কাজে 'বিঘ্ন' ঘটানোর হুমকি! টলিপাড়ার যে রূপ ফাঁস করলেন পরমব্রত

Directors Guild-Federation Conflict: পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, শুটিংয়ের প্রয়োজনে যদি বাইরে থেকে কোনও চিত্রগ্রাহককে নিয়ে আসা হয়, তারপরেও স্রেফ ফেডারেশনের নিয়ম অনুযায়ী এখানকার চিত্রগ্রাহককেও রাখতেই হবে শুটিংয়ে।

খোদ মুখ্যমন্ত্রীও সমাধান করতে পারেননি। শেষে ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া এবং এর সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গুচ্ছখানেক অভিযোগ সামনে এনে আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন পরিচালকদের একাংশ। বাংলার সিনেমাজগতের অন্দরে যে আসলে কী চলে তা নিয়ে তদন্তমূলক প্রতিবেদন ধারাবাহিকভাবে পেশ করেছে ইনস্ক্রিপ্ট। গত ৩ ডিসেম্বর ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (ডিএইআই) একটি সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছে, ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ১৪ দফা দাবি নিয়ে আইনি পথেই হাঁটছেন তারা। সেখানেই, ডিএইআই-এর কার্যনির্বাহী সমিতির অন্যতম সদস্য পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, শুটিংয়ের প্রয়োজনে যদি বাইরে থেকে কোনও চিত্রগ্রাহককে নিয়ে আসা হয়, তারপরেও স্রেফ ফেডারেশনের নিয়ম অনুযায়ী এখানকার চিত্রগ্রাহককেও রাখতেই হবে শুটিংয়ে। পরমব্রতর এই অভিযোগকে 'মিথ্যা' বলে নস্যাৎ করে দিয়েছেন চিত্রগ্রাহক গিল্ডের সম্পাদক স্বপন মজুমদার। স্বপন বলেছেন, ফেডারেশনের থেকে এমন কোনও দাবিই করা হয়নি। পরমব্রত “প্রমাণ দিতে পারলে ইন্ডাস্ট্রি এবং গিল্ড-এর সম্পাদক পদ ছেড়ে দেব” বলেও জানান স্বপন মজুমদার। এর প্রেক্ষিতে প্রমাণসহই সমাজমাধ্যমে দীর্ঘ পোস্ট করেছেন পরমব্রত। কী বলছেন তিনি, রইল তাঁর বয়ানেই।

কী বলছেন পরমব্রত?

৩ ডিসেম্বর DAEI অর্থাৎ ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার তরফ থেকে যে প্রেস কনফারেন্স করা হয়, সেখানে আমি বলেছিলাম, টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিতে যদি বাইরে থেকে কোনও ক্যামেরাম্যান বা DOP নিয়ে আসা হয়, তাহলে গিল্ডের (বকলমে ফেডারেশনের) নির্দেশে আমাদের প্রয়োজন না হলেও কলকাতা থেকে একজন ক্যামেরাম্যান বা ডিওপিকে নিয়োগ করতে হয় এবং ক্যামেরা বিভাগে অতিরিক্ত লোকজন নিতে হয়।

টালিগঞ্জের বহু বেনিয়ম নিয়ে সেদিন আমরা নানা তথ্য মিডিয়ার সামনে রাখি। তার মধ্যে এটিও ছিল। স্বপনবাবু বাকিগুলো নিয়ে কিছু বলেননি, এই বিশেষ কথাটা যে সম্পূর্ণ মিথ্যে এইটা স্পষ্টভাবে দাবি করেছেন। এও বলেছেন, আমি যদি আমার কথার সপক্ষে প্রমাণ দিতে পারি তাহলে একদিনের মধ্যে তিনি গিল্ডের সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি নেবেন, এমনকী ইন্ডাস্ট্রি থেকেও বিদায় নেবেন।

সেদিনের সমস্ত তথ্য যদিও সাধারণভাবে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়, তবুও যেহেতু অভিযোগ আমার দিকেই উঠেছে, তাই আমি এর উত্তর দেওয়ার দায়িত্ব নিচ্ছি। তিনি প্রমাণ চেয়েছেন। আমি সেটাই দিচ্ছি। প্রত্যেকটা প্রমাণ ছবি হিসেবে দিয়েছি।

আরও পড়ুন- বাংলা সিনেমার শ্মশানযাত্রা! যে যে নিয়মে পুড়ছে সিনেমাপাড়া

প্রমাণ ১

কিছু বছর আগে ZEE5 প্ল্যাটফর্মের জন্য ‘কালী সিজন টু’ নামে একটা ওয়েব সিরিজের প্রযোজনার দায়িত্বে আমি ছিলাম। সেই সিরিজের জন্যে শ্রীজিৎ বসু নামে একজন ডিওপি আমরা নিয়োগ করি। শ্রীজিৎ পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভশন ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করা ক্যামেরাম্যান। তিনি মুম্বইয়ের একটি ফেডারেশনের সদস্য ছিলেন। সেই ফেডারেশনের কার্ড নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন মুম্বই, কেরল, পঞ্জাব, তামিলনাড়ু এবং ভারতের নানা জায়গায় বিজ্ঞাপন, সিরিজ, সিনেমা সাফল্যের সঙ্গে শুট করেছেন। সারা ভারতবর্ষে তাঁর কার্ড নিয়ে কোনওদিন কোনও সমস্যা হয়নি।

এখানে তিনি যখন আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আসেন, গিল্ড এবং ফেডারেশনের চাপে তাদেরই নির্ধারণ করে দেওয়া একজন ক্যামেরাম্যানকে (সোমনাথ ব্যানার্জি) আমাদের বাধ্য হয়ে পূর্ণ পারিশ্রমিক দিয়ে নিয়োগ করতে হয়। গিল্ড দ্বারা ধার্য পারিশ্রমিক দিয়ে নিয়োগ করার ফলে আমরা পুরো সময়টাই তাঁকে শুটে রাখি এবং যেদিন যেদিন দ্বিতীয় ক্যামেরা ভাড়া করা হয়েছিল, সেইসব দিন তিনি ক্যামেরাম্যানের পছন্দের অপারেটর না হওয়া সত্ত্বেও সেকেন্ড ইউনিট ক্যামেরাম্যান হিসেবে কাজ করেন। বাকি অধিকাংশ দিন, যখন সিঙ্গেল ইউনিট শুটিং হয় পুরো সময়টাই সোমনাথ সেটে শুধুমাত্র উপস্থিত থাকেন। আলাদা করে তাঁর কোনও কাজ থাকে না।

শুটিংয়ের আগে এই সমস্যার সমাধানে শ্রীজিৎ নিজে এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বপন মজুমদারের সঙ্গে শ্রীজিতের স্থানীয় কার্ড করার ব্যাপারে অনুরোধ জানাই যা তাঁরা দিতে অস্বীকার করেন। এই কথোপকথনের অবশ্য আমার কাছে কোনও রেকর্ড নেই কিন্তু অন্য প্রমাণ আছে। পারিশ্রমিকের লেজার শিট রইল। সেখানে খেয়াল করে দেখবেন, শ্রীজিত যেমন ক্যামেরাম্যান হিসেবে পেমেন্ট পেয়েছেন ঠিক সেইভাবেই সোমনাথও কখনও ক্যামেরাম্যান, কখনো আবার ডিওপি, কখনও অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্যামেরাম্যানের হিসেবে (এই ভাগটা সম্পূর্ণ অ্যাকাউন্টিংয়ের নিজস্ব প্রয়োজনে হয়েছে) তাঁর পূর্ণ পারিশ্রমিক পেয়েছেন।

সোমনাথ ব্যানার্জি সম্পূর্ণভাবে ফেডারেশন নির্দেশিত টেকনিশিয়ান, যাঁকে আমরা ওদের চাপে নিয়োগ করতে বাধ্য হই। তাঁর পাওয়া পারিশ্রমিকের পুরোটাই মূল বাজেটে ছিল না। সেটা বাড়তি হিসেবে পরবর্তীতে যোগ করতে হয়।

আরও পড়ুন- টলি কেলেঙ্কারি: বিস্ফোরক হিসাব খাতা ফাঁস! চরম দুর্নীতি সিনেমাপাড়াতেও?

প্রমাণ ২

২০১৯-এর শেষে কেরলের সিনেমাটোগ্রাফার আপ্পু প্রভাকর আমার ছবি ‘অভিযানে’ কাজ করতে আসেন। তিনি দু'টি বাংলা ছবি ইতিমধ্যেই শুট করেছিলেন। তাঁকে ক্যামেরা গিল্ড থেকে স্পষ্ট জানানো হয়, নয় তাঁকে কলকাতা গিল্ডের কার্ড করাতে হবে, নয় গিল্ডের ‘নিয়ম’ অনুসারে আরেকজন বাড়তি স্থানীয় সিনেমাটোগ্রাফারকে নিয়োগ করতে হবে। আপ্পু প্রভাকারকে বাধ্য হয়ে কেরলে তাঁর গিল্ড থেকে একটি চিঠি আনতে হয়, যেখানে স্পষ্ট লেখা আছে যে, সেই গিল্ডের কার্ড নিয়ে তিনি সারা ভারতবর্ষের যে কোনও জায়গায় সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করতে পারেন।

এই চিঠি দেখে গিল্ড আপ্পুর ব্যাপারে পিছ-পা হলেও, তাঁদের নির্দেশে আমরা গিল্ড থেকে একজন বাড়তি সহকারী নিতে বাধ্য হই। সেই সহকারীর পেমেন্ট লেজার আমাদের কাছে না থাকলেও, বাধ্য হয়ে আপ্পু যে চিঠিটি তাদের কাছে পেশ করেছিলেন, সেটি এখানে জুড়ে দিলাম।

প্রমাণ ৩

এবার আসি ‘সাবাস ফেলুদার’ শুটিংয়ের সময়ের একটি ঘটনায়। সেখানে আমাদের সিনেমাটোগ্রাফার অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়ে এখানকার ক্যামেরা গিল্ড আবার সমস্যা করে। তারা দাবি করে, সিনেমাটোগ্রাফারের যিনি সহকারী, তাঁর কার্ড নাকি শুধুমাত্র ফোকাস পুলারের। তা দিয়ে তিনি সহকারী সিনেমাটোগ্রাফারের কাজ করতে পারেন না। অতএব সহকারী হিসেবে তাদের গিল্ড থেকে একজন বাড়তি সহকারী নিয়োগ করতেই হবে। তাদের চাপে আমরা সেই বাড়তি সহকারী নিয়োগ করি। এই প্রসঙ্গে স্বপন মজুমদার আমাকে ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পাঠান। সেই মেসেজও রইল প্রমাণ হিসেবে। সেই মেসেজের ভাষা দেখলেই কথোপকথন এবং দাবির চরিত্র সাধারণ মানুষ কিছুটা বুঝতে পারবেন। সেখানে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেওয়া আছে যে, এখনও অবধি তারা আমাদের শুটিংয়ে কোনও বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন না কিন্তু দু'দিনের মধ্যে যদি মানিক দাস 'বৈধ' কার্ড না দেখাতে পারেন তাহলে স্বপন মজুমদারের গিল্ডের সদস্যরা এই শুটিংয়ে যোগদান করবেন না।

আরও পড়ুন- টলি কেলেঙ্কারি: সিনেমাপাড়ায় থ্রেট কালচারই শেষ কথা?

অনির্বাণের সহকারী মানিক চন্দ্র দাস Western India Cinematographers’ Association-এর সদস্য। এই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা সারা ভারতে যে কোনও ইন্ডাস্ট্রিতে নির্দ্বিধায় কাজ করার অনুমতিপ্রাপ্ত। তাঁর কার্ডের একটি ছবিও এখানে আমি তুলে দিলাম। খেয়াল করলেই দেখা যাবে, সেখানে জুনিয়র সিনেমাটোগ্রাফার কথাটি লেখা আছে। অর্থাৎ তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে যে কোনও জায়গায় কাজ করতে পারেন। সেটা যে শুধুমাত্র ফোকাস পুলিং করার জন্য 'বৈধ' এইটা কোন ব্যাকরণে স্বপন মজুমদারদের গিল্ড বুঝল সেটা আমাদের বোধগম্য হয়নি। তাদের চাপে পড়ে শুটিংয়ের স্বার্থে আমরা একজন বাড়তি অ্যাসিস্ট্যান্ট নিতে বাধ্য হই।

প্রমাণ ৪

এবার আসি অতনু ঘোষ পরিচালিত দু'টি ছবি ‘বিনি সুতো’ ও ‘রবিবার’ প্রসঙ্গে। দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের অন্য অঞ্চলের বহু সিনেমাটোগ্রাফার কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিতে নানা পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। কে কে মহাজন কাজ করেছেন মৃণাল সেনের সঙ্গে, সানি জোসেফ কাজ করেছেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর সঙ্গে, হরি নায়ার ও বিবেক শাহ কাজ করেছেন ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে। মাথায় রাখতে হবে, সারা বিশ্বেই সিনেমাটোগ্রাফার’রা তাঁদের নিজস্ব টিম ছাড়া কাজ করতে অত্যন্ত অসুবিধার মধ্যে পড়েন। আগে কলকাতায় এইসব ক্ষেত্রে যে প্রথা (নিয়ম নয় কোনওটাই!) চালু ছিল সেটা এরকম, অন্য রাজ্যের বা ইন্ডাস্ট্রির সিনেমাটোগ্রাফারের প্রধান দু'জন সহকারীর (অর্থাৎ চিফ অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং ফোকাস পুলার) মধ্যে একজন সিনেমাটোগ্রাফারের নিজস্ব ইন্ডাস্ট্রি বা টিম থেকে আসবেন এবং একজনকে (সাধারণত ফোকাস পুলার) নেওয়া হবে কলকাতার গিল্ড থেকে।

কিন্তু আপ্পু প্রভাকার যখন অতনু ঘোষের উপরোক্ত দু'টি ছবির ক্যামেরা করতে কলকাতায় আসেন তখন গিল্ড তাদের উপর নতুন একটা শর্ত চাপিয়ে দেয়। আপ্পুর মূল সহকারী কেরলের গিল্ডের সদস্য, তাঁর ফোকাস পুলার আনোয়ার ইদ্রিসি কলকাতার গিল্ডের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও এই দু'টি ছবির ক্ষেত্রেই গিল্ড এবং ফেডারেশনের চাপে অতনু ঘোষকে বাড়তি একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্যামেরাম্যান নিয়োগ করে বসিয়ে রাখতে হয়। এই বিষয়েও অতনু ঘোষের হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ এবং তাঁর তরফ থেকে পাওয়া স্টেটমেন্ট ও দু'টি সিনেমার পেমেন্ট লেজার (যেখানে পরিষ্কার বাড়তি কর্মীর পেমেন্ট দেখা যাচ্ছে) প্রমাণ হিসেবে রইল।

এগুলো মাত্র কয়েকটা প্রমাণ। প্রত্যেকটাই আমার অভিজ্ঞতা থেকেই দিলাম। সারা ইন্ডাস্ট্রির কথা ধরলে এরকম বহু প্রমাণ কিলবিল করে বেরিয়ে আসবে। সব কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ জেনে বুঝেও স্বপন মজুমদার প্রকাশ্যে এইরকম হঠকারী বক্তব্য কীভাবে পেশ করলেন আমার মাথায় ঢুকছে না। আমি অনুমান করছি, তিনি এটা চাপের বশেই করেছেন। বা হয়তো ভেবেছেন আমরা কোনও প্রমাণ ছাড়াই কথা বলছি।

ব্যক্তিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে তাঁকে কয়েকটা কথা বলি। স্বপনদা, দীর্ঘদিন ধরে তোমায় চিনি। সারা জীবন বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে একজন দক্ষ চলচ্চিত্র কর্মী হিসেবে তুমি সুনামের সঙ্গে কাজ করেছ। তুমি আমার খুব প্রিয় একজন শিল্পী! হ্যাঁ, তোমাকে বা তোমাদের মতো অনেককে তোমাদের দক্ষতার জন্য আমি বা আমরা শিল্পীই বলি! আজ যাদের চাপে পড়ে তুমি ফেসবুকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে এইভাবে জনসমক্ষে অপদস্থ হলে, মাথায় রেখো তারা কেউ কেউ কিন্তু সারাজীবনে কোনওদিন সিনেমায় হাতে কলমে কাজ করেননি। তাঁরা সিনেমার কেউ নন! তাঁরা তোমার মতো শয়ে শয়ে কর্মী/শিল্পীকে প্রতিদিন নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। এতে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির কী হাল হচ্ছে তা তোমার থেকে ভালো কেউ জানে না।

কার্ড নিয়ে নানা প্রমাণ দিলাম ঠিকই কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে ভারতবর্ষের আইন অনুসারে কার্ড থাকা বা না থাকা দিয়ে কিছু এসে যায় না। এ ব্যাপারে কম্পিটিশন কমিশন অফ ইন্ডিয়ার পরিষ্কার রায় আছে। কার্ড থাকলে একজন কলাকুশলী অ্যাসোসিয়েশনের সুবিধাগুলো পান মাত্র কিন্তু কাউকে বৈধ কোনও কাজ করা থেকে আটকানো ভারতীয় আইনে অপরাধ। এই সহজ কথাটা আমরা কিছুতেই ফেডারেশনের হর্তাকর্তাদের বোঝাতে পারছি না। কথায় বোঝাতে না পেরে বাধ্য হয়ে সেই কম্পিটিশন কমিশনের কাছেই আইনি সমাধানের জন্য দ্বারস্থ হয়েছি।

তুমি বলেছ, প্রমাণ দেখালে তুমি একদিনে ইন্ডাস্ট্রি থেকে বিদায় নেবে কিন্তু আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি আমি বা ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের কেউ এক মুহূর্তের জন্য চায় না তুমি এই কাজটা করো। আমরা চাই তুমি সারা জীবন এখানে সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাও। কিন্তু তোমার মতো আমি ইন্ডাস্ট্রির বাকি টেকনিশিয়ানদেরও বলছি, কাদের হাতে প্রতিদিন তোমরা ব্যবহৃত হচ্ছো এবং তার ফলে এভাবে আত্মসম্মান খোয়াচ্ছ সেটা একবার নিজেরা ভেবে দেখো। ইন্ডাস্ট্রির প্রত্যেক সাধারণ টেকনিশিয়ান জানেন বাস্তবটা কী! তাঁরাও চিরকাল কিন্তু চুপ করে বসে থাকবে না। তাঁদেরও নিত্যদিন পেটে টান পড়ছে।

আরও পড়ুন- টলি কেলেঙ্কারি: স্বরূপ বিশ্বাসের উত্থান কখন, কীভাবে, কতটা?

পরমব্রতর এই দীর্ঘ পোস্টের পর স্বপন মজুমদার ফেসবুকেই এই প্রমাণের সাপেক্ষে কিছু উত্তর দেন। সেই পোস্ট নিয়ে আবারও একটি বিশদ পোস্ট লেখেন পরমব্রত।

পরমব্রত লিখেছেন,

স্বপন মজুমদার দেখলাম আমার গতকালের পোস্টের একটা অক্ষম উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ছোটবেলায় বাংলা পরীক্ষায় অনেককে দেখতাম ফেল করার ভয়ে ‘আমার প্রিয় বন্ধু’ রচনায় পাতার পর পাতা গরুর রচনা লিখে আসত। এর কোনও উত্তর আসলে হয় না কিন্তু যেহেতু বিষয়টায় বহু মানুষের স্বার্থ জড়িত, তাই দু-একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি।

১) প্রথম কথা, ক্যামেরাম্যান সোমনাথ ব্যানার্জি কলকাতা থেকেই কাজটা করেছেন। তিনি বম্বে থেকে এসেছিলেন এই কথাটা সর্বৈব মিথ্যে। এই দাবিটি স্বপন মজুমদার আরেকবার করলে আমি ক্যামেরাম্যান শ্রীজিৎ বসুর লিখিত বয়ান পেশ করতে পারি। আশা করি আরেকবার জনসমক্ষে বেইজ্জত হবার এই ইচ্ছে স্বপন মজুমদারের হবে না। তার থেকেও বড় কথা, ক্যামেরাম্যান সোমনাথ ব্যানার্জি বম্বে থেকে এসেছিলেন না গুয়েতেমালা থেকে- এটা বিষয় নয়। বিষয়টা হলো তাঁকে নেওয়া হয়েছিল ফেডারেশনের চাপে, শ্রীজিতের প্রক্সি হিসেবে এবং তিনি কলকাতার ক্যামেরাম্যান গিল্ডের কার্ড থাকা সদস্য — একমাত্র এই কারণে। এছাড়া সেই প্রজেক্টে তাঁকে নেওয়ার আর কোনও গ্রহণযোগ্য কারণ ছিল না।

২) আপ্পু প্রভাককারের কার্ডটি CUMAC-এর (Cinematographers Union of Malayalam Cinema) যা FEFKA-র (কেরল ইন্ডাস্ট্রির চলচ্চিত্র কর্মীদের ফেডারেশন) অন্তর্গত এবং কেরলের সেই ফেডারেশন সর্বভারতীয় সংস্থা AIFEC-এর সদস্য। যার সদস্য আমাদের এখানকার ফেডারেশনও। এই বিষয়ে CUMAC-এর সাধারণ সম্পাদকের একটি চিঠি গত পোস্টেই পরিষ্কার করে দেওয়া আছে। রচনা লেখার উত্তেজনায় সেটা স্বপন মজুমদার পড়তে বোধহয় ভুলে গেছিলেন। অথবা না পড়লে সুবিধা, সেই কারণেই পড়েননি। অসুবিধা নেই, এবারও যুক্ত করলাম। ধীরে সুস্থে পড়ে নিলেই হলো।

৩) তৃতীয়ত, মানিক দাসের কার্ডটি বম্বের সিনেমাটাগ্রাফারদের সংস্থা WICA-র। সেই কার্ডটিতে জুনিয়র মেম্বার কথাটি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে। স্বপন মজুমদার আমাকে বলেছেন, ওই কার্ডে তিনি ফোকাস পুলারের কাজ করতে পারেন না অ্যাসিস্ট্যান্ট সিনেমাটোগ্রাফারের এটা যেন আমি মুম্বই গিয়ে জেনে নিই। বিনীতভাবে জানাই, বিগত বহু বছর কাজের জন্য আমি প্রায় প্রতি মাসেই মুম্বই যাই এবং মুম্বাই গিয়ে আমি ওই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেই কাজ করি এবং থাকি। তাই ওখানকার নিয়মকানুন সম্বন্ধে আমার স্পষ্ট ধারণা আছে। আজ্ঞে না, মুম্বইতে ফোকাস পুলারের কোনও আলাদা কার্ড হয় না! ওঁর যা কার্ড তার মধ্যে অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্যামেরাম্যান, ক্যামেরা অপারেশন, গিম্বল অপারেশন, ডাটা ম্যানেজমেন্ট, গাফার-এর কাজ এবং ফোকাস পুলিং সবই অন্তর্ভূক্ত। তাই আমি আপনাকে উল্টে বলছি, আপনি বরং জেনে নিন একটু কষ্ট করে! প্রয়োজন হলে তাঁদের থেকেও একটি স্টেটমেন্ট পরের পোস্টে দিয়ে দেওয়া যাবে। স্বপন মজুমদাআর আবার জনসমক্ষে অপদস্থ হবেন এই ভেবে তা থেকে এখন বিরত হলাম।

সাধারণভাবে মানুষকে যুক্তি দিয়ে কিছু বোঝালে মানুষ বোঝে কিন্তু বুঝলে যদি নিজের বিপদ হয়, তাহলে মাথায় হাতুড়ি-গজাল ভেঙে ফেললেও, মাথার ভেতরে সেটা কিছুতেই ঢোকে না। স্বপন মজুমদার বড় গলায় প্রথম পোস্টে বলেছিলেন, প্রমাণ দিতে পারলে তিনি পদত্যাগ করবেন। এমনকী ইন্ডাস্ট্রিও ছেড়ে দেবেন। এখন প্রমাণ দেওয়ার পরেও তাঁকে নিরন্তর গরুর রচনা লিখে যেতেই হবে, তাঁর গিল্ডের সদস্যদের এটা দেখানোর জন্য যে কেন তিনি পদত্যাগ করছেন না!

আমরা চাই স্বপন মজুমদার পদত্যাগ না করে সারা জীবন সম্মানের সঙ্গে কাজ করুন কিন্তু বারবার গরুর রচনা লিখলে ওইটুকু সম্মানও আর বজায় থাকে না। বারবার গরুর রচনা পড়লে ঘোড়াও হাসে।

More Articles