বাড়িতে বাচ্চাদের সামনে কী কী করবেন না?

আপনার বাড়িতে কি ছোট বাচ্চা আছে? আপনি কি সেই বাচ্চার মা বা বাবা বা সেই পরিবারেরই অংশ? তবে জেনে নিন বাচ্চাদের সামনে কী কী করা একেবারেই অনুচিত। প্রত্যেক মা-বাবাই চায় তাদের সন্তান যেন মানুষের মতো মানুষ হয়। কোনো খারাপ গুণ যেন তার মধ্যে না থাকে। আর এটা তখনই সম্ভব যখন বাবা-মা-পরিবার-আত্মীয় সেই শিশুটিকে সঠিক পথ দেখাবে। যদি শিশুটি তার কাছের মানুষগুলোকেই খারাপ শব্দ ব্যবহার করতে শোনে বা অন্যের সঙ্গে ভালো ব্যবহার না করতে দেখে, তবে এর খারাপ প্রভাব সেই বাচ্চার উপরও পড়তে পারে। আপনি যা করবেন আপনার বাড়ির শিশুটিও তাই শিখবে। তাই বাড়িতে বাচ্চা থাকলে তার প্রত্যেক নিকট আত্মীয় মা-বাবা-কাকা-জ্যেঠু-দাদু-ঠাকুমা সব্বার উচিত নিজেদের আচার আচরণ নম্র করার, পরিমার্জিত করার। বাচ্চার সামনে কী করা উচিত এবং কী করা অনুচিত তা বুঝতে শেখার। আসুন জেনে নেওয়া যাক বাচ্চাদের সামনে কী কী করা অনুচিত। 

১. নিজেদের মধ্যে ঝগড়া অশান্তি করবেন না। এতে বাচ্চাদের ওপর খুব খারাপ প্রভাব পড়ে। বাচ্চারা ভিতরে ভিতরে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বিষাদে ডুবে যায় তাদের ছেলেবেলা। 

২. ভয় দেখাবেন না বাচ্চাদের। অনেক মা বাবাই বাচ্চাদের খাওয়াতে, ঘুম পাড়াতে বা অন্য যে কোনও জিনিস করাতে ভয় দেখান। হয়তো ভুতের, হয়তো জুজুর, বা হয়তো কাল্পনিক কোনও চরিত্রের। এতে বাচ্চারা ভয় পেয়ে খেয়ে নেয় বা ঘুমিয়ে পড়ে ঠিকই, কিন্তু এর খুব খারাপ প্রভাব পড়ে তাদের অন্তরে। ভীতু প্রকৃতির হয়ে ওঠে তারা জীবনের শুরু থেকেই, যা ভবিষ্যতে জীবনের পথ চলায় তাদের অনেক বিপদে ফেলে। 

৩. নেশা করবেন না। বাচ্চাদের সামনে ধূমপান, মদ্যপান বা অন্য কোনও নেশা করা একেবারেই কাম্য নয়। বাচ্চারা যা দেখে তাই শেখে। হয়তো আপনার অনুপস্থিতিতে সেও কোনওদিন না বুঝেই নেশার সামগ্রীর দ্বারা আসক্ত হয়ে পড়বে। 

৪. মারধোর করবেন না ছোট বাচ্চাদের। ভালোবেসে বোঝান। না বুঝলে আবার চেষ্টা করুন, অন্য কোনও পন্থা নিন, কিন্তু গায়ে হাত তুলবেন না। এতে বাচ্চারা আপনাদের থেকে মানসিক ভাবে দূরে চলে যায়। ভয় পেতে শুরু করে আপনাকে। লোকাতে শুরু করে বিভিন্ন জিনিস। যা আপনার এবং তার জন্যেও ক্ষতিকর। 

৫. কখনও বাচ্চাদের সামনে কারোর সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না। অভদ্র আচরণ, খারাপ শব্দের প্রয়োগ ইত্যাদি বাচ্চাদের সামনে করলে তারাও শিখে যায়। আপনি যদি প্রতিবেশী, বন্ধু বা পরিবারের কোনো সদস্যকে অপমান করেন, তাহলে তা আপনার বাচ্চার ওপর খারাপ প্রভাব ফেলবে। আপনার সঙ্গে কারোর মতপার্থক্য থাকতেই পারে বা আপনি কাউকে অপছন্দও করতে পারেন, কিন্তু বাচ্চার সামনে তাদের প্রতি আপনার ক্ষোভ ব্যক্ত করবেন না। আপনি এরকম করলে আপনার সন্তানও সেই ব্যক্তিকে কোনও সময় অপমান করতে পারে।

৬. ফোন, টিভি, ইলেকট্রনিক গ্যাজেটস এর অত্যাধিক ব্যবহার করবেন না। এতে বাচ্চারা সে'সমস্ত জিনিসের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। যা তার মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক।

৭. কাউকে আর্থিক ক্ষমতা নিয়ে খোঁটা দেবেন না বাচ্চাদের সামনে। এতে বাচ্চারা টাকাকে সর্বেসর্বা ভাবতে শিখবে। কার টাকা বেশি, কার টাকা কম এই বুঝে মানুষের সাথে মিশতে শিখবে।

৮. বাচ্চাদের বাড়িতে বন্ধ করে রাখবেন না। বাইরে যেতে দিন, মাঠে খেলতে দিন, বন্ধু বানাতে দিন, মিশতে দিন, আড্ডা দিতে দিন। এতে তার সামাজিক অবস্থানের বিকাশ ঘটে। ভবিষ্যতের কঠিন রাস্তায় তার চলার পথ মসৃণ হতে থাকে। 

৯. কারোর গায়ের রং, শরীরের আকার নিয়ে খারাপ মন্তব্য করবেন না। কালো, মোটা, রোগা শব্দগুলোর খারাপ ব্যবহার ওদের না শেখানোই ভালো। পারলে আপনিও ভুলে যান। 

১০. খাবার নষ্ট করবেন না। সবসময় বাচ্চাদের শেখাবেন খাবারকে সম্মান জানাতে। জীবনে খাদ্যের কী গুরুত্ব তা শিশুদের একদম ছোট্ট থেকে বোঝান। 

১১. সমাজের নিচু শ্রেণীর মানুষদেরকে সম্মান দিন। রিকশাওয়ালা কে তুইতকারী, বাড়ির কাজের লোককে অসম্মান করা ইত্যাদি বাচ্চাদের সামনে করবেন না কোনও অবস্থাতেই। সব্বাইকে সমান সম্মান দিন, এতে বাচ্চারাও ভবিষ্যতে একজন আদর্শ মানুষ হয়ে উঠবে। 

১২. নিন্দে করবেন না কারোর পিছনে। এতে বাচ্চারাও একই জিনিস শিখবে। 

মোদ্দা কথা বাচ্চাদের সামনে সেই সমস্ত কাজ করা থেকে বিরত থাকুন যা তাদের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। বাচ্চাদের বোধশক্তি থাকে না। তারা যা দেখে, তাই শেখে। তাই সর্বদা চেষ্টা করবেন তাদেরকে ভালো ভালো জিনিস দেখাতে, শেখাতে। এতে তারা ভবিষ্যতে একজন দারুণ সুন্দর মনের মানুষ হয়ে উঠবে এবং আপনাকেই গর্বিত করে তুলবে। 

More Articles