সোশ্যাল দুনিয়ার নতুন ট্রেন্ড 'স্টোরি’
বিগত কয়েক বছরে ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম সহ সব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে স্টোরির জনপ্রিয়তা হু হু করে বেড়েছে। প্রায় সব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মই স্টোরি বিভাগ শুরু হয়েছে। ইনস্টাগ্রাম ছাড়াও ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল নিউজ, লিঙ্কডইন সহ প্রায় সব জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মেই এখন চাইলেই স্মার্টফোন থেকে স্টোরি পোস্ট করা সম্ভব। স্টোরির এই বিপুল জনপ্রিয়তার জন্য আগের থেকে অনেকটা ফিকে হয়েছে নিউজ ফিড পোস্ট। কিন্তু হঠাত কীভাবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছল সোশ্যাল মিডিয়ার নতুন এই ফর্ম্যাট?
কয়েক বছর আগে পর্যন্তও সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মগুলির নিউজ ফিডে পোস্ট করতেন গ্রাহকরা। সেখানে পোস্ট করার জন্য প্রয়োজন একটি হরিজন্টাল ছবি অথবা ভিডিও। পোস্ট করার আগে কয়েক শব্দ লিখতেন অনেকেই। বিশেষজ্ঞদের মতে ডেক্সটপ কম্পিউটারের কথা মাথায় রেখে এই ফর্ম্যাট তৈরি হওয়ার কারণে স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তা বাড়ার পরে তা বেমানান হতে শুরু করে। আজকাল বেশিভাগ গ্রাহক নিজের ফোন থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করার কারণে স্মার্টফোনের জন্য একটি পৃথক ফর্ম্যাটের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আর তখনই আত্মপ্রকাশ করে স্টোরি। স্ন্যাপচ্যাটের মাধ্যমে এই ফর্ম্যাটের (স্ন্যাপ) হাতেখড়ি হলেও ধীরে ধীরে সব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম নতুন ফর্ম্যাটকে গ্রহণ করতে শুরু করে। স্টোরিতে ব্যবহার হয় ভার্টিকাল ছবি ও ভিডিওআর স্মার্টফোনে থাকে একটি ভার্টিকাল ডিসপ্লে। তাই স্মার্টফোন থেকে স্টোরি দেখার সময় ইমার্সিভ অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। পকেট থেকে দ্রুত মোবাইল বের করে একটা ছবি অথবা ভিডিও তুলে এক ট্যাপে তা স্টোরিতে পোস্ট করে দেওয়া সম্ভব। স্মার্টফোন থেকে সহজে ব্যবহার করতে পারার কারণে খুব কম সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া স্টোরি জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেছে।
তবে শুধুমাত্র স্টোরি পোস্ট করা নয়, স্টোরি দেখার জন্যেও স্মার্টফোন আদর্শ ডিভাইস। যেহেতু স্টোরিতে ভার্টিকাল ছবি ও ভিডিও পোস্ট হওয়ার কারণে মোবাইল স্ক্রিনে গোটা স্ক্রিন জুড়ে তা দেখা যায়। এছাড়াও স্টোরিতে থাকে অটোমেটিক টাইমার। আপনি ট্যাপ অথবা সোয়াইপ না করলেও নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরবর্তী স্টোরি ওপেন হতে থাকবে। এই কারণেই অবসর সময় পেলেই অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্টোরি দেখতে শুরু করে দেন। স্মার্টফোন থেকে স্টোরি পোস্ট করা ও দেখার প্রক্রিয়া খুব সহজ হওয়ার কারণেই স্টোরি এত দ্রুত জনপ্রিয় হয়েছে। তবে এটাই একমাত্র কারণ নয়।
নিউজ ফিডে কোন পোস্ট করলে তা চিরতরের জন্য আপনার সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে থেকে যায়। ফলে পোস্ট করার আগে অনেক কিছু ভাবতে হয়। অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন স্টোরি পোস্ট করলে তা ২৪ ঘণ্টা দেখা যায়। এই কারণে দৈনন্দিন জীবনে কী হচ্ছে তা গোটা দুনিয়ার সামনে তুলে ধরার জন্য আদর্শ এই ফর্ম্যাট। আজকাল সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে শুতে যাওয়ার সময় পর্যন্ত পকেটে ফোন নিয়ে ঘোরেন প্রায় সকলেই। তাই গোটা দিনে যা যা হচ্ছে তা স্মার্টফোন ক্যামেরায় বন্দি করে দ্রুত স্টোরি পোস্ট করা যায়। সারা দিনে যত খুশি স্টোরি পোস্ট করা সম্ভব। যেহেতু এই সব পোস্ট কয়েক ঘণ্টা পরে নিজে থেকেই ডিলিট হয়ে যাবে তাই পোস্ট করার আগে খুব বেশি ভাবনা চিন্তা করার প্রয়োজন হয় না। তাই তরুণ প্রজন্মের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে নতুন এই ফর্ম্যাট।
এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ার নিউজ ফিডে পোস্ট করলে মোট কত মানুষ সেই পোস্টে লাইক ও কমেন্ট করেছেন তা গোটা বিশ্বের সামনে চলে আসে। যা অনেকের মধ্যে সামাজিক চাপ সৃষ্ট করে। অন্যদিকে স্টোরিতে কে কে লাইক অথবা কমেন্ট করলেন তা শুধুই যে ব্যক্তি স্টোরি পোস্ট করেছেন তিনি দেখতে পাবেন। তাই লাইক-কমেন্টের পরিমাণ ব্যক্তিগত রাখা সম্ভব হয়। আর এই কারণেই অনেকে নিউজ ফিডের পরিবর্তে স্টোরি পোস্ট করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।
সব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মেই যে কোন স্টোরি ২৪ ঘণ্টা লাইভ থাকে। তাই যারা স্টোরি দেখছেন তাঁদের মধ্যে কিছু একটা ফসকে যাওয়ার মনোভাব তৈরি হয়। কারণ যে কোন সময় সেই পোস্ট সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকে উবে যেতে পারে। তাই নিজের প্রিয়জন অথবা পছন্দের কোম্পানিটি কোন স্টোরি পোস্ট করলে অনেকেই সব কাজ রেখে তা দেখা শুরু করে দেন। আর একবার একটা স্টোরি দেখতে শুরু করলে নিজে থেকেই পরপর আরও স্টোরি ওপেন হতে শুরু করে। যা এই ফর্ম্যাটকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে স্টোরির জনপ্রিয়তা হু হু করে বাড়ার পরেই ব্র্যান্ডগুলি বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্যেও এই ফর্ম্যাটকেই বেছে নিচ্ছেন। বিগত কয়েক বছরে প্রায় সব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মেরই স্টোরির মাধ্যমে দেখানো বিজ্ঞাপনের আয় বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। আপনার প্রিয়জনের পোস্ট করা স্টোরি দেখার মধ্যেই সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মগুলি একই ফর্ম্যাটে বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু করেছে। অনেকেই নিউজ ফিডে বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন দেখার থেকে স্টোরির মধ্যে বিজ্ঞাপন দেখাকে পছন্দ করছেন।
পরিসংখ্যান জানাচ্ছে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪১৫ কোটি মানুষ নিজের মোবাইল ফোন থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। আগামী কয়েক বছরে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। তাই অদূর ভবিষ্যতে স্টোরির জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে বলেই মনে করছে সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলি। আর সেই কারণেই বিজ্ঞাপনদাতাদের নজর কাড়তে নিয়মিত স্টোরির মধ্যে নতুন নতুন ফিচার নিয়ে হাজির হচ্ছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলি। আগে স্টোরির মধ্যে শুধুমাত্র ছবি অথবা ভিডিও পোস্ট করা গেলেও এখন পোস্টের উপরে ইমোজি, পোল, অথবা প্রশ্ন করা সম্ভব হচ্ছে। যা আপনাকে স্ক্রিনের অপর প্রান্তে থাকা মানুষটির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সাহায্য করছে।