অসুস্থ পুতিন এবার সরে দাঁড়াবেন? আমূল বদলে যাবে রুশ ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতি?

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে যখন সরগরম বিশ্ব, তারই মাঝে ফের আরও একবার আলোচনার কেন্দ্রে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ক্রেমলিনের এক সূত্রের খবর, ক্যানসার-আক্রান্ত পুতিন অপারেশনের জন্য সাময়িকভাবে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন। এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পুতিনের পরিবর্তে দায়িত্ব নিতে পারেন প্রাক্তন এফএসবি প্রধান নিকোলাই পত্রুশেভ। বর্তমানে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সচিব পত্রুশেভই রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের অন্যতম কারিগর। মূলত পত্রুশেভই পুতিনকে বুঝিয়েছিলেন, ইউক্রেনে ঘাঁটি গেড়েছে নব্য নাৎসিবাহিনী। কিন্তু পুতিনের অসুস্থ হওয়ার জল্পনা এই প্রথম নয়। 

সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত, পুতিনের বাচনভঙ্গি এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্য থেকে 'ডেইলি মেইল'-এর একটি সূত্র কিছুদিন আগে দাবি করেছিল, পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট। বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী, পুতিনের যে যে লক্ষণগুলির কথা সংবাদমাধ্যম উল্লেখ করেছে, তার সবক'টিই পারকিনসন্সের লক্ষণ। অন্য আরেকটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, পুতিন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সজান্দার লুয়াকাশেঙ্কোর সঙ্গে একটি বৈঠকে সঠিকভাবে হাত মেলাতে পারছিলেন না। তাঁর হাত কাঁপছিল। সংবাদমাধ্যমের কাছে তা লুকোতেই তিনি বেলারুশের প্রেসিডেন্টকে আলিঙ্গন করেন। কিন্তু রাশিয়ান সংবাদমাধ্যম এবং মস্কো সব সময়েই এই ধরনের দাবি গুলিকে অস্বীকার করেছে। এই প্রসঙ্গে ন্যাটোর প্রাক্তন পরামর্শদাতা দাবি করেছেন, পুতিন সত্যিই অসুস্থ এবং তাঁকে একাধিক রকমের ওষুধ খেতে হয় বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে। সেইসঙ্গে তিনি এও দাবি করেছেন, বর্তমানে কী পরিস্থিতি না জানলেও, কিছুবছর আগেও পুতিন পারকিনসন্সে আক্রান্ত ছিলেন। 

আবার রয়টার্সের একটি রিপোর্ট বলছে, রাশিয়ায় চার্চের একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন চার্চের প্রধান পেত্রিয়ার্ক কিরিল যখন জনসমক্ষে দাবি করেন আবার পৃথিবীতে খ্রিস্টের আগমন হয়েছে, অনুষ্ঠানের অন্যান্য সদস্যদের মতো পুতিন এই ব্যাপারে নিজের সহমত প্রকাশ করেননি। এই ঘটনার একাধিক ভিডিও ফুটেজ বলছে, তথাকথিত ‘মাচো’ ইমেজের আড়ালে বেশ অসুস্থই দেখাচ্ছিল রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে। এখানেই শেষ নয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রাশিয়ান অলিম্পিকের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে রাশিয়ান প্রেসিডেন্টের মুখ অস্বাভাবিক রকমের ফোলা লাগছিল। 'দ‍্য নিউ ইয়র্ক পোস্ট'-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী অলিম্পিকে পদকপ্রাপ্ত কামিলা ভালিভার সঙ্গে ছবি তোলার সময় রাশিয়ান প্রেসিডেন্টকে ক্যামেরার সামনে যথেষ্ট ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত দেখিয়েছে।

আরও পড়ুন: ইউক্রেনের হাতে আত্মঘাতী ভয়াবহ ড্রোন, রাশিয়ার পরিণতি কি বদলে যাবে?

এর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের হাঁটা নিয়েও তৈরি হয়েছিল জল্পনা। বেশ কিছু ভিডিও দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন হাঁটার সময় পুতিনের ডান হাত স্থির থাকে? বেশ কিছু বিশেষজ্ঞর দাবি ছিল, কেজিবি-র ওয়েপনস ট্রেনিং অর্থাৎ অস্ত্র পরীক্ষার সময় আহত হয় তাঁর ওই হাতটি। সেই থেকেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে রয়েছে ওই হাতটি। যদিও এই তত্ত্বের সমর্থনে যথেষ্ট নথি পাওয়া যায়নি। 

কিন্তু পুতিনের এই অসুস্থতা ঘিরেও তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। যে রাশিয়ার ভেতরের খবর জোগাড় করতে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর নাভিশ্বাস ওঠে, সেখানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে পুতিনের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অব্যাহতির খবর আদৌ কতখানি বিশ্বাসযোগ্য? ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে এমনিতেই আন্তর্জাতিক মহলে চাপের মুখে রয়েছে রাশিয়া। এই প্রসঙ্গে রাশিয়ার অন্যতম বিখ্যাত চিকিৎসক জ্যাক স্লোন অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, বিপক্ষকে অসাবধান করতে মাঝেমধ্যেই রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মস্কো প্রশাসন এই ধরনের গুজব ছড়িয়ে থাকে। আশ্চর্যজনকভাবে এই পুতিনের ক্যানসার এবং প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সাময়িক সরে দাঁড়ানোর খবরে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।    

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, এখনও যুদ্ধ থামেনি ইউক্রেন-রাশিয়ার। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করেন। গত দু'মাস ধরে নাগাড়ে চলছে যুদ্ধ। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিস্তর। ইউক্রেনের প্রায় গোটাটাই অধিকার করার দিকে ধাপে ধাপে এগিয়েছে রাশিয়া। আবার অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি কোনওভাবেই আত্মসমর্পণ করতে চাননি রাশিয়ার কাছে। এই ব্যাপারে ইউরোপ এবং আমেরিকা বরাবরই রাশিয়ার এই সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী নীতির কট্টর নিন্দা করেছে এবং ইউক্রেনের দিকে নিজেদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি সংবাদমাধ্যমে ওঠা যাবতীয় জল্পনাকে সত্যি করে সাময়িকভাবে হলেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়ান, সেক্ষেত্রে যুদ্ধের এক বড়সড় রদবদল হতে পারে। পুতিনের বদলে যদি প্রাক্তন এফএসবি সচিব পত্রুশেভ প্রেসিডেন্টের পদে বসেন, সেক্ষেত্রে ইউক্রেনের প্রতি যুদ্ধের ঝাঁজ আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মহল।

More Articles