"সব মোদিই চোর!" দু'বছরের সাজা রাহুল গান্ধীর, জেলেই থাকতে হবে প্রধান বিরোধী নেতাকে?
Rahul Gandhi Two Years Jail : এমনকী দুই বছরের জেলের সাজাও শোনানো হয়েছে। আপাতত ভোটের আগে এই ঘটনায় উত্তাল রাজনৈতিক মহল।
মাত্র কয়েকদিন আগের কথা। তাঁর ভারত জোড়ো যাত্রা নিয়ে গোটা দেশ আলোচনায় মত্ত ছিল। এই কর্মসূচির ওপর ভিত্তি করেই কি কংগ্রেস নিজের জায়গা ফিরে পাবে? মোদির বিরুদ্ধে ২০২৪ নির্বাচনের মুখ হয়ে উঠবেন রাহুল গান্ধী? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সেই উত্তরই খুঁজছিলেন। তার আগেই নতুন একটা ঘটনায় তোলপাড় দেশের রাজনীতি। মোদিকে অসম্মান করার ‘অপরাধে’ বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করেছে গুজরাতের সুরাট আদালত। এমনকী দুই বছরের জেলের সাজাও শোনানো হয়েছে। আপাতত ভোটের আগে এই ঘটনায় উত্তাল রাজনৈতিক মহল।
ঠিক কী হয়েছিল? কী জন্য এমন সাজা শোনানো হল? সেটা জানার জন্য ফিরে যেতে হবে গতবারের লোকসভা নির্বাচনের সময়। ২০১৯ সাল। লোকসভা ভোটের প্রচারে প্রথম সারির রাজনীতিবিদরা গোটা ভারতের নানা জায়গায় জনসভা করছেন। সেরকমই কর্ণাটকের একটি সভায় বক্তব্য রাখছিলেন রাহুল গান্ধী। তখনই নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করেন তিনি। বক্তব্য চলাকালীন সামনে আসে নীরব মোদি আর ললিত মোদির নামও। সেখানেই সনিয়া-রাজীব পুত্রের বক্তব্য ছিল, ললিত মোদি, নীরব মোদি, নরেন্দ্র মোদি। এদের সবার নামেই মোদি পদবি রয়েছে। তাহলে সব চোরেরা ‘মোদি’ কেন?
আরও পড়ুন : অলক্ষ্যেই ম্যাজিক করছেন রাহুল! হিংসার বিরুদ্ধে মানুষকে জুড়বে ভারত জোড়ো যাত্রাই?
বস্তুত রাহুল গান্ধীর এই মন্তব্যই আগুনে ঘি ঢালে। তারপর থেকে বারবার সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। কী করে একটা গোটা সম্প্রদায়কে অপমান করলেন রাহুল গান্ধী? এই প্রশ্নও প্রবলভাবে উঠে আসে। তারপরই মামলা দায়ের হয় তাঁর নামে। বিহারের পাটনার নেতা ও সেই সময়ের উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদি ও গুজরাতের সুরাটের বিজেপি বিধায়ক পূর্ণেশ মোদি মানহানির মামলা দায়ের করেন। চারবছর ধরে সুরাট আদালতে তারই শুনানি চলছে। রাহুলের দিক থেকে প্রথম থেকেই বক্তব্য ছিল, কোনও গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কে ছোট করার জন্য এই কথা বলেননি তিনি। অন্যদিকে বিজেপি নেতা-সমর্থকদের দাবি, দেশের আইন সবার জন্য একই। আর এই মন্তব্য করে কেবল প্রধানমন্ত্রী নয়, মোদি সম্প্রদায়কেই আহত করেছেন রাহুল গান্ধী।
সেই মামলাতেই দুই বছরের জেলের সাজা শোনানো হয়েছে রাহুল গান্ধীকে। যদিও তারপরই তাঁকে এক মাসের জামিনও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই প্রসঙ্গ যে রাজনীতির আঙিনায় আরও বড় ঢেউয়ের আকার ধারণ করবে, তা মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এরপর রাহুল গান্ধী সহ কংগ্রেস নেতারা উচ্চ আদালতেও যেতে পারেন। তবে এসবের বাইরে রয়েছে আরও একটি প্রসঙ্গ। রাহুল গান্ধী এখন মনোনীত সাংসদ। নিম্ন আদালত দুই বছরের জেলের সাজা দিলেও সেক্ষেত্রে তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে সংবিধানের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন কিছু বিশেষ কথা বলে। প্রথমত, আইনের ৮(৩) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনও জনপ্রতিনিধি দুই বছরের বেশি সময়ের কারাবাসের সাজা পান, তবে তাঁর পদ খারিজ করা হবে। এমনকী, জেল থেকে বেরনোর ছয় বছর পরও কোনও নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না।
আরও পড়ুন : ২০২৪ নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি বনাম কে? এখন থেকেই উত্তর খোঁজার চেষ্টায় বিজেপি বিরোধীরা
কিন্তু আইনে এটাও বলা হয়েছে, রায়দানের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আবেদন করলে, নিষ্পত্তি না হয়া পর্যন্ত জনপ্রতিনিধির পদ বহাল থাকবে। এক্ষেত্রে দু’বছরের জেলের সাজা দিলেও রাহুলকে এক মাসের জামিনও দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, এই সময় তিনি উচ্চ আদালতে যেতে পারবেন। যতক্ষণ না সেখান থেকে নিষ্পত্তি হচ্ছে, ততক্ষণ অবধি সাংসদ থাকতে পারবেন রাহুল গান্ধী।
সেইসঙ্গে উঠে এসেছে আরও একটি প্রসঙ্গ। এরপর কী? এখন ভারতে ভোটের মরসুম। বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচন তো বটেই; সেইসঙ্গে রয়েছে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন। এখন থেকেই সমস্ত দল তার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ভারত জোড়ো যাত্রার পর রাহুল গান্ধীও আরও বেশি করে নজরে এসেছেন। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে কংগ্রেসের এই কর্মসূচির প্রসঙ্গ। সেইসঙ্গে গৌতম আদানি, হিন্ডেনবার্গ সহ অন্যান্য ইস্যু তো রয়েইছে। তারপরই রাহুল গান্ধীর এমন সাজা ঘোষণা, নির্বাচনী মরসুমেই। আপাতত এই অঙ্কের দিকেই তাকিয়ে আছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।