এক ইশারায় উড়ে যাবে গোটা গাজা! বাসিন্দাদের পালানোর নির্দেশ দিচ্ছে ইজরায়েলি সেনা
Israel-Hamas war: নতুন করে এসেছে হুমকি। আর তার পর থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছে গাজার আল-কুদস হাসপাতালে রকেট হামলা চালাতে পারে ইজরায়েলি সেনা।
বড়সড় হত্যাকাণ্ডের প্রস্তুতি চলছে যেন। গাজা শহরের উপকণ্ঠে জড়ো হয়েছে ইজরায়েলের একের পর এক ট্যাঙ্ক, বুলডোজার। একটা নির্দেশের অপেক্ষা কেবল। এক ইশারায় গুড়িয়ে যাবে, মাটিতে মিশে যাবে গোটা গাজা নগরী। অবশ্য শহরটার আর আছেটাই বা কী! গত তিন সপ্তাহে ইজরায়েলের একের পর এক আঘাতে আস্ত শহরটা যেন মৃত্যুপুরীর রূপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে ৮ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে গাজায়। যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি অংশ জুড়ে শিশু। চারদিকে নিথর শরীরের মিছিল যেন। প্রিয়জনকে হারিয়ে শোকটুকু করার সময় নেই যেন গাজাবাসীর কাছে। কারণ মাথার উপর ঘাই মারছে যুদ্ধবিমান। যে কোনও মুহূর্তে নেমে আসতে পারে আরও একটা রকেট। আর ধুলোয় মিশে যেতে পারে গোটা শহর তার বাসিন্দা-সহ। তার মধ্যেই ফের ভেসে আসছে শহর উড়িয়ে দেওয়ার নয়া হুমকি।
ইতিমধ্যেই আরও এক প্রস্ত যুদ্ধের মেঘ আকাশ কালো করে রেখেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জে ১২০টি দেশের ভোটে পাশ হল গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব। বিশ্বের তাবড় মানবাধিকার সংগঠনের উদ্বেগের মুখের উপর দিয়েই একের পর এক চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার। গত ৭ অক্টোবর অপ্রত্যাশিত ভাবেই ইজরায়েলের উপরে হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হামাস। তার পরেই সর্বশক্তি দিয়ে হামাসদের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করে দেয় ইজরায়েল। আর তার পর থেকেই একের পর এক আঘাত নেমেছে গাজাবাসীর উপরে। হাসপাতাল থেকে গির্জা, শরণার্থীশিবির থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি, যে কোনও সময় রকেট হামলা হেনেছে ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স। কিছু হামলায় দায় মেনেছে, কিছু হামলার দায় তারা চাপিয়েছে স্থানীয় জঙ্গি সংগঠনের উপরে।
আরও পড়ুন: ২০ দিনে ৩,৩০০ শিশুর মৃত্যু! কেন এত শিশু মারা যাচ্ছে গাজার যুদ্ধে?
এর আগেও একবার উত্তর গাজা থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইজরায়েলি সেনা। যে নির্দেশ অমান্য করার অর্থ সাক্ষাৎ মৃত্যু। তার পর থেকে গাজার বাসিন্দারা শুধুই পালাচ্ছেন। নিজের দেশেই শরণার্থী হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মরে যাচ্ছেন শরণার্থী শিবিরে, রাস্তায় রাস্তায়। এর মধ্যে ফের আরও একবার নামল হুমকি। ফের গাজা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিল ইজরায়েলি সেনা। হামাসের তরফে জানানো হয়েছে, ইজরায়েলি সেনা নাকি ফোন করে করে গাজার বাসিন্দাদের হুমকি দিচ্ছে, দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। আর কোনও নিরাপদ জায়গা বেঁচে নেই গাজায়। যেখানে মাথা লুকিয়ে প্রাণে বাঁচতে পারেন গাজাবাসী। ইতিমধ্যেই দফায় দফায় নতুন নতুন সংঘর্ষের খবর ভেসে আসছে বিভিন্ন জায়গা থেকে।
ইজরায়েলের সাম্প্রতিক হুমকির পর থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছে গাজার আল-কুদস হাসপাতালে রকেট হামলা চালাতে পারে ইজরায়েলি সেনা। এর আগে গাজার আল আহলি হাসপাতালে মধ্যরাতে নেমেছিল রকেট। মুহূর্তে নেই হয়ে গিয়েছিল অসংখ্য মুমূর্ষ রোগী, রোগীর পরিজন, ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী। শুধু তাঁরাই নয়, হাসপাতালকে সুরক্ষিত ভেবে আশ্রয় নিয়েছিলেন যে সকল সাধারণ বাসিন্দা, তাঁরাও মিশে গিয়েছিলেন মাটিতে। সেই হামলার স্মৃতি এখনও টাটকা গাজাবাসীর মাথায়। তার মধ্যে ফের আল কুদস হাসপাতালে হামলার আশঙ্কায় কার্যত ভয়ে কাঁপছে গোটা গাজা। আবার লাশের মিছিল, আবার রক্ত, মাংসের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আর মানুষের হাহাকার।
ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক জুড়ে নিত্য অভিযান চালিয়েই যাচ্ছে ইজরায়েলি সেনা। গত তিন সপ্তাহে ইজরায়েলি সেনার অভিযোগে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে অন্তত ১১৯ জন ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এই ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে যত লোক মারা গিয়েছেন গাজায়, তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি শিশু। সারা বিশ্বের ইতিহাসে আর কোনও যুদ্ধে এত বিপুল সংখ্যক শিশুমৃত্যু কখনও দেখা গিয়েছে বলে মনে পড়ে না। তবু ইজরায়েলি হামলার হাত থেকে প্রাণে বেঁচে গিয়েছে যেসব শিশু, তাদের মাথার উপর বোমারু বিমানের মতো চক্কর মারছে মৃত্যুভয় আর ভয়ার্ত শৈশব। সেভ দ্য চিলড্রেন নামে একটি শিশু অধিকার-রক্ষা সংগঠনের দাবি, সেই ২০১৯ সাল থেকেই গাজায় সব চেয়ে বেশি বলি হয়েছে শিশুরা। ২০২৩-র এই যুদ্ধ যেন তার ভয়ঙ্করতম রূপ দেখছে।
আরও পড়ুন:লাশের স্তূপ মর্গে! ৮,০০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধ ঘোষণা ইজরায়েলের
অক্টোবরের গোড়ায় ইজরায়েলে হামাসের হামলার নিন্দা করেছিল গোটা বিশ্ব। সেই হামলায় প্রাণ গিয়েছিল মোট ১৪০০ মানুষের। সেই রেকর্ডকে কবেই টপকে গিয়েছে গাজায় ইজরায়েলের আগ্রাসন। ৮ হাজার পেরিয়ে আরও আরও মৃত্যুমিছিলের দিকে হাঁটছে গাজা। অথচ যুদ্ধ থামার রেশ মাত্র নেই। বরং প্রতিদিন আরও আরও কঠোর অবস্থান নিচ্ছে ইজরায়েল। গাজাবাসীকে দেশ ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও, তাতে কি আদৌ এই গণহত্যার দায় এড়াতে পারবে ইজরায়েল। কারণ নেতানিয়াহু সরকারও জানে, গাজাবাসীর যাওয়ার কোনও জায়গা নেই। মিশর গাজা শরণার্থীদের জন্য দরজা খুলে দেওয়ার কথা বললেও রাফাহ রাস্তা সারাই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মিশরে আশ্রয় নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই গাজাবাসীর কাছে। এদিকে মিশর জানিয়ে দিয়েছে, সীমিত সংখ্যক শরণার্থীকেই জায়গা দিতে পারবে তারা। ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের জর্ডনের দিকে ঠেলতে চাইছে তারা। এই পরিস্থিতিতে নিজের দেশে বসে ছাই হয়ে যাওয়া আর কোনও পথ খোলা আছে কি আদৌ গাজাবাসীর কাছে! গোড়ায় গাজায় জল, খাবার, বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিল ইজরায়েল। কিছুদিন আগে তা চালু করলেও দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধঘোষণার পর গাজার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে ইজরায়েল। যাতে ভিতরের খবর বিশ্বের দরবারে না পৌঁছয়। অন্ধকূপ হত্যার চেয়েও বোধহয় ভয়াবহ গণহত্যার দিকে ক্রমশ হেঁটে চলেছে ইজরায়েল। যাকে অনবরত সমর্থন জানিয়ে চলেছে আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো দেশগুলি। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে বাঁচবে গাজা, নাকি ইজরায়েলের আগ্রাসনে ইতিহাসের তলায় গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাবে আস্ত একটা শহর! সেই প্রশ্নটাই ভেসে বেড়াচ্ছে বারুদের গন্ধে ভারী হয়ে আসা গাজার হাওয়ায়