জন্ম কলকাতাতেই! জানেন কে ছিলেন অলিম্পিকে ভারতের প্রথম মহিলা প্রতিদ্বন্দ্বী?

Olympic 2024: সেই সময় তিরঙ্গা পতাকা ছিল না। ইউনিয়ন জ্যাক সম্বলিত পতাকা কাঁধে তুলেই অলিম্পিকের ময়দানে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন নোরা পোল্লে।

রমরমিয়ে পথচলা শুরু করেছে অলিম্পিক ২০২৪। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত এই অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় ভারতের শুরুটাও মন্দ না। অন্যান্য দেশের থেকে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও, অলিম্পিকের অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় এবারে ভারতের পদক জয়ের সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। বিশেষ করে ভারতের মেয়েরা একের পর এক পদক নিয়ে এসে ভারতের নাম উজ্জ্বল করতে শুরু করেছেন। ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতে ভারতকে প্রথম পদক এনে দিয়েছেন মনু ভাকর। এই ইভেন্টে প্রথম কোনও ভারতীয় মহিলা পদক জিতেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতেও অলিম্পিকে ভারতীয় মেয়েদের ইতিহাস গড়ার ধারা বজায় থেকেছে। তবে ভারতের হয়ে অলিম্পিকের ইতিহাসে প্রথমবার কোন মহিলা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, সেই ইতিহাস অনেকেরই অজানা। ১৯২৪ সালে পরাধীন ভারতে একজন মহিলা টেনিস খেলোয়াড় সকলকে চমকে দিয়ে অলিম্পিকে ভারতীয় মেয়েদের প্রতিযোগিতার গোড়াপত্তন করেন। সেই মহিলার জন্ম এই বাংলাতেই। আজ, ১০০ বছর পর তাঁরই উত্তরাধিকারীরা ভারতের নাম উজ্জ্বল করছেন বিদেশের ময়দানে।

সেই সময় তিরঙ্গা পতাকা ছিল না। ইউনিয়ন জ্যাক সম্বলিত পতাকা কাঁধে তুলেই অলিম্পিকের ময়দানে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন নোরা পোল্লে। ভারতের মতো দেশের হয়ে সেই সময় অলিম্পিকের মতো বিখ্যাত জায়গায় প্রতিনিধিত্ব করা খুবই গর্বের ছিল নোরার কাছে। অন্য কোনও জনপ্রিয় খেলা হলে হয়তো, নোরা এতদিনে ভারতের আইকন হিসেবে পরিচিত পেতেন। ভারতে টেনিসের জনপ্রিয়তা এতটাও নয়, এখনও। তাই, প্রথম ভারতীয় মহিলা খেলোয়াড় হলেও কোনওদিনই আইকন হয়ে উঠতে পারেননি নোরা। তবে নিজের টেনিস দক্ষতার কারণে বিশ্বে নিজের পরিচয় তৈরি করেছিলেন তিনি।

নোরার জন্ম কলকাতায়। তবে, পরবর্তীতে তাঁর পরিবার কলকাতা ছেড়ে ব্রিটেনের ইস্টবর্নে চলে যায়। নোরার আরও দুই ভাই-বোন ছিল। তাঁদের পড়াশোনা পুরোটাই স্কটল্যান্ডে। ১৯১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে নোরার বিয়ে হয় সিডনি ট্রেপেস পোল্লের সঙ্গে। বিয়ের পর নোরার স্বামী ভারতীয় আর্মিতে মেজর পদে নিযুক্ত হন। তারপরেই, নোরার ফের ভারত যাত্রা শুরু হয়। ১৯২১ সালে জিব্রাল্টার প্রণালী অতিক্রম করে নোরা ফিরে আসেন ভারতে।

আরও পড়ুন- গত অলিম্পিকে খারাপ হয়ে যায় বন্দুক! প্যারিসে যেভাবে ব্রোঞ্জ জয় মনু ভাকরের

লন টেনিস নিয়ে প্রথম থেকেই নোরার মনে আগ্রহ ছিলই। ব্রিটেনে লন টেনিসের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। ফলে সেখানেই টেনিসের প্রতি তাঁর আকর্ষণ তৈরি হয়। ১৯২৪ সালে বিরাট সুযোগ আসে তাঁর কাছে। সেই বছর ভারতে শুরু হয়েছিল নিজেদের ন্যাশনাল অলিম্পিক গেমস। এই প্রতিযোগিতায় যারা ভালো ফল করেছিলেন তাদেরকে ভারত পাঠিয়েছিল ১৯২৪ সামার অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে। তখন থেকেই ভারতে শুরু হয় লন টেনিসের চল। সেই প্রথমবার ভারত থেকে কোনও টেনিস খেলোয়াড় বিশ্বের ময়দানে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে যান।

জুয়ান-লেস-পিন্স টুর্নামেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিজের খেলার স্টাইল অনেকটা পাল্টে ফেলেন নোরা। সেটাই ছিল তাঁর অলিম্পিকের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ। লন টেনিসে উওমেনস ডাবলসে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তাঁর সঙ্গী ছিলেন মিসেস মুস্কার। সেমিফাইনালে টেনিস লেজেন্ড সুজান লেংলেন ও এফজে গৌল্ডের কাছে পরাজিত হলেও, ১৯২৪ প্যারিস অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছিলেন নোরা।

তবে, ১৯২৪ সালে অলিম্পিকে তিনি ভারতের হয়ে কোনও পদক জিততে পারেননি। প্রথম ম্যাচের প্রথম রাউন্ডেই পিছিয়ে যাওয়ার পরে পরের দুই রাউন্ডে দারুণ কাম ব্যাক করে প্রথম ম্যাচটি জিতেছিলেন তিনি। গ্রিসের খেলোয়াড় লেনা ভালাউরিতু-স্কারামাগার সঙ্গে সিঙ্গেলসে প্রতিদ্বন্দ্বীকে ১-৬, ৬-৩ ও ৬-২ সেটে পরাজিত করেন নোরা। তবে, এই ম্যাচ জয়ের পরে আর মাত্র দু'টি ম্যাচ জিততে পেরেছিলেন তিনি। তারপরেই, লিলি আলভারেজের সঙ্গে ম্যাচে পরাজিত হয়ে সিঙ্গেলস টুর্নামেন্ট থেকে বেরিয়ে যান নোরা। আশা ছিল হয়তো মিক্স ডাবলসে ভালো পারফর্ম করবেন তিনি ও তার সঙ্গী সিডনি জেকব। তবে প্রথম ম্যাচের দ্বিতীয় রাউন্ডেই বিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে পরাজিত হয়ে অলিম্পিক ১৯২৪ থেকে বেরিয়ে যান নোরা।

আরও পড়ুন- ভয় দেখাচ্ছে গরমের লাল চোখ! যে ভাবে ১০০ বছরে আমূল বদল প্যারিস অলিম্পিকে

প্রফেশনাল কেরিয়ারও খুব একটা বড় ছিল না নোরার। ইংল্যান্ডে বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন বটে, তবে সেগুলো নিয়ে কোনওদিনই খুব একটা আলোচনা হয়নি। টার্নব্রিজ ওয়েলস, সাউথ ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপের মতো কিছু টুর্নামেন্টে নোরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। তবে, পারর্ফম্যান্স খুব একটা নজরকাড়া ছিল না। আর্কাইভ ডেটা বলে ১৯২৪ সালের অক্টোবর মাসে তিনি নাকি নিজের জীবনের শেষ প্রফেশনাল টেনিস ম্যাচটি খেলেছিলেন। এরপরে আর কোনওদিনই তাঁকে প্রফেশনাল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি।

ভারতীয় মহিলা টেনিস খেলোয়াড়রা এখনও পর্যন্ত ভারতের হয়ে অলিম্পিকে পদক আনতে পারেননি। ১৯২৪ সালে নোরা যে ধারার সূত্রপাত করেছিলেন, সেই পথে হেঁটে অনেক মহিলা টেনিস খেলোয়াড়ই অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেছেন। তবে, সাফল্য এখনও অধরাই। ২০২৪ অলিম্পিকে ভারতের টেনিস খেলোয়াড়রা এখনও তেমন চমক দেখাতে পারেননি। তবে হয়তো ভবিষ্যতে ভারতের মহিলা লন টেনিসের ময়দানে পদকজয়ের সম্ভাবনা নিয়ে নোরার কোনও উত্তরসূরি অবশ্যই আসবেন। দেশ সেই স্বপ্নই দেখে।

More Articles