কোহিনূর পরবেন না রানি ক্যামিলা! হিরের আসল মালিক তবে কে?
Kohinoor Diamond: ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য দাবি করে, এই বিশাল হিরেটি রানি ভিক্টোরিয়াকে ১৮৪৯ সালে ১১ বছর বয়সী শিখ সম্রাট মহারাজা দলীপ সিং 'উপহার' দিয়েছিলেন।
ব্রিটিশ শাসন শেষ, রানিও মৃত। তবু ভারত আর যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের মাঝে জ্বলজ্বলে ঘা হয়ে রয়েছে কোহিনূর। এতকাল পেরিয়ে যাওয়ার পরে এবার ভারত থেকে লুঠ করা হিরে ভারতকে ফেরত দেওয়া উচিত কিনা তা নিয়ে তীব্র আলোচনা ও তর্ক সাড়া ফেলেছে বিশ্বে। তর্কের নেপথ্যে রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাংবাদিক নরিন্দর কৌর এবং জিবি নিউজের সাংবাদিক এমা ওয়েব। দুই সাংবাদিক কোহিনূরকে নিয়ে এমন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন যা শেষ অবধি তিক্ততার দিকেই নিয়ে যায় সম্পূর্ণ বিষয়টিকে। নরিন্দর কৌর জানান, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ব্রিটিশরা এই হিরে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ভারতের এই সম্পদের উপর আসলে অধিকার একমাত্র ভারতেরই।
কোহিনূর বিশ্বের সবচেয়ে বিতর্কিত রত্নগুলির মধ্যে অন্যতম। ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য এবং ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক বিতর্কের বিষয় এই বিশেষ হিরে। কূটনৈতিক সংবেদনশীলতার কথা মাথায় রেখেই রাজা চার্লস রাজ্যাভিষেকের সময় ১০৫ ক্যারেটের ডিম্বাকৃতি হিরেটি পরবেন না রানি ক্যামিলা। রাজ বংশের এই সিদ্ধান্তটি প্রকাশ্যে আসার পরেই ভারতের হিরে ভারতে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছে।
“তুমি ইতিহাস জানো না। এই হিরে উপনিবেশ এবং রক্তপাতের প্রতিনিধিত্বই করে। ভারতকে ফিরিয়ে দাও। আমি বুঝতে পারছি না, কেন ভারত থেকে একজন ভারতীয় শিশুকে এটি দেখার জন্য টাকা দিয়ে যুক্তরাজ্যের যেতে হবে,” তর্কের যুক্তি শানান নরিন্দর। বিপক্ষে এমা ওয়েব জানিয়েছিলেন, এই রত্নটি আসলে দুই দেশের 'প্রতিদ্বন্দ্বিতার বস্তু'।
'This is a contested object.' @Emma_A_Webb argues we should not be returning the Crown Jewels back to their geographical origins as ownership can be disputed in heated debate. pic.twitter.com/HCvMCqYFNi
— Good Morning Britain (@GMB) February 16, 2023
“সেই শাসকও লাহোরের শাসক ছিলেন তাহলে পাকিস্তানও কি এই হিরের দাবি জানাবে? তারাও পারস্য সাম্রাজ্য থেকে এটি চুরি করেছিল। পারস্য সাম্রাজ্য মুঘল সাম্রাজ্য আক্রমণ করেছিল তাই এটি একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতারই বস্তু,” বলেন এমা ওয়েব। পরে একটি টুইটে নরিন্দর লেখেন, কোহিনূর হিরেটি ভারতে পাওয়া গিয়েছিল এবং ভারতেই যত্নে তৈরি করা হয়েছিল এবং তাই ভারত সরকারের কাছে এই হিরে ফেরত দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন- কোনও পুরুষই সামলাতে পারেননি কোহিনূর! কোন মন্ত্রে ‘অভিশপ্ত’ হিরের নতুন মালিক হচ্ছেন ক্যামিলা!
কোহিনূর হিরে বিশ্বের বৃহত্তম হিরেগুলির মধ্যে অন্যতম। ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য দাবি করে, এই বিশাল হিরেটি রানি ভিক্টোরিয়াকে ১৮৪৯ সালে ১১ বছর বয়সী শিখ সম্রাট মহারাজা দলীপ সিং 'উপহার' দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশরা যে সত্য চেপে যায় তা হলো, দলীপ সিংয়ের মা জিন্দ কৌর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন বন্দি ছিলেন। ভারতের গভর্নর-জেনারেল জেমস অ্যান্ড্রু ব্রাউন-রামসে ওরফে লর্ড ডালহৌসি এই বিশেষ রত্নটিকে 'যুদ্ধের লুণ্ঠন' হিসেবেই উল্লেখ করেছিলেন।
কোহিনূর হিরেটি ভারত থেকে লুঠ করে নিয়ে গিয়ে রানি ভিক্টোরিয়াকে দেওয়া হয়। ১৮৫১ সালে এটি প্রদর্শিত হয়। বর্তমানে ব্রিটিশ সম্রাটের মুকুটে খচিত রয়েছে এই কোহিনূর। কোহিনূর শব্দের অর্থ আলোর পর্বত। কাকাতিয়া রাজবংশের শাসনামলে, বর্তমান অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত কোল্লুর খনিতে খননের সময় এই হিরেটি মেলে।
কাকাতিয়া রাজবংশ ওয়ারঙ্গলের একটি মন্দিরে ভদ্রকালীর মূর্তির বাম চোখ হিসাবে এই হিরেটি স্থাপন করা হয়েছিল বলে জানা যায়। পরে মুসলিম শাসকরা এই হিরে লুঠ করে এবং তারপর ১৬ শতকে মুঘল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন নেতা এবং পরবর্তীতে পারস্য ও আফগানদের হাতবদল হয় এই হিরে।