২৭ জনের দেশে নিজস্ব সেনা থেকে নিজস্ব মুদ্রা, যেভাবে গড়ে উঠল প্রিন্সিপ্যাল অব সিল্যান্ড...

Smallest Country, Sealand: প্রিন্সিপ্যাল অব সিল্যান্ডে থাকেন মাত্র ২৭ জন নাগরিক। ইংল্যান্ড থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের এই ছোট্ট দেশের রয়েছে নিজস্ব পতাকা, নিজস্ব সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে এমনকী নিজস্ব মুদ্রাও।

মানুষের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রতা খারাপ। কিন্তু দেশের ক্ষেত্রে এই ক্ষুদ্রতাই হয়ে উঠতে পারে তার বিশেষত্ব। নীড় হোক বা দেশ ছোট হোক, ক্ষতি নেই। হৃদয় বড় হওয়া চাই বাবুমশাই। আর সেই ভরসাতেই মাত্র ২৭ জনকে নিয়ে চলছে একটা গোটা দেশ। রয়েছে নিজস্ব পতাকা, নিজস্ব সেনাবাহিনী, এমনকী মুদ্রাও। অথচ আয়তন আর জনসংখ্যা মাত দিতে পারে ছোট্ট পাড়াকেও।

আরও পড়ুন: রাতারাতি কমে গেল দেশের সমস্ত নাগরিকের বয়স! যে ম্যাজিক ঘটাল দক্ষিণ কোরিয়া

এতদিন পর্যন্ত সকলেই জানতেন, পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম দেশ ভাটিক্যান সিটি। তবে ভাটিক্যান সিটিকে পিছনে ফেলে সম্প্রতি উঠে এসেছে অন্য একটি নাম। উত্তর সাগর সংলগ্ন ছোট অফশোর প্ল্যাটফর্ম সিল্যান্ড। সরকারি নাম প্রিন্সিপ্যাল অব সিল্যান্ড। পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম দেশ। যদিও ভাটিক্যান সিটি না সিল্যান্ড, কে বেশি ছোট, এ নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। চারদিকে সমুদ্র দিয়ে ঘেরা এই দেশটির জনসংখ্যা দেশের আয়তনের মতোই অবাক করা। হাতে গুনে মাত্র সাতাশ জন। ঠিকই পড়ছেন, প্রিন্সিপ্যাল অব সিল্যান্ডে থাকেন মাত্র সাতাশ জন নাগরিক। ইংল্যান্ড থেকে দশ কিলোমিটার দূরের উত্তরসাগরের উপরে অবস্থিত এই ছোট্ট দেশের রয়েছে নিজস্ব পতাকা, নিজস্ব সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে এমনকী নিজস্ব মুদ্রাও।

তবে খালি চোখে প্রায় অদৃশ্য এই দেশ। উত্তর সাগর ধরে নৌকা করে এগিয়ে গেলে পাড় থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছোট্ট এই ভূখণ্ড। বাইরে থেকে দেখলে হয়তো আলাদা কিছুই মনে হবে না। সাধারণ একটা প্ল্যাটফর্মের মতো দেখতে অংশ, যার উপরে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর রয়েছে। না, কোনও প্রধানমন্ত্রী বা পার্লামেন্টের বালাই নেই এ দেশে। বরং এ দেশ আজও শাসন করেন রাজা-রানি। ইতিহাস কম নেই এই প্রিন্সিপ্যাল অব সিল্যান্ড দেশটির। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানির আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য এই ছোট্ট ভুখণ্ডটিকে ব্যবহার করেছিল ইংল্যান্ড। সে সময়েই ব্রিটিশরা তৈরি করেছিল ছোট্ট এই দেশটিকে। ব্রিটিশ সেনা ও নৌবাহিনী এটিকে দুর্গ হিসেবে ব্য়বহার করত। সেই জন্যই ব্রিটেনের সীমানার বাইরে গড়ে তোলা হয়েছিল এই গোপন আস্তানা। ঠিক করা হয়েছিল, যুদ্ধপর্ব মিটে গেলে নষ্ট করে দেওয়া হবে ওই প্ল্যাটফর্ম প্রদেশ। যুদ্ধ মিটলেও থেকে গেল সিল্যান্ড। গড়ে উঠল ছোট্ট একটি জনবসতি।

১৯৪৩ সাল নাগাদ যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তুঙ্গে, সে সময় ব্রিটিশ সরকার তাদের মন্সেল দুর্গ হিসাবে সেখানে গড়ে তোলে এইচএম ফোর্ট রাগস। স্বাভাবিক ভাবেই যুদ্ধের সময় বিরোধী শক্তিরা চেষ্টা করত বোমা ফেলে শত্রুদেশের সেনাঘাঁটিগুলো নষ্ট করে দিতে। সেখানে দুর্দান্ত কার্যকরী ছিল সিল্যান্ডের এই ব্রিটিশ দুর্গ। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে ১৯৫৬ সাল নাগাদ এই দুর্গগুলিকে নষ্ট করে দেয় ব্রিটিশরা। কিন্তু থেকে যায় প্রিন্সিপ্যাল অব সিল্যান্ড। ১৯৬৭ সালে সিল্যান্ডের মালিকানা যায় প্যাডি রয় বেটস নামে এক ব্যক্তির কাছে। পাইরেট রেডিও ব্রডকাস্টারসদের কাছ সিল্যান্ড দখল করে সেটিকে সার্বভৌম দেশ হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি। তবে গত ৫৪ বছর ধরে ব্রিটেন সরকারের আর্থিক সহায়তাতেই চলছে দেশটি।

আরও পড়ুন: প্রতিবেশীর বালাই নেই, পৃথিবীর নির্জনতম এই দ্বীপ যেন শান্তির নীড়

এক সময় যা ছিল যুদ্ধের গোপন সেনাঘাঁটি, তা-ই আজ সাতাশ জন অধিবাসীর দেশ। ব্রিটিশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় চললেও নিজস্ব পতাকা থেকে নিজস্ব মুদ্রা, প্রায় সবদিক দিয়েই স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ এই প্রিন্সিপ্যাল অব সিল্যান্ড। পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম দেশ হিসেবে এতদিন নামডাক ছিল ভ্যাটিকান সিটির। মাত্র ০.৪৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেশটিতে বাস করেন ৮২৫ জনের কাছাকাছি নাগরিক। কিন্তু এই প্রিন্সিপ্যাল এব সিল্যান্ড দেশটিতে যত মানুষ থাকেন, তার চেয়ে বেশি সংখ্যক পরিবার তো থাকে একটা ছোট্ট পাড়াতেই। তা সত্ত্বেও দেশ হিসেবে কোনওদিক থেকে কম যায় না খুদে এই ভুখণ্ড।

More Articles