলে কিন্তু খোলা পাবেন না গির্জাটি। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে স্কটিশ এই চার্চ।
সেন্ট জেমস চার্চ
কলকাতার পুরনো চার্চগুলির মধ্যে রয়েছে সেন্ট জেমস চার্চও। অনেকেই এটিকে চেনেন জোড়া গির্জা হিসেবে। প্রথমে আমহার্ট স্ট্রিট অঞ্চলে ছিল গির্জাটি। ১৯৫৯ নাগাদ ভেঙে পড়ে গির্জাটি। এর পরে ১৮৬২ সালে এন্টালি অঞ্চলে গড়ে ওঠে এই গির্জাটি।
ক্রাইস্ট দ্য কিং চার্চ
পার্কস্ট্রিটে পা রাখলেই এই সময় মনটা খুশি খুশি হয়ে ওঠে। এই পার্কস্ট্রিটেও কিন্তু রয়েছে বিখ্যাত একটি চার্চ, যার নাম ক্রাইস্ট দ্য কিং চার্চ। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, চার্চের ভিতরে মাতা মেরির অনিন্দ্যসুন্দর মূর্তি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। সকাল সাড়ে ৬টা বাজতে না বাজতে খুলে যায় এই গির্জার দরজা। খোলা থাকে সন্ধে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: কোন রেস্তরাঁয় কোন পদ সেরা? এই বড়দিনে স্বাদের সুলুক সন্ধান
এই বড়দিনে তবে গির্জা-সফরই হোক না! এই শহরের বুকে যে এমন কত গুপ্তধন ছড়িয়ে রয়েছে, তার খবর অনেকেই জানেন না। সেই সব প্রাচীন স্থাপত্যের নকশা, ভাস্কর্য, সবটাই অবাক করার মতো। আর তা অন্য কোনও ভ্রমণের চেয়েও কিন্তু কোনও অংশে কম নয়। ফলে ক্রিসমাসের মরসুমে শীতের আমেজ গায়ে মেখে ঘুরে আসতেই পারেন কলকাতা শহরের পুরনো গির্জার অলিতে-গলিতে।