সুড়ঙ্গের অন্ধকারে ভয়াবহ ৫ দিন! মার্কিন খননযন্ত্র বাঁচাতে পারবে ৪০ শ্রমিকের জীবন?
Uttarakhand Tunnel Collapse: আদৌ কি সেই সুড়ঙ্গ আর ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরনো হবে তাঁদের? কোনওদিনও কি দিনের আলো দেখা হবে আর ওই চল্লিশ শ্রমিকের? সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই ঘনাচ্ছে সংশয়।
দেখতে দেখতে পাঁচ দিন। প্রায় ৯৬ ঘণ্টা। সময় যত এগোচ্ছে, ততই অপেক্ষা দীর্ঘতর হচ্ছে। পাঁচদিন ধরে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশি জেলার কাছে সুড়ঙ্গের ভিতরে আটকে রয়েছেন ৪০ জন নির্মাণকর্মী। তাঁদের জীবন আটকে রয়েছে একটা সুরু সুতোর উপরে! আদৌ কি সেই সুড়ঙ্গ আর ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরনো হবে তাঁদের? কোনওদিনও কি দিনের আলো দেখা হবে আর ওই চল্লিশ শ্রমিকের? সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই ঘনাচ্ছে সংশয়।
চারধাম দর্শন সহজ করে তুলতে হাইওয়ে গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। তার জন্য শুরু হয়েছিল কাজও। গত ১২ নভেম্বর ঘটে বিপর্যয়। যমুনোত্রী-গঙ্গোত্রী জাতীয় সড়কের সিল্কিয়ারা ও বারকোটের মধ্যে যে ৪.৫ কিলোমিটার লম্বা সুড়ঙ্গ তৈরি হচ্ছে, তা হঠাৎই ভূমিধসের কবলে পড়ে। যার ফলে আটকে পড়েন ৪০ জন শ্রমিক। ওই দিন ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ১০০ মিটার লম্বা একটি ছাদ ভেঙে পড়ে। আর সুড়ঙ্গ থেকে বেরোনোর রাস্তা খুঁজে পাননি ওই শ্রমিকেরা।
উদ্ধারকারীরা ইতিমধ্যেই পৌঁছেছেন ঘটনাস্থলে। নানা কৌশল-কসরত করে তাঁদের বের করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে সফল হচ্ছে না একটাও। আটকে পড়া শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবারদাবার , ওষুধ পাঠানো হচ্ছে। পাইপের মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে অক্সিজেনও। উদ্ধারকারীরা বন্দিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তাদের মানসিক ভরসা দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে আশা যেন। পাঁচ দিন কাটলেও এখনও আশার কথা শোনাতে পারছে না উদ্ধারকারীদল।
আরও পড়ুন: ৭০ ঘণ্টা ধরে টানেলে আটকে ৪০ শ্রমিক! কেন বিতর্কিত উত্তরাখণ্ডের ৮৫৩ কোটির এই সুড়ঙ্গ?
২০১৮ সালে থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে ফুটবল দলের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। সে সময় তাদের বাঁচাতে থাইল্যান্ডের তো বটেই, নরওয়ে থেকেও এসেছিল বিশেষ একটি উদ্ধারকারী দল। ইতিমধ্যে সেই দুটি দলও শ্রমিকদের উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে। দিল্লি থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে একটি মার্কিন অগার মেশিন। দুর্ঘটনাস্থল থেকে চিন্যালিসর বিমানবন্দরের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত। বিমানবন্দর থেকে সোজা ঘটনাস্থলের নিয়ে যাওয়া হয়েছে মেশিনটিকে। এই সব মেশিন দিয়ে শ্রমিকদের কাছাকাছি পৌঁছতে পারবেন উদ্ধারকারীরা, তেমনটাই আশা করা হচ্ছে।
সুড়ঙ্গের ভেঙে পড়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দিয়ে একটি যাতায়াতার রাস্তা খনন করা হবে এই মেশিনটি দিয়ে। প্যাসেজটি পরিষ্কার হয়ে গেলে সেখানে ৮০০ মিলিমিটার ও ৯০০ মিলিমিটার ব্যাসের হাল্কা ইস্পাত পাইপ বসানো হবে তাতে। যাতে তার মাধ্যমে নিরাপদে সুড়ঙ্গের ওই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে উল্টোদিকে হামাগুড়ি দিয়ে নিরাপদে বেরিয়ে যেতে পারবেন বন্দিরা। আপাতত এটাই পরিকল্পনা।
উদ্ধারকাজ ভালোই এগোচ্ছিল। গত ৭০ ঘণ্টা এর পিছনে বিপুল পরিশ্রমও করেন উদ্ধারকারীরা। তবে ফের টাটকা ধস নামায় সমস্যায় পড়েছে উদ্ধারকারী দলগুলি। মার্কিন ওই মেশিনটি ব্যবহার করার জন্য বেশ কয়েক ঘণ্টা খরচ করে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছিল। তবে নতুন করে ভূমিধসের জন্য সেই প্ল্যাটফর্মটিও নষ্ট হয়। ফের নতুন করে প্ল্যাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করছেন উদ্ধারকারীরা। এতে অনেকটাই সময় নষ্ট হয়েছে।
আসলে এই অসুবিধার জন্য অনেকটাই দায়ী হিমালয় অঞ্চের আবহাওয়া প্রকৃতি। কেন্দ্রীয় নগর উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব ডক্টর সুধীর কৃষ্ণ জানাচ্ছেন, হিমালয় অঞ্চলে সাধারণ ভাবে নরম শিলা থাকে। আর প্যচগুলিতে রয়েছে বেশ শক্ত. স্থিতিশীল পাথরের তৈরি। আর সেটা নাকি বেশ কঠিন পরিস্থিতি উদ্ধারকাজ চালানো জন্য। মাধেমধ্যেই ভূমিধস লেগে রয়েছে শিবকাশিতে। যার ফলে প্রতিমুহূর্তে শূন্য থেকে ফের কাজ শুরু করতে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের।
আরও পড়ুন:মেট্রোর কাজেই খাল কেটে কুমির আনা? বউবাজারের আতঙ্কের নেপথ্যে এক হারিয়ে যাওয়া নদী
ভূমিধসের কারণে বারবার কমে যাচ্ছে খননের গতি। সব মিলিয়ে ক্রমশ জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। এই ধরনের উদ্ধারকাজ কোনও ভাবেই রাজ্যপ্রশাসন বা কেন্দ্র সরকার একা চালাতে পারে না। বিভিন্ন দেশ থেকে ডাকা হয়েছে বিশেষজ্ঞদলকে। হাত লাগিয়েছে পুলিশ, দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দল। তাদের সঙ্গে কথা বলেই নতুন নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। যাতে কোনওরকম ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই সমস্ত শ্রমিকদের নিরাপদে বের করে আনা যায় সুড়ঙ্গের বাইরে। আর সেই স্বপ্নটাই প্রতিমুহূর্তে দেখছেন আটকে পড়া শ্রমিকেরা। তবে সত্যিই কি কোনওদিন ফেরা হবে আর আত্মীয় স্বজনের কাছে। নাকি দর্শনার্থীদের জন্য সুড়ঙ্গ তৈরির কাজে নেমে মাটিতেই মিশে যাবেন তাঁরা। গোটা দেশকেই ভাবাচ্ছে সেই আশঙ্কা।