প্রতিবেশীর বালাই নেই, পৃথিবীর নির্জনতম এই দ্বীপ যেন শান্তির নীড়

Just Room Enough Island: ছোট্ট একফালি দ্বীপ। গোটা দ্বীপের আকার একটা টেনিস কোর্টের ধারেকাছে হবে। যারা মিনিমালিস্ট, তাদের জন্য এই দ্বীপ হতেই পারে আদর্শ ঘরদুয়ার।

নিজের বাড়ি, নিজের ঘর, নিজের সম্পদের দিকে তো কমবেশি সকলেই ছোটেন। সেই ছোটার পিছনে পিছনে ছোটে ইএমআই, ঋণের বোঝা আরও কত কি! তবু একেশ্বরেরা গোটা পৃথিবীকেই একার করে পেতে চায়। তাকে স্বার্থপরতা বলতে পারেন, কিংবা আত্মমগ্নতা। তবে পৃথিবী হোক না হোক, একটা আস্ত দ্বীপ হতে পারে আপনার একার। প্রতিবেশীর বালাই নেই, উঁকিঝুঁকির পরোয়া নেই। অসীম জলের মাঝখানে নির্জন একখানা দ্বীপে আপনিই সর্বেসর্বা। সেই জীবনে কতটা উত্তেজনা বা আনন্দ থাকবে জানা নেই, তবে নির্জন শান্তি মিলবে, রয়েছে তার গ্যারান্টি।

এই ক্যাকাফোনির পৃথিবীতে নির্জনতার বড়ই অভাব। যেখানেই যাবেন গিজগিজে ভিড়। এককালে ইংল্যান্ডের সিলি দ্বীপপুঞ্জের কাছে ছিল বিশপ রক নামে একটি নির্জন লাইটহাউজ। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী, পৃথিবীর সবচেয়ে নির্জনতম লাইটহাউজ ছিল সেটি। তবে সেই বিশপ রকের অস্তিত্ব আজ আর নেই। ইতিহাসের খাতা থেকে হারিয়ে গিয়েছে সেই নির্জনতম বাতিঘর। তবে একাকিত্বপ্রিয় মানুষের স্বস্তি হিসেবে আজও পৃথিবীতে যা রয়েছে, তা ওই ক্ষুদ্রতম দ্বীপ।

আরও পড়ুন: পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম দ্বীপ এটিই! ১১ হাজার বছর ধরে এখানে কেবল বাস বিষাক্ত সাপেদের

ছোট্ট একফালি দ্বীপ। গোটা দ্বীপের আকার একটা টেনিস কোর্টের ধারেকাছে হবে। যারা মিনিমালিস্ট, তাদের জন্য এই দ্বীপ হতেই পারে আদর্শ ঘরদুয়ার। নিউ ইয়র্কের থাউজান্ড আইল্যান্ডে কম করে হলেও রয়েছে দু'হাজারের বেশি দ্বীপ। বিভিন্ন আকার তার, কোনওটা ছোট, কোনওটা বা মাঝারি। তবে তাদের সবার থেকে আলাদা আলেকজান্দ্রিয়া উপসাগরে সংলগ্ন জাস্ট রুম এনাফ আইল্যান্ড। মানচিত্র বইতে চোখ রাখলে দেখবেন ওন্টারিও লেকের উত্তরপূর্ব দিক ধরে বয়ে গিয়েছে সেন্ট লরেন্স নদী। তার ঠিক গায়েই রয়েছে ছোট্ট একটা বিন্দু। বিন্দু নয়, ওটাই আসলে জাস্ট রুম এনাফ দ্বীপ। নামের মতোই এক্কেবারে ছোট্ট একফালি দ্বীপ। তার ঠিক পাঁচশো মিটার দূরের দ্বীপটিতেই রয়েছে বোল্ডট ক্যাসেল। যেটি বানিয়েছিলেন কোটিপতি জর্জ বোল্ড। গল্পের বই থেকে উঠে আসা প্রাসাদ বলতে যা বোঝায়, একেবারে তাই যেন। ১৯০০ সালে সেটির নির্মাণ শুরু করেছিলেন জর্জ। এখন অবশ্য সেটি একটি নামকরা হোটেল।

আর এই বিশালের পাশেই টিমটিম করে জেগে রয়েছে জাস্ট রুম এনাফ দ্বীপ। সাধে বলেছি, মিনিমালিস্টদের জন্য এই দ্বীপ আদর্শ। একটি মাত্র গাছ আর একটি মাত্র বাড়ির জায়গা রয়েছে দ্বীপটিতে। অনেকে আবার একে হাব আইল্যান্ডও বলে থাকেন। ১৯৫০ সালে দ্বীপটি কেনেন এক সুইস পরিবার। যত্ন করে বানিয়েছিলেন একটি কটেজ, সযত্নে বসিয়েছিলেন একটি গাছ। ওই দ্বীপে সম্পদ বলতে ওইটুকুই। সাধ করে দ্বীপের নাম রাখেন তাঁরা জাস্ট রুম এনাফ দ্বীপ। নাম রাখার কারণ তো আর আলাদা করে বলে দিতে হয় না।

নির্জন আস্তানার খোঁজে দ্বীপটি কিনেছিলেন সাইজল্যান্ড পরিবার। কিন্তু তাঁদের সেই পরিকল্পনা বুমেরাং হতে সময় লাগল না। অল্পদিনেই বেশ নাম ছড়িয়ে গেল জাস্ট রুম এনাফ দ্বীপের। দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসতে লাগলেন পর্যটক। অনেকে এসে রাত্রিযাপনও করতে শুরু করলেন দ্বীপটিতে। খানখান হয়ে গেল খুদে দ্বীপের সমস্ত নির্জনতা।

সব মিলিয়ে দ্বীপটির আকার হবে ৩,৩০০ বর্গফুটের কাছাকাছি। ভাটার সময় দেখলে বুঝবেন, বিশপ রকের আকারের অর্ধেকও নয় এই দ্বীপ। সেই হিসেবে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম বসতিপূর্ণ এলাকা বলেও পরিচিত জাস্ট রুম এনাফ দ্বীপ। তবে এই দ্বীপ আকারে এতটাই ছোটো যে একটু ভুল পা ফেললেই আপনি পড়ে যেতে পারেন সেন্ট লরেন্স নদীর জলে। তাই সাঁতার না জানা পর্যটকদের জন্য বেশ বিপজ্জনক এই দ্বীপ। তাই বলে পর্যটকের কমতি নেই দ্বীপ জুড়ে।

আরও পড়ুন: পর্যটক দেখলেই মেরে ফেলে উপজাতিরা! ভারতের কোথায় রয়েছে এই রহস্যময় নিষিদ্ধ দ্বীপ?

একদিন যে নির্জনতার প্রয়োজনে দ্বীপটিকে সাজিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন সুইস পরিবারটি, সেই নির্জনতার আজ দফা রফা হয়ে গিয়েছে পর্যটনের সুবাদে। অবশ্য আমেরিকার পর্যটকরাও ভারতীয় পর্যটকদের মতোই দেওয়াল পেলেই নিজেদের নাম খোদাই করতে লেগে পড়েন কিনা জানা নেই। কিংবা প্লাস্টিক ফেলে সেটির সর্বনাশ করেন কিনাও বলা কঠিন। তবে পর্যটকদের হল্লা-চিৎকার, উল্লাস যে জাস্ট রুম এনাফ দ্বীপের নির্জনতার বুক ফুঁড়ে দেয় একেবারে, তা ভাবাটা শক্ত নয়।

More Articles