এবার ব্রেক আপ হলেই পুরুষদের জেল! কেন এত ভয়ানক ভারতীয় আইনের নতুন ধারা ৬৯?

Section 69 Of The New Law: যদি বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা হয় এবং সেই বিয়ে পরে না করা হয় তাহলে ওই ব্যক্তির ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

এতকাল ভারতীয় দণ্ডবিধি ১৮৬০ মেনেই দেশে বিভিন্ন অপরাধের যোগ্য শাস্তির বিধান দেওয়া হতো। ভারতীয় দণ্ডবিধি বা ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের বদলে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা কার্যকর করা হয়েছে এই দেশে। এই নতুন সংহিতা অনুযায়ী সরকার ভারতীয় আইনে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। নতুন এই দণ্ডবিধিতে যুক্ত হয়েছে ধারা ৬৯। যা রীতিমতো ভীতিপ্রদ। বিয়ে বা চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসকে অপরাধ হিসেবে দেখে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা। ন্যায় সংহিতার ৬৯ ধারায় বলা হয়েছে, যদি বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা হয় এবং সেই বিয়ে পরে না করা হয় তাহলে ওই ব্যক্তির ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আইনে সমাজের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এই আইনটি হাজার হাজার নারীকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতা জোগাবে। যারা বিয়ের প্রতিশ্রুতি পেয়ে প্রতারিত হয়েছেন, হেনস্থার শিকার হয়েছেন তাঁদের অস্ত্র হয়ে উঠবে এই আইন। অন্যদিকে এর অপব্যবহার হওয়ার আশঙ্কাও ব্যাপক। কোনও অভিযুক্তের পক্ষে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা কঠিন হতে পারে এই আইনে।

আরও পড়ুন- যে কোনও যোগাযোগই রাষ্ট্রের হাতে? যে ভয়াবহ টেলিকম আইন ২০২৩ চালু হচ্ছে দেশে

ধারা ৬৯ কী বলছে?

আইনে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি, প্রতারণামূলক উপায়ে বা কোনও মহিলাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূরণ করার কোনও অভিপ্রায় ছাড়াই, মহিলার সঙ্গে যৌন মিলন করে, এই ধরনের যৌন মিলন ধর্ষণের অপরাধের সমান নয় তবে তার কারাদণ্ড হবে। এই কারাদণ্ডের মেয়াদ দশ বছর পর্যন্ত হতে পারে এবং জরিমানাও দিতে হবে।”

'প্রতারণামূলক' বলতে এই আইনে "প্রলোভন, বা চাকরি বা পদোন্নতির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, অথবা পরিচয় গোপন রেখে বিয়ে করা"-র মতো বিষয়গুলিকে বোঝানো হয়েছে।

এর আগে, এই ধরনের মামলাগুলি আইপিসির ধারা ৯০-এর অধীনে বিচার করা হতো। সেখানে বলা ছিল, ‘সত্যের অপলাপ ঘটে থাকলে' কোনও মহিলা যৌন মিলনে সম্মতি দিতে পারে না। এরপর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা প্রযুক্ত হতে পারে, অর্থাৎ ধর্ষণ। আগের আইনে বলা ছিল, যদি কোনও মহিলা আঘাতের ভয়ে বা ভুল তথ্য জেনে যৌন মিলনে সম্মতি দিয়ে থাকেন বা যদি ভয় থেকে বা ভুল ধারণা থেকে যৌনতা করে থাকেন তাহলে সেটা সম্মতি হিসেবে গ্রাহ্য হবে না।

পুলিশ আধিকারিকরা বলছেন, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৯ ধারায় বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়া পুরুষদের গ্রেফতার করা এখন অনেক সহজ। ধারা ৬৯ অনুযায়ী 'নারীর সতীত্ব'-কে আইনত একটি 'গুণ' হিসেবে দেখা হয়েছে। পাশাপাশি মহিলাদের 'সুরক্ষা' করার পিতৃতান্ত্রিক ধারণাটিও রয়েছে এই ধারার নেপথ্যে।

আইনজীবীদের যুক্তি, আদালতে বিবাহের অভিপ্রায় প্রমাণ করা এবং এটিকে 'মিথ্যা প্রতিশ্রুতি' হিসাবে প্রমাণ করা কঠিন। 'বিয়ের প্রতিশ্রুতি' যে সত্য তা বিয়ে না হলে কীভাবেই বা কেউ প্রমাণ করতে পারে? আসল উদ্দেশ্য যে যৌনতা নয়, বিয়েই করা তা কীভাবে পরিষ্কার প্রমাণ দিয়ে বোঝানো সম্ভব? আইনজীবীরা বলছেন, বিয়ে করার ইচ্ছা থাকলেও বিভিন্ন কারণে সম্পর্ক শেষ হতে পারে। কাউকে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল প্রমাণ করা তাই স্বাভাবিকভাবেই কঠিন।

আরও পড়ুন- ভোলেবাবা, সদগুরু, রামদেবের ‘ভণ্ডামির’ বিরুদ্ধে আইন আনা কতটা জরুরি?

বিশ্বের কোথাও এই ধরনের আইন নেই। এই আইনের ফলে যে কোনও প্রেমের সম্পর্ক ভাঙলেই, ব্রেক আপ হলেই ওই মহিলা সঙ্গীর অভিযোগ দায়ের করার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে তা সে সম্পর্ক যেভাবেই শেষ হোক না কেন।

এই আইনে প্রাথমিক তদন্তের পরই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা যাবে। পুলিশকে পরিস্থিতিগত প্রমাণ জোগাড় করতে হবে যে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি ছিল এবং তা দিয়েই যৌন মিলন হয়েছিল, যা আদালতে প্রমাণ করা কঠিন হবে। মেসেজ, কল রেকর্ডিং এবং ছবি প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তাতেও এমনটা প্রমাণ করা কঠিন যে প্রতিশ্রুত বিয়ের ভিত্তিতেই যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছিল। এই আইনে গ্রেফতার হলে বছরের পর বছর আদালতে মামলা চলবে এবং অভিযুক্তের বাকি জীবন তুমুল ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

More Articles