আরও এক মুম্বই হামলার ছক! যে ভাবে পাকিস্তানি পরিকল্পনা শেষ মুহূর্তে ভেস্তে গেল

Pakistani attack : ভারতীয়রক্ষী বাহিনী আটক করল পাক নৌকা, তাতেই মিলল বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, সেই সঙ্গে ৪০ কেজি মাদক

ছোট মাছ ধরার একটি নৌকা, আর তার মধ্যেই মিলল বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ। সেই সঙ্গে ৪০ কেজি মাদক। বাজারে যার দাম ৩০০ কোটি টাকারও বেশি। ঘটনাটি ঘটেছে ২৬ ডিসেম্বর, ভারতের গুজরাট সীমান্তে। এদিন ভোর থেকেই ভারতীয় জলসীমায় সন্দেহজনকভাবে চলাচল করতে দেখা যায় একটি পাকিস্তানি নৌকাকে। সন্দেহ আরও ঘনীভূত হতেই গুজরাট পুলিশ এবং উপকূলরক্ষা বাহিনী আটক করে নৌকাটি। আর নৌকাটি ধরা পড়ার পর তল্লাশি হতেই চক্ষু চড়কগাছ। এই এত বেআইনি অস্ত্র এবং মাদক নিয়ে কোন হামলার ছক কষেছিল পাক বাহিনী?

২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বরের হামলা এখনও ভোলেনি ভারত। সেই দগদগে স্মৃতি আজও বিভীষিকা। টানা ৪ দিনের পাক তাণ্ডবে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় মুম্বাই শহর। আকস্মিক এই ঘটনার জন্য সবার প্রস্তুত ছিল না ভারত তাই, নির্বিচারে প্রাণ হারাতে হয় অনেক ভারতীয়কে। কিন্তু এই ঘটনা ভারতকে শিখিয়ে দেয় অনেক কিছুই। তারপর থেকেই আন্তর্জাতিক ও সামরিক সীমান্ত নিয়ে তৎপর হয় দেশ। কোথায় কী কী গলিদ ছিল সেগুলি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি সীমানায় নজরদারি আরও কড়া করা হয়। আর তার ফলশ্রুতি মিলেছে পরবর্তী চোদ্দ বছরে। সেইরকম কোনও বিভৎস হামলার সাক্ষী আর হতে হয়নি ভারতকে। কিন্তু সোমবারের ঘটনা যেন আবারও ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে সেই স্মৃতির কাছেই। পাক বাহিনীর এই নৌকাটিও যদি গোড়ায় আটক করা না হতো তবে কি আবারও সেই পুরোনো স্মৃতিই ফিরে আসতো, এই নিয়েই চলছে জল্পনা।

আরও পড়ুন - জঙ্গিহামলার মুখে নিরস্ত্র লড়াই! মুম্বইয়ের সেই দিন মনে পড়লে শিউরে উঠতে হয় আজও

রবিবার রাতেই ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী গুজরাটের সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড থেকে খবর পায়, একটি পাকিস্তানি নৌকায় বিপুল মাদক ও অস্ত্র ভারতে পাচার হচ্ছে। তলে তলে কোন ছক কষছে পাকিস্তান, সেই নিয়ে প্রথম থেকেই সন্দিহান ছিল ভারতীয় বাহিনী। কেবল অপেক্ষা করছিল মোক্ষম সময়ের। অবশেষে গতকাল মাঝ রাতে আইসিজিএস অরিঞ্জয়কে টহল দেওয়ার জন্য মোতায়েন করা হয়। তারপরই উপকূলরক্ষী বাহিনী অভিযান চালিয়ে গোলাবারুদ এবং মাদক সহ পাক নৌকাটি আটক করে। গ্রেপ্তার করা হয় ১০ জনকে।

গুজরাট সূত্রে খবর, ওই পাকিস্তানি মাছ ধরার নৌকাটির নাম ‘আল সোহেলি’। প্রথম থেকেই সন্দেহ দানা পালিয়েছিল নৌকাটির ইতস্তত চলাচল ঘিরে। এমনকী প্রাথমিকভাবে উপকূলরক্ষীরা যখন নৌকায় থাকা পাক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তখনই নাকি তারা পালাতে চায় বলেই জানা যায়। আর এতেই সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। শুধু তাই নয় ভারতীয় উপকূলরক্ষীরা গুলি চালালেও নৌকা থামেনি বলেই খর সূত্রের। পরে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর জাহাজ ‘অরিঞ্জয়’ পাকিস্তানি নৌকাটিকে আটকে দেয়। এখনও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে ওই ১০ জনকে ধৃতদের। পাশাপাশি ওই বিপুল অস্ত্র এবং মাদক কোথায় পাচার করা হচ্ছিল, কারা এই পুরো ঘটনার পান্ডা, এবং ভারতের মধ্যেই বা কারা জড়িত রয়েছে, গোটা ঘটনার সঙ্গে, নাকি কোনও গুপ্ত আঁতাদ দ্বারা আবারও সেই বীভৎস হামলারই ছক কষছিল পাকিস্তান, সেই সব বিষয়েই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

চোদ্দ বছর আগের মুম্বাই হামলা ভারতকে পরিণত করেছে অনেকটাই। ভারতীয় কোস্ট গার্ড এবং গুজরাট এটিএস-এর আজকের অভিযানটিই প্রথম নয় এর আগে গত ১৮ মাসে আরও ৬টি অভিযান চালিয়েছে। ইতিমধ্যেই ১ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা মূল্যের ৩৪৬ কেজি হেরোইন বাজেয়াপ্ত করেছে যৌথ বাহিনী। শুধু তাই নয় পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত ৪৪ জন পাক নাগরিক এবং ইরানের সাতজনকে গ্রেপ্তারও করেছে বাহিনী। ২৬ নভেম্বরের সেই স্মৃতিকে যে কিছুতেই আর ফিরতে দেওয়া হবে না সেই বিষয়ে সদা তৎপরতা জারি রেখেছেন এঁরাই।

More Articles