২০ দিন পর প্রথম মুখ খুললেন রাষ্ট্রপতি! আরজি কর প্রসঙ্গে কী বলছেন দ্রৌপদী মুর্মু?
President Droupadi Murmu on RG Kar Rape: আরজি করের চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ২০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরে এই প্রথম মুখ খুললেন দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে দেশের শাসকদলের শীর্ষ ব্যক্তিদের তরফে অদ্ভুত নীরবতা চোখ এড়িয়ে যাওয়ার নয়। আরজি কর হাসপাতালের মধ্যে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও মর্মান্তিক হত্যার ২০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরে এই প্রথম ধর্ষণ ও হত্যা প্রসঙ্গে মুখ খুললেন দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। নিজের প্রথম প্রকাশ্য বিবৃতিতে দ্রৌপদী বলেছেন, এই ঘটনায় তিনি 'হতাশাগ্রস্ত এবং আতঙ্কিত'। দ্রৌপদী মুর্মু বলছেন, মানুষ আসলে 'সম্মিলিত স্মৃতিভ্রংশ'-এর সমস্যায় ভুগছে। বারেবারে দেশে এমন ঘটনা ঘটার পরেও, শাস্তি হওয়ার পরেও আবারও মহিলাদের হেনস্থা, নির্মমভাবে হত্যা প্রমাণ করছে মানুষের কিছুই মনে থাকে না।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাত্কারে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বলছেন, মেয়েদের নিম্নতর মানুষ ভাবা, কম শক্তিশালী ভাবা, কম বুদ্ধিমান ভাবা একটা রোগ। এমন মানসিকতা যে এখনও রয়েছে তা 'দুঃখজনক'। দ্রৌপদী মুর্মু বলছেন, "কোনও সভ্য সমাজ মেয়ে-বোনদের এই ধরনের নৃশংসতার শিকার হতে দিতে পারে না... যথেষ্ট হয়েছে! নির্ভয়ার ঘটনার (২০১২ সালে দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ ও হত্যা) পর ১২ বছর কেটে গেছে, এই ১২ বছরে অগণিত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সমাজ ভুলে গেছে... এই সম্মিলিত স্মৃতিভ্রংশ এক ঘৃণ্য বিষয়।"
আরও পড়ুন- ভারতে পর্নোগ্রাফি দেখা, শেয়ার করা কি অপরাধ? কী বলছে দেশের আইন?
আরজি করের ঘটনার পরেই উত্তরাখণ্ড এবং মহারাষ্ট্রে নার্সদের ধর্ষণের খবর পাওয়া যায়। সারা দেশেই মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংসা বাড়ছে। মালায়ালাম চলচ্চিত্র শিল্পে অভিনেতা ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলছেন বহু অভিনেত্রী ও মহিলারাই। এই ঘটনাগুলিকেও পৃথক বলে মনে করছেন না রাষ্ট্রপতি। বলছেন, "যখন ছাত্র, চিকিৎসক এবং নাগরিকরা কলকাতায় বিক্ষোভ করছে, অপরাধীরা অন্যত্র এই একই নৃশংস কাজ ঘটিয়ে চলেছে।"
আরও পড়ুন- যৌনাঙ্গে রড, দেহ ৩৫ টুকরো! অপরাধীকে নৃশংসতা শেখায় আসলে কারা?
আরজি কর হাসপাতালে ওই তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহ পাওয়া যায় ৯ অগাস্ট সকালে। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে জানা যায়, ওই চিকিৎসকের পা, হাত এবং যৌনাঙ্গে নৃশংস আঘাতের প্রমাণ রয়েছে৷ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই ধর্ষণকে আড়াল করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মরিয়া চেষ্টা বিক্ষোভে আরও ইন্ধন জোগায়। সমস্ত সাধারণ মানুষ মিছিল জমায়েতে বিচার চেয়ে রাস্তায় নামেন। আরজি করের প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশের অন্য রাজ্যগুলিতেও। মামলা চলে যায় সিবিআইয়ের হাতে। সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই মামলার শুনানির ভার নেয়।
তারপর বিষয়টি তৃণমূল এবং বিরোধী দল বিজেপির সরাসরি সংঘাতে পর্যবসিত হয় পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের ডাকা নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে। বিজেপি পুলিশের নবান্ন অভিযান দমনকে সামনে রেখে বাংলা বনধ ডাকে। ঘটনাচক্রে বিজেপির এই কর্মসূচির পরেই রাষ্ট্রপতি তাঁর প্রথম বিবৃতি দিয়েছেন। মহিলাদের বিরুদ্ধে এই ধরনের জঘন্য অপরাধ প্রতিরোধে সামাজিক পরিবর্তনের প্রয়োজন বিষয়ে কথা বলেছেন। আরজি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে যে বিক্ষোভ চলছে, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সেই বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে দ্রুত বিচারের আহ্বান জানিয়েছেন।