অধীরের গড় কি অধীরেরই রইবে? রাহুলের ন্যায় যাত্রায় যা প্রমাণ পেল বহরমপুর

Rahul Gandhi Bharat Jodo Nyay Yatra : মুর্শিদাবাদে বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বামেদের সাতটি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে।

ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার ১৯ তম দিনে অধীরের গড়ে রাহুল গান্ধি। ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা বাংলায় প্রবেশ করার শুরুর দিন থেকেই অধীর রঞ্জন চৌধুরী ছায়ার মতো রয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর পাশে। এবার জুড়েছেন রাজ্যের বাম নেতারাও। মাস খানেক আগেই শেষ হয়েছে বামেদের ইনসাফ যাত্রা। ইনসাফ বা ন্যায় বিচারেরই লক্ষ্যে ছিল বামেদের যাত্রা। রাহুলও বলছেন ন্যায়ের কথাই। ন্যায় যাত্রা দিয়ে জনসংযোগ করছেন তাই তিনি। শরিক হয়েও তৃণমূল পাশে নেই, রয়েছে বামেরা, বিজেপি বিরোধিতায় মিলে গিয়েছে দুই দল।

মালদার পর বহরমপুরে যান রাহুল গান্ধি। যাত্রা শুরু হয়েছিল সুজাপুর থেকে। ফারাক্কা ব্রিজ, এনটিপিসি মোড়, ডাক বাংলো মোড় হয়ে রঘুনাথগঞ্জে গিয়ে সেখানে জনসভা রাহুলের। বিকেলে বহরমপুরের নানা জায়গা জুড়ে এগিয়ে যাবে ন্যায় যাত্রা। মুর্শিদাবাদে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা কর্মসূচি নিয়ে পৌঁছেই বিড়ি শ্রমিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন রাহুল। এই শ্রমিকদের জীবন, মজুরি সহ বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন। রাহুল গান্ধির ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় ইন্ডিয়া জোট শরিক তৃণমূলের কোনও নেতার দেখা নেই। তবে আছে বামেরা। বাম ও কংগ্রেস এই রাজ্যে আগেও জোট করেছে। ইন্ডিয়া জোটের শরিকও তারা।

আরও পড়ুন- ন্যায় যাত্রায় মানুষের মন জিতলেন রাহুল? ভোট পাবে কংগ্রেস?

রাহুল গান্ধির ন্যায় যাত্রায় তাই সামিল হয়েছেন বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী। মালদহে ছিলেন শতরূপ ঘোষও। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমেরও যোগ দেওয়ার কথা। গতকাল, যখন মালদায় রাহুল গান্ধি সভা করছেন, কথা বলছেন, তখন বহরমপুরের প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে সমস্যা নয়। সমস্যা মূল বামেদের সঙ্গেই। আর বামেরাই তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের 'আন্ডারস্ট্যান্ডিং' খারাপ করেছে। মমতা বলছেন, "সিপিএম বিজেপির প্রধান দালাল। দুটো আসন দিতে চেয়েছিলাম, রাজি হয়নি। আমি বললাম, বিয়াল্লিশটা চাই? একটাও দেব না। আমি একাই লড়ব। আমার ক্ষমতা আছে।' মমতা রাহুলের ন্যায় যাত্রার পথ ধরে জন সংযোগ করে ইতিমধ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছেন রাজ্য তাঁর। রাহুলের ক্ষণিকের ক্যারিশ্মা দিয়ে কংগ্রেসের পুরাতন ভোটব্যাঙ্ক জাগানো যাবে না।

তবে পুরনো জোটসঙ্গীর পাশে থেকেছে বাম নেতৃত্ব। ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় বাম-কংগ্রেসের পুরনো সম্পর্ক চাঙ্গা হয়েছে। মুর্শিদাবাদে বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বামেদের সাতটি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। মুর্শিদাবাদে প্রায় ১৩ লাখ বিড়ি শ্রমিক রয়েছেন। মুর্শিদাবাদে গিয়ে প্রথমেই বিড়ি মহল্লায় যান রাহুল। বিড়ি শ্রমিকদের বাড়িতে মহিলাদের সঙ্গেও আলাদা করে কথা বলেন। এই ১৩ লক্ষ বিড়ি শ্রমিকের ভোটব্যাঙ্ককে বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব মিলে রাখতে চাইছে নিজেদেরই কাছে।

আরও পড়ুন- Exclusive : ডেলিভারি শ্রমিকদের নিয়ে কী ভাবছে কংগ্রেস? যা জানালেন কানহাইয়া কুমার

এক সময় কংগ্রেসের অন্যতম গড় ছিল এই মুর্শিদাবাদই। পরে অনেকটাই জমি চলে যায় তৃণমূলয়ের পকেটে। তবে গত লোকসভা নির্বাচনেও বহরমপুর নিজের দখলেই রাখতে পেরেছিলেন অধীর চৌধুরী। রাহুলের এই ন্যায় যাত্রা নিয়ে বহরমপুরে নিজেরে গড়ে আসাকে তাই বিশেষ মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বহরমপুর কংগ্রেসের থেকে ছিনিয়ে আনতে মরিয়া চেষ্টা করবেই তৃণমূল। তাই রাহুলের যাত্রার সময়েই মমতাকে আসতে হয়েছে মালদা, মুর্শিদাবাদ-বহরমপুরে। মমতা চাইছেন নিরঙ্কুশ জয়। আর অধীর চাইছেন এই গড় কোনওভাবেই যাতে তাঁদের হাত থেকে না বেরোয়। একবার এই অঞ্চল বিরোধী শাসকের হাতে চলে গেলে কংগ্রেসের পায়ের তলার জমি সরে যাবে একেবারেই। তাই অধীর খানিক নিজের 'জায়গা' বোঝাতেই রাহুলের যাত্রাকে নিয়ে এলেন নিজের এলাকায়, মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

More Articles