সিকিমের নির্জনতম গ্রাম আপনার অপেক্ষায়! পুজোর ভিড় এড়াতে প্ল‍্যান করুন আজই

Offbeat Sikkim: সাং, পূর্ব সিকিমের একটি ছোট্ট গ্রাম। ঠিক যেরকম চান প্রকৃতিপ্রেমী মানুষরা।

অফবিট। আজকাল এই শব্দটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। বিশ্বায়ন এবং উদার অর্থনীতির জোরে বাড়ছে মধ্যবিত্তর সংখ্যা, বাড়ছে তাদের ক্রয়ক্ষমতা, এবং স্বাভাবিকভাবেই দ্রুত এবং ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে তারা ভ্রমণ করতে চাইবেই। তাই অফ সিজন বলে আজকাল সেরকম কিছু হয় না। শুধু ভরা বর্ষায় মানুষ কম পাহাড়ে যান। আর অফ সিজন শব্দটির জনপ্রিয়তা যত কমেছে, ততই বেড়েছে অফবিটের জনপ্রিয়তা। জনপ্রিয় স্থানগুলিতে আজকাল এতই ভিড় হয় যে, শান্তিপ্রিয় মানুষ, যাঁরা পাহাড়ের কোলে, সবুজের ছায়ায়, একটু নিরিবিলিতে সময় কাটাতে চান, তাঁরা সবাই এখন খোঁজ করছেন অফবিট জায়গার। এরই মধ্যে, মাত্র দু'-তিন বছরেই অফবিট অনেক পর্যটনস্থলও আবার জনপ্রিয় হয়ে গেছে। তাই প্রকৃতিপ্রেমীদের দুর্ভোগের আর শেষ নেই।

তবে তাঁদের জন্য সুখবর আছে। বিশেষ করে তাঁদের জন্যে, যাঁরা সিকিম যেতে ভীষণ ভালবাসেন। কিন্তু তাঁদের বরাবরই অভিযোগ, যে সিকিমের বেশিরভাগটাই এত গ্যা‌ংটক-কেন্দ্রিক, আর গ্যাংটক এখন এত ঘিঞ্জি হয়ে গেছে, তাঁদের খুব সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে, আপনি যদি উত্তর সিকিম যেতে চান, তাহলে আপনার কাছে গ্যাংটক ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। বা বলা যেতে পারে, ছিল না। কিন্তু এখন আছে। সুখবরটা হলো, সিকিমে এক নতুন অফবিট স্থানের শুধু খোঁজ পাওয়া গেছে তা নয়, সেই স্থান থেকে উত্তর সিকিম দ্রুত যাওয়ার উপায়ও পাওয়া গেছে।

আমাদের কে এই সুখবর এনে দিয়েছেন ভ্রমণ সংস্থা 'হলিডে৯৯৯'-এর কর্ণধার অভীক গুপ্ত। তিনি খোঁজ দিয়েছেন সাং-এর। পূর্ব সিকিমের একটি ছোট্ট গ্রাম। ঠিক যেরকম চান প্রকৃতিপ্রেমী মানুষেরা। পাহাড়ের কোলে একদল শান্ত, নিরিবিলি, একটি ছবির মতো অপূর্ব সুন্দর গ্রাম, সারাদিন ধরে যেখানে শুধুমাত্র শুনতে পাবেন হাজার হাজার পাখির গান। এই গ্রামে নানা ধরনের পাখির বাস। অভীক জানালেন যে, পাখিদের সমীক্ষা শুরু হবে পুজোর পর।

আরও পড়ুন: দিঘা-পুরী-দার্জিলিং নয়, বাঙালির মনে জায়গা পাকা করছে চটকপুর

এই গ্রামে পৌঁছনোও ভীষণ সোজা। বিখ্যাত রুমটেক মনাস্ট্রির কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন। সিকিমের সবচেয়ে বৃহৎ মনাস্ট্রি। গ্যাংটকের কাছে একটি বিখ্যাত জায়গা। সেই রুমটেক মনাস্ট্রি থেকে খানিক দূরত্বেই সাং। সেই সাং-এ বুটিক ভিলা চালু করেছেন অভীকরা এবং সেই ভিলাকে কেন্দ্র করেই গড়ে তোলা হচ্ছে সেই অঞ্চলটিকে।

সাং-এর নিসর্গ চোখ কাড়বেই

শুধু নৈসর্গিক দৃশ্য নয়, অভীক আমাদের আরও অনেক কারণ দিচ্ছেন সাং ভ্রমণ করে আসার। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, সাং-এর পাখির সমারোহর কথা। তিনি দাবি করছেন, পক্ষীপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য হলো এই সাং। সেই কারণেই সমীক্ষা করে তারা দেখতে চান, কোন প্রজাতির পাখি কত সংখ্যায় ওই গ্রামে আছে। সেক্ষেত্রে ওই অঞ্চলের পর্যটনকেও আরও বেশি মজবুত করতে পারবেন তাঁরা।

অভীক আরও জানাচ্ছেন যে, ওই গ্রাম থেকে খানিক দূরেই আছে পোখরি, যেখানে ট্রেক করে যাওয়া যায়। অর্থাৎ, শুধু নিরিবিলিতে গিয়ে বিশ্রাম নয়, চাইলে ট্রেক করার রোমাঞ্চও উপভোগ করার অবকাশ রয়েছে এই গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দারাই আপনাকে নিয়ে যাবেন, সাহায্য করবেন গাইড হিসেবে। আরও একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকার সুযোগ থাকবে আপনার জন্য। সাং-এর উল্টোদিকের পাহাড় একেবারে ঘন জঙ্গল, এবং সেই জঙ্গলে আপনি দেখা পেতে পারেন রেড পান্ডার। হ্যাঁ, শুনতে অবিশ্বাস‍্য লাগলেও অভীকবাবু জানাচ্ছেন যে, এই বিরল অভিজ্ঞতা সাং-এ আপনার হবেই।

Rumtek

রুমটেক বুটিক নেস্ট

অবস্থানগত দিক থেকেও সাং একটি দুর্ধর্ষ স্থান। এটি শুধুমাত্র যে গ্যাংটকের কাছে, তা নয়। সাং থেকে পূর্ব এবং উত্তর সিকিমের সমস্ত পর্যটনস্থল যাওয়া সম্ভব, খুব সহজে এবং গ্যাংটকের থেকে বেশ দ্রুতই পৌঁছনো সম্ভব। উত্তর সিকিম যাওয়ার পথের সিংথাম মঙ্গন অনেক কম সময়ে আপনি পৌঁছে যাবেন যদি সাং থেকে রওনা দেন। এছাড়া, সাং থেকে দু'-ঘণ্টার মধ্যে নামচি আর আড়াই ঘণ্টার মধ্যে রাবাংলা গিয়ে ঘুরে আসা যায়। সাং থেকে পেলিং যেতে লাগে মাত্র চার ঘণ্টা। আর এখানে থাকার বন্দোবস্ত রয়েছে রুমটেক বুটিক নেস্ট-এ, যেটি একটি ডিলাক্স ভিলা। যার কর্ণধার রাজা দাশগুপ্ত ও রাখি মিত্র সরকার। এখানে থেকেই ঘোরা যাবে সাং।

একেবারে নতুন একটি জায়গা, যেখানে এখনও বেশি পর্যটকের আগমন হয়নি। এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। সামনে শীত আসছে। উপভোগ করে আসুন পাহাড়ের কোলে এই ছোট্ট নৈসর্গিক গ্রামের সৌন্দর্য।

More Articles